প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত রঙ দিয়ে বিশ্বমানের পোশাক তৈরী করেন যিনি

0

সুইস একটি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরী করতেন নাঈমা ইসলাম। ফ্যাশন ডিজাইনিং এর প্রতি প্রবল ঝোঁক নাঈমার। দেশবরেণ্য ফ্যাশন ডিজাইনার রুবী গজনবীর সাথে অরণ্যতে নিবিড়ভাবে কাজ করলেন। নিজের মনের এবং কৈশোরে ফ্যাশনের প্রতি, ডিজাইনের প্রতি যে প্রবল ঝোঁক সেটার একটা ইন্সটিটিউশনাল রুপ পেলো। ডিজাইন থেকে প্রডাকশন পর্যন্ত সম্যক জ্ঞান এবং হাতে কলমে কাজ করে প্রফেশনালি সম্পাদন করার পূর্ণজ্ঞান অর্জন করা হলো নাঈমা ইসলামের।

এবার নিজের উদ্যোক্তা ও ডিজাইনের ষোলকলায় নিজেকে সাজানোর পালা। ১৯৯৭। ধানমণ্ডি ২৫ এ অয়ন ক্রাফট।। এরপর মোহাম্মদপুরে শাহজাহান রোডে৷ কিন্তু আধুনিক ঢাকার প্রতিটি এলাকায় যে বাণিজ্যিক রূপ পরিবর্তন, অবকাঠামো বিনির্মান এ সব কিছু একটি উদ্যোগকে পূর্ণ বিকাশ লাভ করতে দেয়না। আর সেখানে অর্থ লগ্নি করতেও হয় অনেক ব্যবসা পরিচালনা করবার জন্য।

২০০৭ সাল। পরের জায়গায় নয়, নিজের সামর্থ্যের মধ্যে নিজের জায়গায় সাজাবেন নিজের উদ্যোগ। নিজ বাড়ির নিচে একটি ফ্লোরে প্রায় ৯০০ স্কয়ার ফিট জায়গা বের করলেন। নিজের অফিস ও ফ্যাক্টরি তৈরী করে নিলেন উদ্যোক্তা নাঈমা ইসলাম।

প্রায় ১৫ জন কর্মীকে নিয়ে সে সময় কাজ চলছে উদ্যোক্তার। প্রতি মাসে ১০০০ গজ পরিবেশবান্ধব কাপড় জাপানে বিক্রয় করেছে তার প্রতিষ্ঠান। দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেন নারী উদ্যোক্তা নাঈমা।

প্রথমে তাতেঁর শাড়ি, জামদানী, সুতি সব কিছুই উঠতে থাকলো উদ্যোক্তার ব্যবসায়। অয়ন ক্রাফটে পাঞ্জাবী, সালোয়ার-কামিজ, বেডকভার, কুশনকভার, পর্দা, কোটি, ফতুয়া, ওড়না, স্কার্ফ সব কিছু যোগ হলো। সিল্ক, কটন, জামদানী নানান মিডিয়ায় মিরপুর বেনারশী কাতান সব কিছু দিয়ে তৈরী হতে থাকলো নান্দনিক সব পোশাক।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব ডিসপ্লেতে ভীষণ প্রশংসা কুড়ালেন উদ্যোক্তা। নেপালের মেলায় রাজা নিজে এসে দেখলেন ন্যাচারাল ডাই জামদানী। উদ্যোক্তার ভূয়সী প্রশংসা মিললো৷ কর্মে বাড়তে থাকে উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণা।

বাটিক, টাইডাই, প্রিন্ট,কাসমী, খয়ের-প্রাকৃতিক সব রঙের খেলা ফুটে উঠতে থাকলো উদ্যোক্তার ডিজাইনে, উদ্যোক্তার কর্মে। সুতার রঙ, কাপড়ের রঙ সব কিছুই নিজের সিলেকশন। যুগোপযোগী ডিজাইনে তার মিশ্রণ সব কিছু দিয়ে ডিজাইনার এবং উদ্যোক্তা নাঈমা ইসলাম ফ্যাশনের ভুবনকে নিয়ে গেলেন এক অনন্য উচ্চতায়।

পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক কাচাঁমাল প্রস্তুত এবং ব্যবহার করে সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্ভাবনী ডিজাইন প্রতিদিন শত শত ক্রেতাকে করে আলোড়িত।

নাঈমা ইসলামের ভীষণ একটি ব্যবসায়িক প্রতিশ্রুতি আছে। এলার্জি কিংবা র‍্যাশ অথবা ত্বকের কোনো ক্ষতি হয় এমন কোনো কাপড় উদ্যোক্তার প্রডাকশনে দেননা এবং কোনো কাপড় দ্বারা পোশাক তৈরী করেন না। আজ উদ্যোক্তার এক্সক্লুসিভ শাড়ি, কুর্তি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, বেডকভার, পর্দা, ওড়না, স্কার্ফ, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ,সিঙ্গেল টপস, সবকিছুতে হাজার পণ্যে অনবদ্য এক উদ্যোক্তা ডিজাইনার নাঈমা ইসলাম।

১০০ এরও উপর মেলা করা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানান মেলায় যেমন অংশ নিচ্ছেন, তেমনি দেশজোড়া সুনাম তার একজন খ্যাতনামা ট্রেনার হিসেবে। হাজারের উপর ট্রেনিং সেশন নিয়েছেন। ১০ হাজারেরও বেশি তরুণ এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের ট্রেনিং দিয়ে করেছেন সমৃদ্ধ। ৫ বার অনন্যা সেরা ডিজাইনার পুরষ্কার, অন্যদিন ঈদ সেরা ডিজাইন এবং জাতীয় এসএমই মেলায় এসএমই ফাউন্ডেশনের সেরা সেলার।

অপু মাহফুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here