নারীকে উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করুন

0

আমাদের দেশে আমাদের সমাজে একটা সময় নারীরা ছিলো কেবল অন্তঃপুরের বাসিন্দা। স্বামীর উপার্জনে খেয়ে পরে তাদের জীবন কেটে যেতো। তারপর সময় বদলাতে শুরু করে। নারীরা ঘরের চৌকাঠ ডিঙিয়ে পা রাখে বাইরের আলো বাতাসে।

নারীরা শিক্ষিত হতে শুরু করে। প্রথমদিকে মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে ডিগ্রী নিয়ে ঘরেই বসে থাকতো, তাদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়া হতোনা স্বাবলম্বিতা অর্জন করার জন্য। তারপর সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে মেয়েরা শিক্ষিত হওয়ার পর চাকুরী করতেও শুরু করে, সমাজের তৈরি একেকটা বাধা ভাঙতে শুরু করে। আর এখন মেয়েরা ছেলেদের পাশাপাশি নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন, তারা এখন বোঝে- পায়ের নিচে এক টুকরো মাটির স্তর রাখতে তাদের নিজ নিজ পরিচয় তৈরি করতে হবে।

আর এই জনবহুল দেশে চাকরীর দুষ্প্রাপ্যতার অকালে তাই অনেক মেয়েরা চাকুরী প্রত্যাশী না হয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে ঝুঁকছে। বরাবরই চাকুরীর চেয়ে উদ্যোক্তা হওয়া অনেক বেশি শ্রেয়, যদিও উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও কাজের সন্নিবেশ, সবার সে সুযোগ হয়ে ওঠেনা। তবুও মেয়েরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিজের পায়ে দাঁড়াতে, একজন সফল উদ্যোক্তা হতে।

আমরা স্বীকার করি কিংবা নাই করি, এটা সত্যি যে আমাদের দেশে আমাদের সমাজব্যবস্থায় একটা ছেলের চেয়ে একটা মেয়ের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পথটা অনেক বেশি কঠিন, মেয়েদের অনেক বাঁধা ভাঙতে হয়, অনেক সংগ্রাম করতে হয়। তাই যখন কোনো মেয়ে শক্তি ও সাহস সঞ্চয় করে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রত্যয়ী হয়, তখন আমাদের উচিত তাকে উৎসাহ প্রদান করা। কিন্তু আমরা তা না করে তাকে আরো হতাশ করে দেই, আমরা হাজারটা নেগেটিভ কথা বলে তার মনোবল নষ্ট করে দেই। কিন্তু এটা একদম অনুচিত। কাওকে অনুপ্রাণিত না করতে পারলেও অন্তত তার সঞ্চিত উদ্যামটুকুকে যেনো আমরা নষ্ট করে না দেই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ধরুন আপনার পরিচিত একজন সৃজনশীল শিল্পের বিজনেস শুরু করলো। সে নিজ হাতে ড্রেস, অর্নামেন্টস বানিয়ে সেগুলো বিক্রির মাধ্যমে নিজের একটা ক্যারিয়ার গড়তে চাইলো। তখন আমাদের উচিত, তাকে তার সৃজনশীলতায় বাহবা দেয়া, তার কাজ আর তার পরিশ্রমের মূল্যায়ন করা; তার অনেক কষ্টে তৈরিকৃত একেকটা পণ্য ক্রয় করে তার উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়ে তার পাশে থাকা। কিন্তু তখন আমরা কি করি? আমাদের বেশিরভাগ মানুষের স্বভাব অন্যের কাছে চেয়ে বেড়ানো, কাওকে দেয়ার কথা না ভাবলেও, চাইতে আমাদের কোনো ক্লান্তি নেই। আর সাথে সমালোচনা যেন উপরি পাওনা।

আমরা ভাবি, সে নিজে বানাচ্ছে, সে আমাদের পরিচিত, সেহেতু সে তার পণ্য দু’একটা আমাদের উপহার দিতেই পারে। আমরা সেগুলোকে ফ্রী পণ্য ভাবতে শুরু করি; পণ্যগুলো বানাতে যে উপাদান লাগে তা যে বাজার থেকে ক্রয় করতে হয় মেয়েটিকে এবং মেয়েটা যে দিনরাত পরিশ্রম করে একেকটা পণ্য তৈরি করে, সেটা আমরা একবারো ভাবিনা। শুধু চাই চাই চাই! মেয়েটাও হয়তো লজ্জায় মানা করতে পারেনা। এভাবে একেকজনের আবদার পূরণ করতে করতে মেয়েটার কর্মস্পৃহা নষ্ট হয়ে যায়। মেয়েটা না দিলেই আমরা তাকে কতকিছু ভেবে বসি, স্বার্থপর, সংকীর্ন! একটা জিনিস চাইলাম তবু দিলোনা! কিন্তু একবারো ভাবিনা, আমাদের মতো আরো শত মানুষ তার কাছে এমন শত শত আবদার করে। মেয়েটার পক্ষে কি সম্ভব সবার চাহিদা মেটানো? নিজের পকেটের টাকা খরচ করে, দিনরাত পরিশ্রম করে আদৌ সম্ভব এভাবে সবার আবদার পূরণ করা? মেয়েটা অনেক স্বপ্ন নিয়ে তার ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু পরে মেয়েটি দেখে, তার তৈরিকৃত পণ্যের ক্রেতা আকর্ষণ এবং চাহিদা সবই আছে কিন্তু ক্রয় করার মানুষের খুব অভাব। আর তখন সে হতাশ হয়ে ব্যবসাটিই বন্ধ করে দেয়। তার পরিশ্রম বৃথা যায়, স্বপ্নটা ভেঙে যায়। আর এর জন্য কারা দায়ী জানেন? আমাদের মতো চাই চাই করা মানুষগুলো। আমরা মানুষের স্বপ্ন আর উদ্যোমকে সমূলে উৎপাটন করে দিতে দক্ষ!

আমাদের সমাজে উদ্যোম নষ্ট করে দেয়ার মতো মানুষের অভাব নেই। এমন মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। বিবি রাসেল বলেছেন- “আমি বধির, আমার কান দিয়ে কোনো নেগেটিভ কথা প্রবেশ করেনা।” হ্যাঁ প্রয়োজনে আমাদেরও বধির হতে হবে। মানুষের নেতিবাচক কথাগুলো কানে তুলে আমাদের স্বপ্নগুলো যেন নষ্ট না করে দিই, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর হ্যাঁ, একজন নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইলে দয়া করে তাকে উৎসাহিত করুন, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি সবার থাকেনা, আমরা যেনো কারো স্বপ্ন ভাঙনের কারন না হই। নিজের মতো করে বাঁচুক পৃথিবীর প্রতিটা নারী, হয়ে উঠুক উদ্যোক্তা।

মোহনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here