কয়েকটি সমস্যা থেকে ধারণা আর উদ্ভাবনের শুরু, আমার মেয়েদের স্কুলিং শুরুর পর থেকে আমার বাসার রুটিন অনেকটা এরকম সন্ধ্যা হলে পড়তে বসা। নিজেরাই হোমওয়ার্ক করবে, আটকে গেলে আমাদের সাহায্য নিবে, ইত্যাদি।
এভাবে দিনকাল মন্দ কাটছিল না। কিন্তু আমার বড় মেয়েটা ক্লাস এইটে উঠার পর ‘ও লেভেলে’র সিলেবাস শুরু হয়ে গেল। তখন আর আমরা বেশি সাহায্য করতে পারছিলাম না। অতিরিক্ত কোচিংয়ের দরকার পড়লো। খুঁজতে থাকলাম টিচার। ভাবলাম মেয়ে টিচার রাখি তাহলে সহজে পড়তে পারবে। কয়েকটা টিউশন মিডিয়াতে যোগাযোগ করলাম। পদার্থের জন্য একজন নারী শিক্ষক দিতে বললাম। মিডিয়াগুলো শিক্ষকদের বিশাল লিস্ট পাঠিয়ে দিল। কিন্তু কোন নারী শিক্ষক নেই যারা বাসায় এসে পড়াবে।
সমস্যাটা কি সেটা বের করার চেষ্টা করলাম। মনে হলো এই সমস্যার অন্যতম কারণগুলো হতে পারে – সময়, দূরত্ব, রাস্তায় ধুলা, ধোঁয়া, বখাটেদের দ্বারা উত্যক্ত হবার ঝুঁকি এবং ঢাকার জ্যাম ইত্যাদি আরো কত কি।
এর মাঝে মেয়েকে কোচিং এ ভর্তি করালাম। কোচিং এ নিয়ে যাওয়া ঝামেলা তাই বাসার কাছের কোচিং এ দিলাম। কিন্তু সেখানে পড়ার মান সন্তোষজনক নয়। মেয়ের অনেক বন্ধুদের দেখলাম যারা অনেক দূরে থাকে তারাও এই যাওয়া আসার ঝামেলায় ভাল কোচিং করতে পারছে না।
ভাবলাম অনেক কিছুই তো আজকাল অনলাইনে হচ্ছে। তাহলে টিউশনও হয়তো অনলাইনে করা যাবে। টিউশন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে করতে দেখলাম অনেক উন্নত দেশে এখন অনলাইন টিউশন বেশ জনপ্রিয়। এতে করে শিক্ষক বা শিক্ষার্থীকে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। যে যার বাসায় থেকে যেকোন সুবিধাজনক সময়ে পড়তে পারে।
খোঁজ করলাম এরকম বাংলাদেশে আছে নাকি। কিন্তু এখানে সব রেকর্ডেড ক্লাস। ওয়ান টু ওয়ান টিউশন সিস্টেম বা ইন্টারঅ্যাকটিভ কোন কিছু নাই। আবার অনেকে স্কাইপ ব্যবহার করছে। আমি শিক্ষক হয়ে কয়েকটা ট্রাই করলাম কিন্তু বুঝলাম এগুলো অনলাইন টিচিং এর জন্য মোটেও কার্যকর নয়।
ব্যাপারটা নিয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে এক সকালে কথা বলছিলাম। সে একটু চিন্তা করে বলল, চল আমরা নিজেরাই একটা ভার্চুয়াল ক্লাশ বানাই না কেন, যেটা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ হবে।
বিষয়টা আমি হেসে উড়িয়ে দিলাম। কিন্তু আমার কাজ পাগল স্বামী বেশ ইন্টারেস্ট পেয়ে গেল। সে অফিস থেকে ফিরেই এই বিষয় নিয়ে কাজ করতে বসে যায়। মাঝে মাঝে আমার মতামত নেয়। আমিও বেশ আগ্রহী হলাম এবং আমার দীর্ঘ টিচিং অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে লাগলাম। আমাদের সাথে যুক্ত হলেন আরো কিছু উৎসাহী মানুষ। তার মাঝে অন্যতম হল জাহাঙ্গীর ভাই, যিনি কাজ পাগল এবং সদা উৎসাহ দাতা, আর সৌরভ যাদের নিয়ে তৈরি হল আমাদের ডেভেলপমেন্ট টিম।
প্রায় বছর দেড়েক পর যা তৈরি হলো তা দেখে আমি মুগ্ধ। আমাদের প্রডাক্টটি দেখে আমার মনে হচ্ছে, এটা যেকোনো বিশ্বমানের প্রোডাক্টের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারবে। আমার বিশ্বাস আপনারাও আমার সাথে একমত হবেন।
প্রোডাক্টটাকে দীক্ষা ইংরেজিতে dikkha.com নামক একটা ওয়েবসাইটের মোড়কে নিয়ে এসেছি আপনাদের কাছে।
রীনা খানম, শিক্ষা উদ্যোক্তা