মীনার শখের ব্যবসার বাৎসরিক আয় ৬০০ কোটি টাকা

0

আপনি যখন নিজের শখকে আবেগে পরিণত করেন তখন কী ঘটে? আপনি যখন প্রতিটি প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করেন এবং একটি সম্ভাবনাময় দিক তৈরি করেন তখন কী হয়? শুরু থেকেই মূলধনের ঘাটতি নিয়ে এত বড় বাজারে প্রতিযোগিতা করে সামনে এগিয়ে যাওয়া কিভাবে সম্ভব? এই বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে জানতে আসুন মীনা বিন্দ্র’র জীবনের গল্পটি পড়ি।

মীনা বিন্দ্র এমন একজন ব্যক্তি যিনি ডিজাইনার থেকে আস্তে আস্তে একজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন এবং বিবা অ্যাপারেলস প্রাইভেট লিমিটেডকে ভারতের গৌরবে পরিণত করেন। “বিবা” অর্থ সুন্দর ও স্নেহময়ী মহিলা। এটি মহিলাদের জন্য আকর্ষণীয় পোশাক সরবরাহ করে।

মীনার একটি সঠিক সিদ্ধান্ত তার জীবনটিকে বদলে দিয়েছে। তিনি স্ক্র্যাচ এর কাজ শিখেছিলেন এবং সেগুলি বাস্তবায়নও করেছিলেন। যেটিকে পরে তিনি একটি সফল ব্র্যান্ডে পরিণত করতে পেরেছিলেন।

মিনা যখন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখন তার বয়স ছিল ৩৯ বছর। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পর তার প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮০০০ টাকা। কেবলমাত্র তার প্রচেষ্টার জন্যই ভারতীয় খণ্ডিত পোশাক বাজারটি একত্রিত হয়েছিল এবং তাতেই ভারতের পোশাক-বিপ্লব ঘটেছিলো।

প্রাথমিক পর্যায়ে মীনা বিভিন্ন কাপড়ের সাথে তাদের তৈরি করা নকশাগুলোর পরীক্ষা করতেন এবং সেগুলো পরিবর্তন করে নতুন কিছু তৈরি করার চেষ্টা করতেন।

সেই সময় রেডিমেড পোশাকের তেমন জনপ্রিয়তা ছিল না। ফলে তার নকশা করা পোশাকগুলো তেমন গ্রাহক খুঁজে পায় নি। তিনি বলেছিলেন, তিনি কখনও আশা করেননি যে মানুষেরা তার তৈরী পোশাকগুলো ব্যবহার করবেন।

তিনি প্রথম দিকে বাণিজ্যিক উদ্যোগের বিষয়টি দেখেন নি। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি মাত্র আট হাজার টাকা নিয়ে পাইকারি বাজারে যাওয়ার জন্য প্রথমে একটি ট্যাক্সি ভাড়া করেছিলাম এরপর ফ্যাব্রিকের উৎস ও একটি দর্জি খুঁজে বের করি আর একজন ব্লক প্রিন্টার ম্যান। তৈরি করে ফেলি পোশাক এবং আমার তৈরি করা পোশাকগুলো আমি ছোট, মাঝারি এবং বড় এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করে বিক্রি শুরু করি।

আমি প্রায় ৪০ টা পোশাক তৈরি করেছিলাম এবং সেগুলি প্রতিটি ১৭০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। এতে প্রায় তিন হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। তখন এই মুনাফাই আমার কাছে প্রচুর অর্থ মনে হয়েছিল।

”১৯৮০ এর শেষের দিকে মীনা বিন্দ্র প্রথম পাঞ্জাবি স্যুট নকশা করেছিলেন, তখন তিনি জানতেন না যে এটি কতটা দুর্দান্ত হয়েছিলো। তিনি কখনও কল্পনা করতে পারেননি যে একদিন তার করা নকশাগুলো লাখ লাখ ভারতীয়দের পোশাকের চাহিদা পূরণ করবে।”

তিনি বলেন আমি শখের বসে হাত খরচের আশায় নকশার কাজ শুরু করি। আমি কখনও ব্যবসায়ী হওয়ার কথা চিন্তা করিনি। আমার শুধু কাজের প্রতি ছিল আগ্রহ আর ভালোবাসা। তাই আমি কাজ করে গিয়েছি এবং সফলতা অর্জন করেছি। যদি আপনাদের কোন কাজের প্রতি আগ্রহ বোধ করেন তবে শুধু সেটা করে যান, সফলতা অবশ্যই দেখা দেবে।

জীবন মীনাকে অনেক সুযোগ এনে দিয়েছিলো এবং তিনি সেই সুযোগগুলোর সৎ ব্যবহার করেছিলেন। এমনই একটি সুযোগ তার দরজায় প্রথম কড়া নাড়লো যখন “না তুম জানো না হাম” সিনেমার অংশীদারিত্বের জন্য সিনেমার পোশাক ডিজাইনার মীনার কাছে এসেছিল। তারপরেই ভগবান ও দেবদাসের মতো বলিউড ব্লকবাস্টার সিনেমার পোশাক তৈরির কাজ তার হাতে এসেছিল। মীনার বিবা অ্যাপারেলস সেলিব্রিটিদের জন্য সুন্দর সুন্দর পোশাক সরবরাহ করেছিলেন।

বর্তমানের মীনার ৭৬ টি শহরে ১৯২ টি আউটলেট এবং ২৫০ টিরও বেশি শোরুম রয়েছে। দ্য হিন্দুর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, তাদের আনুমানিক বাৎসরিক আয় ৬০০ কোটি টাকারও বেশি।

মীনা বলেন, আপনার স্বপ্নকে শক্তিশালী করুন; কেউ আপনার জীবনের দুর্দান্ত কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। স্বপ্নকে বড় করে দেখে কাজ করে যান।

হৃদয় সম্রাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here