কলকাতার একটি গরীর পরিবারে জন্ম বিকাশ চৌধুরীর। বাবা ছিলেন লন্ড্রিম্যান, ছোট বেলায় বিকাশ নিজেও বাবাকে লন্ড্রির কাজে সহায়তা করতেন। কিন্তু লন্ড্রির কাজে সংসার চালানোই বাবার কষ্ট হয়ে যেত, তাই বিকাশের লেখাপড়া থমকে যায়। ঠিক সে সময় দেবদূত হয়ে বিকাশের পাশে আসেন ক্রিকেটার অরুণ লাল। তিনি নিজেই বিকাশের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন। আর বিকাশ সেটা লুফে নিয়ে নিজের অধ্যাবসায় আর মেধা দিয়ে জয় করেছেন করপোরেট দুনিয়া।
কলকাতার রাস্তার ফুটপাত থেকে উঠে এসে বিকাশ চৌধুরী এখন জেএসডব্লিউ স্টিল লিমিটেডের ট্রেজারি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
পাঠক চলুন জেনে নেই কেমন ছিল বিকাশ চৌধুরীর ছোট বেলার দিনগুলি। কিভাবে তিনি হয়ে উঠলেন করপোরেট জায়ান্ট?
বিকাশ চৌধুরী কলকাতায় একটি গরীব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা লন্ড্রির কাজ করতেন তাই সংসারের খরচ সামলাতেই তার কষ্ট হয়ে যেত। বিকাশ তাই আর পড়াশোনা করতে পারেনি।
তবে চার দশক আগে ক্রিকেটার অরুণ লাল দিল্লি থেকে কলকাতায় চলে আসেন। তখন অরুণ লাল এই বিকাশ চৌধুরীকে তার পরিবারের পোশাক পরিষ্কার ও ইস্ত্রি করার জন্য ভাড়া করেছিলেন। প্রতিদিনের পোশাক পৌঁছানোর সময় অরুণ লালের স্ত্রী দেবজানী তাকে ইংরেজী শিখতে উৎসাহ দিতেন। পড়ানোর পাশাপাশি তিনি বিকাশ চৌধুরীকে সর্বদা অধ্যয়নের জন্য অনুপ্রাণিত করতেন।
বিকাশ চৌধুরীর তখন ১২ বছর বয়স, অরুণ লাল পরিবারের কোন সন্তান ছিলো না। তাই তিনি বিকাশ চৌধুরীর পড়াশোনার ভার নেন। এছাড়া তারা বিকাশের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তাও করেন। অরুণ লাল বিকাশকে তখন ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করে দেন। ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশোনা শেষ করে বিকাশ চৌধুরী ব্যবসায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।
২০০০ সালে তিনি দেশের অন্যতম কঠিন ক্যাট পরীক্ষায় পাশ করেন এবং কলকাতার মর্যাদাপূর্ণ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট-এ একটি আসনে নাম লিখিয়েছিলেন।
এমবিএ শেষ করার পরে তাকে ডয়চে ব্যাংকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং কয়েক বছরের মধ্যে তাকে সেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট করা হয়। এর পরে তিনি সিঙ্গাপুরের বহুজাতিক ডিবিএস ব্যাংকে, ভারতের এইচডিএফসি ব্যাংকে এবং ক্রেডিট এগ্রিকোলের সাথেও কাজ করেছেন। চলতি বছরের জুনে তিনি ভিপি হিসেবে জেএসডব্লিউ স্টিল লিমিটেডে চলে এসেছেন।
তিনি এখনও তার সাফল্যের জন্য অরুণ ও দেবজানীকে কৃতিত্ব দিয়ে থাকেন। তিনি লাল পরিবারকে আর্থিকভাবেও সহায়তা করেন।
চৌধুরী তার মেয়ের নাম অরুনিমা লাল রাখেন। তিনি দরিদ্র মানুষদেরও সহায়তা করেন।
বিকাশ চৌধুরী বলেন, ছোট থাকতে দেবজানী তাকে কমলার টুকরো দিতেন তাই আমি প্রতিদিন পড়তে যেতাম।
তখনকার দিনগুলি কেমন ছিল যখন চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা ছিল প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে, জবাবে বিকাশের উত্তর: আমি কখনোই আমার ক্যারিয়ারের গোল বা ডেসটিনেশন ঠিক করি নাই, শুধু নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে কঠোর পরিশ্রম করে গেছি।
নিজেকে শুধু প্রতিষ্ঠিত করেই থেমে থাকেন নি। নব্বইয়ের দশকে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন জাত ফুটবলার হিসেবেও।
বিকাশ বলেন, মিডফিল্ডার হিসেবে প্রথম বিভাগ লিগে কলকাতার ইয়ং বেঙ্গলে ১৯৮৯ থেকে ৯১ পর্যন্ত খেলেছেন। তখন প্রতি মাসে ক্লাব ১০ হাজার রুপি ও খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
বর্তমানে মুম্বাইতে বিকাশের বহুতল ভবনে বেশ কযেকটি ফ্ল্যাট আছে, বিভিন্ন ব্যান্ড্রের গাড়িও আছে। তবে বিকাশ সব সময় সাধারণ ভাবেই চলতে পছন্দ করে।
কলকাতার একটি পত্রিকায় বিকাশ বলেছিলেন, ‘ছোট বেলায় বাবা শিখিয়েছিলেন কোনো প্রকার ইচ্ছা বা বাসনা ছাড়াই কিভাবে বাঁচা যায়। সেটা নিয়েই আমি বেঁচে আছি। প্রাচুর্যের মাঝে সুখ খুঁজে না পেলেও অসহায় গরীবদের দান করে আমি সুখ পাই।’
মো.হৃদয় সম্রাট