পাঁচ বন্ধুর আস্থা ও ভালোবাসার নাম ‘বিগবাস্কেটডটকম’

0

সালটা ১৯৯৯, পাঁচ বন্ধু ভি এস সুধাকর, ভিপুল পাড়খ, আবিনয় চৌধুরী এবং ভি এস রমেশের সাথে হরি মেনন অনলাইনে ওয়েবসাইট ‘ফেবার্ট’ চালু করেন।নতুন প্রযুক্তির ফলে তারা তখন সফলতার মুখ দেখে। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ভোক্তাও পেতে থাকে। তবে নানা জটিলতার কারণে তারা অনলাইন গ্রোসারি ব্যবসা থেকে সরে যায়।

অনলাইন ব্যবসায়টি থেকে তারা বিভিন্ন জায়গায় খুচরা দোকান দেওয়ার চেষ্টা করে। সাত বছর ধরে অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও কেরাল জুড়ে ২০০ টি মত দোকান দেয়। সেই সময়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আদিত্য বিড়লা গ্রুপ তাদের ব্যবসা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ফলে উদ্যক্তা কৃষ্ণ গণেশকে সাথে নিয়ে তারা চিন্তা করে তাদের ব্যবসাটাকে আবারো অনলাইনে রুপান্তর করার।অবশেষে ওই পাঁচ বন্ধুই ডিসেম্বরে ২০১১ সালে বিগবাস্কেটডটকম চালু করেন। লঞ্চের পরপরই তারা ক্যাপিটালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রাজ কন্ডুর এবং অ্যাসের্ট ক্যাপিটাল থেকে ১০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল পান।

বিগবাস্কেটের বিপণন বিভাগের প্রধান কো-ফাউন্ডার,সিইও হরি মেনন বলেন, আমাদের প্রথম ছয় থেকে নয় মাস সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ তারা সবেমাত্র ব্র্যান্ড সম্পর্কে বিজ্ঞাপন দিচ্ছিল এবং মূলত মুখের বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর ছিল। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪৫% এরও বেশি গ্রাহক তাদের রেফারেন্সের মাধ্যমে এসেছিলেন।

পরবর্তী এক বছরে তাদের ব্যবসা হায়দ্রাবাদ ও মুম্বাইয়ে বিস্তৃ করে ফেলে এবং দিল্লি, চেন্নাই, পুনে, আহমেদাবাদ,কলকাতার পাশাপাশি তাদের সেবা বাড়ানোর পরিকল্পনা করে।

শুরুতে সুপারমার্কেট গ্রোসারি সাপ্লাইজ প্রাইভেট লিমিটেডের হাতে বিগবাস্কেটডটকমের পরিচালনার দায়িত্ব এবং মালিকানা ছিল।

বর্তমানে তাদের তালিকায় রয়েছে ষোল হাজারের বেশি পণ্য এবং হাজারেরও বেশি ব্র্যান্ডের তালিকা। এর মধ্যে ফল ও সব্জি বিক্রির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হরি মেনন।

তার দাবি, কৃষকদের থেকে সরাসরি কৃষিপণ্য কেনার দু’টি লাভ রয়েছে। প্রথমত, জিনিসের মান ধরে রাখা যাবে। দ্বিতীয়ত, দামের ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে কৃষক ও সংস্থার, দু’পক্ষেরই। কারণ সেক্ষেত্রে কেনাবেচার মাঝে থাকবে না দালালের অস্তিত্ব। সংস্থার দাবি, ইতিমধ্যেই তারা রাজ্যের কাছে এগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেট কমিটি বা এপিএমসি লাইসেন্সের জন্য আবেদন জানিয়েছে।ফল ও সব্জির জন্য গোটা দেশে ১৭টি সংগ্রহ কেন্দ্র তৈরি করছে বিগ বাস্কেট। প্রতিটি কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন প্রায় ১০০ কৃষক। সংস্থার দাবি, শুধুই কৃষিপণ্য কেনা নয়। ভাল ফলনের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পরিকাঠামোগত সহায়তাও দেবে সংস্থা। পশ্চিমবঙ্গে বারাসতে তৈরি হচ্ছে এই কেন্দ্র।

২০১১ সালে ব্যবসা শুরু করলেও কলকাতায় সদ্য পা রেখেছে বিগ বাস্কেট। সাতটি বড় শহরে আগেই ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে হাজার কোটি টাকা ব্যবসা করা নেটবাজারের মুদিখানা। বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, মুম্বই, পুনে, চেন্নাই, দিল্লি ও আমদাবাদের পরে কলকাতায় ব্যবসা শুরু করছে বিগ বাস্কেট।

হরি মেননের দাবি, কলকাতায় পরিষেবা দেওয়ার আগেই বিপুল সাড়া পেয়েছে তার সংস্থা।

এছাড়াও রয়েছে ভারতের সবচেয়ে বড় খাদ্য এবং মুদি দোকান হিসেবে পরিচিতি ছাড়াও রয়েছে সর্বনিম্ন মূল্য সেরা মানের পণ্য সরবরাহ করার সুনাম।

তারা নানান সময় নানা ধরণের অফার দেয়, প্যাকেটযুক্ত পন্য,তাজা ফল ও সবজি,ভালো মানের চাল, ডাল,মাংসসহ অনেক কিছু। এছাড়াও বিগবাস্কেট এখন সম্পূর্ণরূপে ইন্টারনেট ভিত্তিক কোম্পানি হয়ে গেছে।

সমস্ত তাজা ফল এবং সবজি সম্পূর্ণ পরিষ্কারভাবে প্লাস্টিকের ব্যাগে প্যাক করা হয়।

যদি কোন পণ্যের দাম ১০০০ এর বেশি হয় তবে তারা ডেলিভারি চার্জ ফ্রি করে দেয় আর যদি এর কম হয় তাহলে ২০% ফি রাখে এবং প্রত্যেকটা পণ্য নিজস্ব ভ্যানের মাধ্যমে ভোক্তার নিকট পৌঁছে দেয়।

বর্তমানে কোম্পানি মুম্বাই, দিল্লি, ময়সুর, ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদ, বিজয়ওয়াদা, পুনে, চেন্নাই, মাদুরাই, কোম্বাবাড় প্রভৃতি জায়গায় তারা পণ্য সরবরাহ করছে।

বিগবাস্কেটের সফলতা অর্জন এবং বজায় রাখতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে : গ্রাহক সেবা, নানান ধরনের পণ্য, নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার।

২০১৩ সালের শেষ নাগাদ প্রতিদিন বিগবাস্কেট দিনে দুই হাজারের বেশি অর্ডার পেত যা প্রতিমাসে ৭৫ থেকে ৮০ হাজারে পৌঁছে যেত।

২০১৪ সালে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। যা প্রায় ১ মিলিয়ন অর্ডারে পৌঁছে যায় এবং দুই লাখের বেশি গ্রাহককে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তারা প্রায় ২১০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে।

২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে, বিগবাস্কেটের বলিউডের কিং খান খ্যাত অভিনেতা শাহরুখ খানকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে নির্ধারণ করেন এবং যা টেলিভিশন, প্রিন্ট ও ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। ফলে তাদের পণ্য ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছিল।

মেনন বলেন, “২০২০ সাল নাগাদ ভারতের গ্রসারি বাজারের আয়তন ২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। বর্তমানে অর্গ্যানাইজড রিটেইল ভারতের মোট রিটেইল বাজারের মাত্র ১৫%। দোকানের উচু ভাড়া এ ব্যবসার বৃদ্ধির প্রধান অন্তরায় এবং এ কারণেই এসব প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ব্যবসার দিকে ঝুঁকবে।”

দেশটির কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেওয়া অনুযায়ী, বিগবাস্কেটের বর্তমানে মূল্য প্রায় ২৫’শ কোটি রুপি ।

মো.হৃদয় সম্রাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here