তরুণ উদ্যোক্তা- শাহীনুর রহমান

কিশোর বয়সে বিদেশে পাড়ি দিয়ে ১৪ বছর পর দেশে ফিরে মাত্র ১২ লক্ষ টাকা ও ১০ জন কর্মী নিয়ে নিজের দেশকে নতুন করে চেনার এবং দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নটা পূরণ করেছেন শাহীনুর রহমান।

২০০১ সালে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে পরিবারের ইচ্ছায় একটি কোম্পানির ভিসা নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিতে হয় শাহীনুরকে। কুয়েতে প্রায় ২ বছর একটি কোম্পানিতে চাকরি করার পর ২০০৩ সালে এসে কুয়েতে একটি ব্যবসার লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে সুপার শপ ‘রাজশাহী স্টোর’ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু হয় তার। ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশ থেকে কুয়েতের ভিসা বন্ধ হওয়ায় কুয়েতে বাঙালী লোকজন কমে যায়। যেহেতু তার ব্যবসা বাঙালী কেন্দ্রিক ছিলো সেহেতু ভিসা বন্ধ হওয়ায় বাঙালী গ্রাহক সংখ্যা কমে যায়। ব্যবসায় দেখা দেয় মন্দা।

কর্মীর কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন উদ্যোক্তা- শাহীনুর রহমান

তারপর খুব কাছের একজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শাহীনুর রহমান। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে নিজ দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের শেখরে পৌঁছাতে এবং দেশের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টায় লেগে পড়লেন। আধুনিকতাকে সামনে রেখে কিছুটা ভিন্নতায় পরিবেশবান্ধব নন ওভেন ব্যাগ তৈরি করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন।

উদ্যোক্তার ব্যাগ তৈরির ফ্যাক্টরি

২০১৬ সালে রাজশাহী বিসিক শিল্প নগরীতে মাত্র ১২ লক্ষ টাকা ও ১০ জন কর্মী নিয়ে এস.আর. নন ওভেন ব্যাগ এ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করলেন উদ্যোক্তা শাহীনুর রহমান। কিশোর বয়সে যখন বাইরের জগতকে কেবলই চিনতে শিখেছেন সেই সময়টাতেই বিদেশে চলে যান। ১৪ বছর পর দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করাটাকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন উদ্যোক্তা শাহীনুর।

উদ্যোক্তা শাহীনুর রহমান কর্মীদের কাজ দেখছেন

প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই ৫০০ টি ব্যাগের অর্ডার চলে আসে। অনেক আগ্রহের সহিত কাজ শুরু করলেন, কিন্তু কর্মীদের অনভিজ্ঞতার কারনে ব্যাগগুলো ভাল করে তৈরি করতে পারেন নি। কিছুটা চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

সেসময় একজন নারী কাজের জন্য তার প্রতিষ্ঠানে আসেন। তিনি এই কাজে অভিঙ্গ ছিলেন। তিনিই সবাইকে কাজ শেখালেন, উদ্যোক্তা সাহস পেলেন। তৈরী হয়ে গেলো ৫০০টি ব্যাগ, এবার পণ্য ডেলিভারির পালা।

সততা, নিষ্ঠা এবং পণ্যের মানের কারণে তার প্রতিষ্ঠানটির নাম খুব দ্রুতই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর ব্যাগটিও পরিবেশ বান্ধব, যা সকল কাজে ব্যবহার যোগ্য।

তৈরিকৃত পণ্যের গুণগত মান পর্যবেক্ষণ করছেন উদ্যোক্তা

চাহিদার সাথে সাথে মেশিনারী এবং কর্মী সংখ্যা বাড়তে থাকে। ধীরেধীরে রাজশাহী থেকে বের হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এস.আর. নন ওভেন ব্যাগ এ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিটি। ২০১৮ সাল থেকে অটো মেশিন বসিয়ে ব্যাগ তৈরি করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা।

তিনি উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, “প্রথম বছরে ঈদের সময়ে কাজের এতটাই চাপ ছিল যে, সকল কর্মীরা চলে যাওয়ার পরেও আমি প্রায় রাত ২টা থেকে ৩টা পযর্ন্ত কাজ করতাম। মাঝে মাঝে প্রতিষ্ঠানটিতে রাত কাটিয়ে দিতাম। আমি চেয়েছিলাম বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।”

বেশিরভাগ মানুষ বিদেশ থেকে ফিরে এসে ঝরে পড়েন। কিন্তু শাহীনুর রহমান উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। চেয়েছিলেন দেশকে এবং নিজকে উন্নয়নের শীর্ষে নিয়ে যাবেন।
আজ ২০১৮ সাল, ৪৫ জন কর্মী নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অর্ডার নিয়ে সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করে সফলভাবে তার প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে যাচ্ছেন সফল উদ্যোক্তা শাহীনুর রহমান।

রাজশাহী থেকে রাইদুল ইসলাম শুভ
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here