মাইক্রোম্যাক্স বর্তমান পৃথিবীতে জনপ্রিয় একটি মোবাইল কোম্পানির নাম। ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত স্মার্টফোন।
বর্তমানের এত আধুনিক বিদেশি স্মার্টফোন সাথে টেক্কা দিয়ে চলার অসাধ্য সাধন করেছেন মাইক্রোম্যাক্সের প্রতিষ্ঠাতা রাহুল শর্মা।
আসুন জেনে নেই তার অসাধ্য সাধনের গল্পটা।
ছোটবেলা থেকেই মেধাবী আর বুদ্ধিমান ছিলেন রাহুল। সব সময় বাস করতেন এক কল্পনার জগতে। ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছ থেকে শিখেছিলেন একজন মানুষকে ভয় নয় ভালোবাসা দিয়ে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি কাজ করানো সম্ভব। জীবনে সৎ এবং ভালো হয়ে বাঁচার নামই জীবন।
পরে তিনি রাজস্থান টুকাডোজি মহারাজ নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিষয়ে স্নাতক করেন।
রাহুলের আজ এই সাফল্যের পিছনে তার বাবার তেমন কোন সহযোগিতা ছিলো না। তার বাবা পেশায় ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক, বাসে চড়ে যাতায়াত করতেন। এত বড় একজন সফল ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তিনি তার সফলতার পুরো কৃতিত্বটাই দিয়েছেন তার বাবাকে।
তিনি বলেন, আমি কৃতজ্ঞ যে আমার এমন একজন বাবা আছেন। যিনি আমাকে সব সময় সৎ এবং আদর্শবান হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন।
শুরুটা ছিলো ৯০ দশকের শেষের দিকে, যখন রাহুলের বাবা তাকে প্রথম কম্পিউটারটি কিনে দিয়েছিলেন। তখন এই টেকনোলজি বিষয়টা তাকে এতোটাই অনুপ্রাণিত করেছিলো যে সে তার তিন বন্ধুকে নিয়ে তৈরি করে ফেলেছিলো মাইক্রোম্যাক্স সফটওয়্যার ।
প্রথম সাত বছর ধরে চলা এই প্রতিষ্ঠানটি তারা ব্যবহার করতো একটি আইটি ফার্ম হিসেবে। এখানে তারা ব্যবহারকারীদের নানাভাবে আইটির সাথে সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে সাহায্য করতেন। ফলে কিছুদিনের মধ্য বেশ সফলতা অর্জন করেন। আর এই অর্জনটা চোখে পড়ে নোকিয়া কোম্পানির। তখন তারা এই ফার্মের পাশাপাশি চালু করেন নোকিয়া এবং এয়ারটেল সিমের মার্কেটিং। আসলে স্বপ্ন তাকেই স্বপ্ন দেখায় যে স্বপ্ন দেখতে জানে। তাই হয়তোবা এত ছোট একটা আইডিয়া দিয়ে তিনি আজ বিশ্ব জয় করতে পেরেছেন।
২০০৭ সালের প্রথমদিকের কথা, তখন তিনি বাস করতেন ওয়েস্ট বেঙ্গলের বাহারামপুর গ্রামে। এই গ্রামকে বলা হতো আধুনিক যুগের ভাষায় অজপাড়া, গ্রামে ছিলো না কোন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ছিলোনো কোন টেকনোলজির ব্যবস্থা। অবশ্য যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগই নেই সেখানের মানুষ কিভাবেই বা এই প্রযুক্তির সুবিধাগুলো পাবে? তবে এই অসাধ্য সাধন করেছেন রাহুল। জীবন বদলে যাওয়ার গল্পটা এখান থেকেই শুরু, তিনি একদিন খেয়াল করেন যে এয়ারটেল এর পিসিও চার্জ করা হতো ট্রাক্টরের ব্যাটারি দিয়ে । পিসিও মালিক প্রতিদিন রাতে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চার্জ দিয়ে আসতেন এবং সকালে গিয়ে আবার সেটা নিয়েও আসতেন। এই বিষয়টা তার নজর কাড়ে ।
তাই ২০০৮ সালে সব বিষয় চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, মোবাইল কোম্পানি তৈরি করবেন। ব্যাস আইটি ফার্মের নাম পরিবর্তন করে দিয়ে দিলেন মাইক্রোম্যাক্স কোম্পানি। এছাড়াও আরেকটি বিষয় ছিলো যে এই সিদ্ধান্তের পেছনে, সাধারণত নোকিয়া ফোন তৈরি হতো চায়নায় এবং সেখান থেকে ভারতে আনা হতো।
ফলে ভারতের ব্যবহাকারীর প্রয়োজন মতো সার্ভিস তারা দিতে পারতো না। তখন তিনি প্রথম ফোন বের করলেন যেটার নাম ছিলো’ দ্য এক্সট্রিম’। এই ফোনে তিনি ব্যবহার করেছিলেন সেই ফিচারগুলো যা ভারতের ব্যবহারকারীর খুবই প্রয়োজন ছিল। তাই এই প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে তিনি প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার তৈরি করেছিলেন। যা মাত্র ১০ দিনের মধ্য বিক্রিও হয়ে যায়। কারণটা ছিলো অবশ্য ফোনের চার্জের ব্যাপারটা নিয়ে। কারণ এই ফোনে একবার চার্জে প্রায় ৩০ দিন চালানো যেত। তাই অল্প সময়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে এই মোবাইল ফোনটি।
এরপর আর কখনো মাইক্রোম্যাক্সকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তারা অন্যান্য ব্র্যান্ডকে পিছনে ফেলে মোকাবেলায় অংশ নিয়েছে শাওমির সাথে। তবে দিন দিন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে মাইক্রোম্যাক্সের যার ফলাফল সরূপ পৃথিবীর নামি-দামি ১০ টি স্মাটফোনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে এই মাইক্রোম্যাক্স।
মো. হৃদয় সম্রাট