দিনাজপুরের মেয়ে সিফাত ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন রকমের সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এমবিএ পাশ করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এক সময় পড়াশোনা চলাকালীন সময়েও প্রাইভেট টিউশনের পাশাপাশি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। অন্যদিকে তার স্বামী সোহাগ বিবিএ শেষ করে RMG সেক্টরে মার্কেটিং ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় তিনিও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করেন। বতর্মানে তারা তরুণ উদ্যোক্তা দম্পতি কাজ করছেন নিজেদের উদ্যোগ নিয়ে।
ছোটবেলা থেকেই সিফাতের নতুন কিছু শেখার ও নতুন কিছু তৈরি করার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিল। সেই জানার বা শেখার আগ্ৰহ থেকেই সিফাত অর্গানিক হেয়ার কেয়ার এবং স্কিন কেয়ার পণ্য বানানো শেখেন। তার এই মেধার কথা জানতে পেরে তার এক প্রবাসী বান্ধবী, তার ভাবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ভাবী তার Skin এর সমস্যার কথা সিফাতকে জানান, সব শুনে সিফাত তার জন্য একটি কাস্টমাইজড পণ্য তৈরী করেন, আর তাতে তার খরচ হয়েছিলো ১৮০ টাকা। আর পণ্যটি তিনি বিক্রি করেছিলেন ২৪০ টাকায়। সেই পণ্য ব্যবহার করে ভাবী উপকার পান। তার দরুণ তিনি তার আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বেশ কিছু order সংগ্রহ করে সিফাতকে দেন। উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু হয় সিফাতের।
সিফাতের স্বামী সোহাগ তার এই উদ্যোগে, তাকে ভীষন ভাবে সাপোর্ট করা শুরু করেন। এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে যখন প্রবাসী ক্রেতাদের চাহিদা বাড়তে থাকে এবং ক্রেতারাই তাদেরকে একটি ফেসবুক পেজ খুলতে বলেন-সোহাগ এবং সিফাত আলোচনা করে “Serene” ব্র্যান্ড নাম নির্বাচন করেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে “Serene Bangladesh “এর যাত্রা শুরু হয়।
শুরুতে সোহাগ এবং সিফাত লক্ষ্য করেন সময়ের সাথে সাথে পরিবেশ দূষণ, কর্মব্যস্ততা, আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে তার সহকর্মীদের কারো কারো চুল পড়ে যাচ্ছে, স্কিনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কারো কারো অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় চেহারা মলিন ও ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। চুল ও ত্বকের যত্ন নেয়ার কিংবা শরীর চর্চা করার জন্য যথেষ্ট সময় তারা পাচ্ছে না। তাই প্রাথমিক ভাবে সেই সব কাস্টমার বা ক্রেতাদের কথা ভেবে তারা ১০ টি পণ্য নির্বাচন করেন যা সব ধরনের সমস্যার সমাধান এনে দিবে।
তাদের তৈরি দশটি পণ্যের মধ্যে আছে তিনটি হেয়ার অয়েল, একটি হেয়ার প্রোটিন প্যাক, দুটি ফেস প্যাক, একটি বডি স্মুদিং প্যাক, দুটি ক্রীম ও একটি স্পা সোপ। উদ্যোক্তা সিফাত বলেন “আমাদের সকল পণ্য ঘরে বানানো। সব পণ্য নিজেদের হাতে যথাযথ হাইজিন মেইনটেইন করে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে সংরক্ষণ, উৎপাদন ও মোড়কজাত করে থাকি।‘ পণ্যের মান ও বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে এসব কাজ তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় নিজেরাই করে থাকেন। তাদের কোন বহিরাগত কর্মী নেই বলে জানান উদ্যোক্তা সিফাত ও সোহাগ।
এই উদ্যোক্তা দম্পতি আরো জানান তাদের প্রোডাকশন গুলো সাপ্তাহিক ভাবে তৈরী করা হয়। দশটি পণ্যের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে তারা নিয়মিত তিন রকমের তেল, আর প্যাকগুলো তৈরি করে থাকেন।সাবানগুলো বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরী এবং কেমিক্যাল ফ্রি তাই ব্যবহারের উপযোগী হতে সময় লাগে। এজন্য সাবানগুলো প্রতি সপ্তাহে প্রোডাকশন হয়। মাসে প্রায় ৭০/৮০ হাজার টাকার পণ্য উৎপাদন করা হয় এবং সেল হয় প্রায় ১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
সিফাত জানান ‘প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা আমাদের উদ্যোগ শুধু অফলাইনে প্রবাসীদের কাছেই পাঠাতাম। এখন অনলাইনেও চলছে এবং সারা বাংলাদেশে আমাদের পণ্য আমরা হোম ডেলিভারি দিচ্ছি। অর্ডার নেয়ার জন্য আমরা ঢাকার ভেতরে ৫০% এবং ঢাকার বাহিরে ১০০% অগ্রিম পেমেন্ট নিয়ে থাকি। আমাদের নিয়মিত ক্রেতাগণ এবং তাদের প্রতিবেশী এলাকার ক্রেতাদের জন্য আমরা ক্যাশ অন ডেলিভারির ব্যবস্থাও আমরা রেখেছি।‘তাদের তৈরি পণ্য Finland, Canada, UK, Australia তেও যাচ্ছে বলে জানান সোহাগ।
তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য করে এই উদ্যোক্তা দম্পতি বলেন-“আমরা বলবো তরুণরা যদি নিজের জন্য, দেশের জন্য, নিজের মতো করে কিছু করতে চায় তাহলে তারা যেন উদ্যোক্তা হবার পথে আসে। আমাদের বাংলাদেশে অনেক সুযোগ রয়েছে। পড়াশোনা শেষ করার পর একটা ভালো চাকরি পাওয়াকেই আমরা সাকসেস মনে করি কিন্তু নিজের উদ্যোগে কিছু করার মধ্যেও সাফল্য আছে, যদি একনিষ্ঠভাবে কাজ করা হয় এবং ধৈর্য্য ধরে উদ্যোগটাকে সময় দেয়া যায় তবে সফলতা আসবেই বলে মনে করেন সিফাত ও সোহাগ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তারা বলেন ‘ইতিমধ্যে বেশ কিছু কাস্টমার আমাদের কাছে আরো বেশ কিছু কাস্টমাইজড পণ্যের চাহিদা প্রকাশ করেছে। ইনশাআল্লাহ তাদের চাহিদা অনুযায়ী আরো বেশ কিছু পণ্য আমরা তৈরি করবো। এবং যেহেতু আমাদের ট্যাগলাইন হচ্ছে সেবা দেওয়া সেহেতু আমরা ভবিষ্যৎতে আরো ভিন্ন কিছু সার্ভিসও চালু করবো, তার মধ্যে থাকবে স্পা, ম্যাসাজ, ইয়োগা, শরীরচর্চা,সাতারসহ অন্যান্য সেবা।
আফসানা অভি,
উদ্যোক্তা বার্তা