সাজ্জাদ এইচ আলভী। ঢাকাতেই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। ধানমন্ডির মাস্টার মাইন্ড স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ‘এ’ লেভেল শেষ হওয়ার পর হিউমান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এ ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং বর্তমানে নর্থ সাউথে অধ্যয়নরত আছেন।

যেহেতু ছোটবেলা থেকেই বাবাকে ব্যবসা করতে দেখেছেন। তাই ব্যবসার প্রতি তার একটা প্রবল ঝোঁক ছিল। বলা যায় সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা এসেছে। কিন্তু বাবা-মা চাইতেন ছেলে সবসময় বড় চাকরি করবেন কারণ সে সুযোগ তার ছিল।

২০১৫ সালে স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার পর কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানিতে প্রায় ৩ বছরের মত চাকরি করেন। চাকরিরত অবস্থায় সাজ্জাদ ভাবলেন চাকরি তিনি করবেন না, তিনি হবেন একজন উদ্যোক্তা।

২০১৬ সালের শেষে তিনি সিদ্ধান্ত নেন অনলাইনে ব্যবসা করবেন। চাকরির জমানো টাকা এবং বাবার অর্থায়নে ব্যবসা শুরু করলেন। একটি ফেসবুক পেইজ খুললেন। নাম দিলেন সুয়েনো (এটি স্প্যানিস শব্দ, যার অর্থ স্বপ্ন)। সেখানে ছেলেদের পোশাক বিক্রি শুরু করেন। যার ডিজাইন তিনি নিজেই করতেন এবং লালবাগের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে সেগুলো তৈরি করে নিতেন।

কিন্তু চামড়া এবং চামড়া দিয়ে তৈরি পণ্যের প্রতি বিশেষ এক ভালোবাসা কাজ করতো উদ্যোক্তা সাজ্জাদ এইচ আলভীর। চামড়া শিল্পের সাথে কাজ করে এমন ক’জন ব্যক্তির সাথে বেশ ভালো পরিচয় ছিল। সেই ব্যক্তিদের  কাছে থেকে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য সম্পর্কে  ধারণা নিতে শুরু করেন।

২০১৭ সালে দু’টি জুতা তৈরির কোম্পানিতে চামড়া সরবরাহ করতে শুরু করেন। কিছু দিনের মধ্যে তিনি নিজেই চামড়া দিয়ে পণ্য তৈরি এবং তা ফেইসবুক পেইজ এর মাধ্যমে বিক্রি করতে শুরু করেন।

পণ্যগুলোর মধ্যে প্রথমে তৈরি করতেন বেল্ট, ওয়ালেট, কার্ড হোল্ডার সহ বিভিন্ন পার্স। মূলত তিনি নিজেই ডিজাইন করতেন এবং পণ্যের ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনায়নের জন্য ইন্টারনেটের সাহায্য নিতেন। সেগুলো ঢাকার বিভিন্ন ছোট ছোট চামড়ার পণ্য তৈরির কারখানা থেকে তৈরি করে নিতেন।

২০১৭ সালের শেষের দিকে উদ্যোক্তা ভালো সাড়া পেতে শুরু করেন এবং উদ্যোক্তা অনুধাবন করেন ব্যবসায় তার আরও অনেক মনোযোগ এবং সময় দেয়া দরকার। উদ্যোক্তা চাকরি ছাড়লেন এবং ব্যবসায় পুরো সময় দিতে শুরু করলেন।

২০১৮ সালে ছোট একটা কারখানা দিলেন যেখানে স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক ১২ জন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মী নিয়োগ দেয়া হলো। প্রতিটা পণ্যই বিশেষভাবে যত্ন সহকারে হাতে তৈরি করা হত। তখন চামড়াগুলো স্থানীয় ট্যানারি এবং চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হত।

২০১৯ সালে প্রথম শো-রুম উদ্বোধন করলেন ধানমন্ডির জেনেটিক প্লাজায়। এখান থেকে ক্রেতাদের পছন্দমত পণ্য সরবরাহ ছাড়াও ইউরোপের বাজারে পণ্য সরবরাহ করা হয়। মূলত তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ক্রেতা এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ফ্যাশন সচেতনা বাড়ানো।

উদ্যোক্তা সাজ্জাদ এইচ আলভী উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, শুরু আমার নয় বরং সকল দেশীয় উদ্যোক্তাদের পণ্যগুলো সারাবিশ্বে রপ্তানি করার বিষয়টি সহজলভ্য করা দরকার। তাতে দেশের অর্থনীতিতে একটা বড় মাত্রা যোগ হবে।

তিনি বলেন, এসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা দরকার। যেমন ‘ঐক্য’ দেশীয় উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ‘উদ্যোক্তা বার্তা’ অনলাইন পোর্টালটি সকল উদ্যোক্তাদের খবরাখবর প্রচার করে যাচ্ছে।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য নিয়ে এখনো অনেক কাজ করার বাকি আছে। চাইলেই এই শিল্পকে তরুণরা এগিয়ে নিতে পারেন। অনেক বাধা, ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতা থাকবেই কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে ব্যর্থতা থেকেই সফলতা পাওয়া যায়। আমি অনেকবার ব্যর্থ হয়েছি কিন্তু সেই ব্যর্থতা থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি।”

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here