হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা জান কউমের গল্প

0

২০১৪ সালে ফোর্বসের তালিকায় ৬২ তম ধনী ব্যক্তি যার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৭.৫ বিলিয়ন ডলারে বেশি। আমেরিকায় টেলিযোগাযোগ শিল্পে প্রায় ৩৮৬ বিলিয়ন ডলারের পিছনের ক্ষতির একমাত্র কারণ হচ্ছেন হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা জান কউম।২০০৯ সালে ইয়াহুর সাবেক কর্মী ব্রায়ান অ্যাক্টন ও জান কউম মিলে হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করেন।

১৯৭৬ সালে জন কউম ইউক্রেনের একটি দরিদ্রপীড়িত গ্রাম কিয়েভে জন্মগ্রহণ করেন। ইহুদি হয়ে জন্ম নেওয়ায় তাদের গ্রামে বসবাস করা সহজ ছিলো না,মাঝে মধ্যই তাদের উপর নানানভাবে হামলা হতো। এছাড়াও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছলতা তো ছিলোই।

পরে তারা ক্যালিফোর্নিয়া মাউন্টেন ভিউয়তে চলে আসেন, সেখানে এসে তিনি একটি মুদি দোকানের ক্লিনার হিসেবে কাজ শুরু করেন আর তা মা মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন।

কাজের পর তিনি যেই সময় পেতেন তখন তিনি বইয়ের মাধ্যমে প্রোগ্রামিং শিখতেন। মাত্র দুই বছরের মধ্য তিনি কম্পিউটারের নেটওয়ার্কিংয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

এরপর জান সান জোস স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন এবং সেখানে প্রোগ্রামিং শিখতে থাকেন আর বাকি সময় তিনি আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংতে নিরাপত্তা বিশেষক হিসেবে কাজ করতেন।

সেখানে প্রায় ছয় মাস কাজ করার পর তিনি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ইয়াহুতে কাজ করার জন্য সুযোগ পান। সেখানে তিনি ইয়াহুর নানা ধরনের সমস্যর সমাধান দিয়েছেন। সেখান থেকে তিনি শিখতে পেরেছেন কিভাবে ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিয়ে কাজ করতে হয়। সেখান তিনি অনেক সহকারি পেয়েছিলেন যারা পরে ইয়াহু ছেড়ে হোয়াটসঅ্যাপে যোগদান করে।

জানের বাবা ১৯৯৭ সালে মারা যান, ক্যান্সারের সাথে লড়াই করতে করতে ২০০০ সালে তার মা মারা যায়। এই ঘটনাগুলো তার মনে আরও শক্তি জুগিয়েছে, কারণ পৃথিবীতে কেউই চিরদিন থাকবে না,কিন্তু তাকে এমন কিছু করে যেতে হবে যাতে মানুষের জীবন আরও সহজ হয়।

শুরুটা ছিলো ২০০৯ সালে যখন জান কউমের অ্যাপলের একটি ফোন কিনলো। তখন তিনি খেয়াল অ্যাপল তাদের নতুন নতুন অ্যাপস বানানোর চেষ্ঠা করছে। তখন তিনি তার মাথায় একাট বুদ্ধি এসে গেল সেটা ছিলো কিভাবে বিজ্ঞাপন এবং ব্যবহারকারীর তথ্য সংরক্ষণ ছাড়াই যোগাযোগ করা যাবে মুঠোফোনে।

এই আইডিয়াকে কাজে লাগিয়ে ২০০৯ সালে তৈরী করেন হোয়াটসঅ্যাপ । প্রথমে তারা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলেন যেমন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে না, যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে এবং ছিলো কিছু যান্তিক ত্রুটিতো ছিলোই। পরে তারা এই অ্যাপসের ২.০ ভার্সন চালু করে। এতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় তিন লাখ বৃদ্ধি পায় এবং তখন তার সহকর্মী ইয়াহুর ব্রায়ান অ্যাক্টন বেকার হয়ে পড়ে। জান তাকে অনুরোধ করে তার সাথে যুক্ত হতে। ব্রায়ান যুক্ত হবার পর নানা ধরনের ফিচার যুক্ত হয়, ফলে হোয়াটসঅ্যাপ এর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

তবে সবচেয়ে বড় সফলতার মুখ দেখে যখন হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপল স্টোরে পাবলিশ করা হয় এবং খুব শীঘ্রই তারা আবার এটাকে ব্লাকবেরি ভার্সনেও রুপান্তর করে। এতে করে নানা ধরনের ব্যবহারকারী হোয়াটসঅ্যাপের সুবিধা পেতে থাকে।

এটা একটি আশ্চর্যের বিষয় ছিলো যে, কোন প্রকার বিজ্ঞাপন ছাড়া কিভাবে তারা মিলিয়ন ডলার আয় করেছিলো। এতে প্রধানত দুটি উপায় অবলম্বন করা হয়েছিলো:প্রথমবার আইফোন ব্যবহারকারীদের এই অ্যাপস ব্যবহার করার জন্যে একটি নিদিষ্ট হারে টাকা পরিশোধ করতে হতো আর এনড্রয়েড ব্যবহারকারীদের দিতে হতো বছরে।

২০১৩ সালে তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪০০ মিলিয়নে পৌছায় এবং ২০১৪ সালের গোড়ার দিকে কোম্পানি প্রতিমাসে ৫০০ মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী পায় এবং বর্তমানে তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯০০ মিলিয়নেরও বেশি, যা হয়তোবা খুব শীঘ্রই বিলিয়ন সংখ্যক ব্যবহারকারীর সংখ্যায় পৌছে যাবে।
তবে এদের মধ্য ১০ শতাংশের বেশি এসেছে, বৃহত্তর দেশ ভারত থেকে।

এতো দ্রুত এতা জনপ্রিয় হওয়ায় জন্য নজরে পড়েছিলো ফেসবুকের । তাই তারা ২০১৪ সালে ১৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে হোয়াটসঅ্যাপকে কিনে নেয়।

তবে প্রতিদিন হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

মো. হৃদয় সম্রাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here