“পোলিও পারেনি হার মানাতে”

0
ভাগ্নি মিফতার সাথে ফরিদা আক্তার রুমা

১১ মাস বয়সে পোলিও হয়ে দুই পায়ের চলার শক্তি হারান ফরিদা আক্তার রুমা। মাধ্যমিক স্কুল পাশ করবার পর আর লেখাপড়া করা হয়ে উঠেনি। বাবার চাকরীর মেয়াদ শেষ হলে বাড়ী রাঙ্গুনিয়াতে পুরো পরিবার চলে আসে।

একা একা ভীষণ লম্বা একটা সময় কাটিয়েছেন রুমা। প্রায় চার বছর একদম নিঃসঙ্গ একটা জীবন রুমার কাছে একটা জেলখানা মনে হতো। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখছেন সন্ধ্যা হতো, আবার তাকিয়ে দেখতেন ভোর হতো।

অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর সাথে একটি মাত্র মোবাইলে নিজেকে করেছেন স্বাবলম্বী

২০১৬ সাল, মা একটা এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দিলেন রুমাকে, হুয়াওয়ে জিআর-ফাইভ। সেই স্মার্ট ফোনটি যেন সবচাইতে বড় বন্ধু হয়ে উঠলো রুমার। ফোনটা যেন সবকিছু বুঝতে পারে। এক অবারিত আলোর দুয়ার খুলে যায় রুমার সামনে।

ইন্টারনেট ব্যবহার জানার পর, ফেসবুকে একটা একাউন্ট খুললেন রুমা। পুরোনো বন্ধুসহ, অনেক নতুন বন্ধু হলো। এর মধ্যে বাবা চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে। একদিন ছোট ভাগ্নি মিফতা বললো, “অনলাইনে তুমি কাজ করতে পারো, এতে তোমার সময় ভাল কাটবে, টাকাও কামাই হবে।”

ভাগ্নি মিফতাই প্রথম বলেছিলো “তুমি অনলাইনে কাজ করতে পারো”

রুমা কাজ পেয়ে গেলেন। ভালোই কাজ চলছিলো একজন উদ্যোক্তার সাথে কিন্তু কমিশন কমিয়ে দেয়ায় কাজটি রুমা ছেড়ে দিলেন।

এরপরই রুমার জীবনে আসলো এক টার্নিং পয়েন্ট। অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, এসবি গিফট এর স্বত্তাধিকারী জনাব সজীব এর সাথে কাজ করা শুরু হলো।

অনলাইনে বসে ফেসবুকের মাধ্যমে শুরু হলো প্রোডাক্ট বিক্রয় করবার কাজ। ভীষণ দ্রুত গতিতে শিখতে  থাকলেন রুমা। মাত্র ১০ মাসে রুমা তৈরী করে ফেললেন ৩৫০ জন সদস্যদের একটি গ্রুপ। অনলাইনে ১৮-২০ ঘন্টা রুমা প্রতিদিন সময় দেন।

এক মাসে রাঙ্গুনিয়ার জান মোহাম্মদ পাড়ার নিভৃত গ্রামে বসে সর্বোচ্চ ৪৫ টি গিফট আইটেম সেল করছেন রুমা। প্রতি মাসে একজন বিক্রয় কর্মী হিসেবে রুমার আয় ১০-১২ হাজার টাকা। পরপর ৫ মাস বেস্ট সেলারের অ্যাওয়ার্ড উঠেছে রুমার হাতে।

পরপর ৫ মাস বেস্ট সেলার ফরিদা আক্তার রুমা

উদ্যোক্তা বার্তার মাধ্যমে এসবি গিফট শপের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ সজীবকে হৃদয় নিঃসৃত ধন্যবাদ জানান রুমা।

ভাগ্নি মিফতা কে জানালেন প্রাণঢালা ভালোবাসা আর ধন্যবাদ। তার অনুপ্রেরণাতেইতো অনলাইনে কাজ শিখে এত দূর আসা ।

ধন্যবাদ জানান তার ৪ ভাবীদের। যারা সারাক্ষণ অনুপ্রেরণা দেয় এই বলে যে, রুমা যেনো কখনো কাজ ছেড়ে না দেয়।

 

অপু মাহফুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here