ব্যবসা শুরুর মাত্র তিনমাসের মধ্যেই সফলতার মুখ দেখছে ছাত্র ও নবীন উদ্যোক্তা মো. আল আমিন। পড়াশোনা করছেন বিএসসি ইন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে।
সবাই যখন স্বপ্ন দেখে পড়াশোনা শেষ করে চাকুরী করবে বা বিসিএস দেবে তখন আল-আমিন স্বপ্ন দেখেন অন্যকে চাকুরী দেওয়ার।
তিনি বলেন, গল্পটা আসলে একটু ভিন্ন, ভার্সিটির প্রথম দিন দেখছি বন্ধুরা চাকরির জন্য আশা নিয়ে বসে আছে। কিন্তু আমি ছিলাম একটু ভিন্ন। ভাবছিলাম সবাই তো গ্রাজুয়েশন করবে চাকরি করবে,কেউ ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে ভাবতো না নতুন কিছু চিন্তা করতো না।তাই ভাবলাম পড়াশোনার পাশাপাশি একটা এমন কাজ করি যেটাতে আমি আনন্দ পাবো আর সাফল্য ও। পার্ট টাইম জব ও করতেন কিন্তু ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন নিজে কিছু করবেন।আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে শুরু করলেন নিজ উদ্যোগে অনলাইন বিজনেস।
খুব একটা পুঁজি নেই, পুঁজি নেই বললেই চলে। একজন স্টুডেন্ট এর ক্ষেত্রে পুঁজি নিয়ে শুরু করা বলতে আসলে কিছু নেই। পকেট খরচ বাঁচিয়ে অল্প কিছু পুঁজি বুক ভরা আশা নিয়ে শুরু হয়েছে এই নতুন উদ্যোক্তার পথচলা।
আল আমিন বললেন, মাথায় আইডিয়াটা ঘুরছিল অনেকদিন ধরেই।সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে প্রোডাক্টগুলো বানানো শুরু করলাম। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছি এই আর কি।আমার স্বপ্নটা আকাশের মত বিশাল তাই নাম দিলাম ‘আকাশ-নীলা’।
আকাশ নীলা নাম কেন সেই উত্তরে তিনি বলেন, আকাশ নীলা আসলে আমার এক কল্পনার চরিত্র।যার রয়েছে অসীম সৌন্দর্য ও ভাললাগার একটি গল্প।তাই এই নাম।আর আকাশ নীলাদের কারনেই আমাদের সাদাকালো মেঘের আকাশ টা হয়ে যায় নীল।
চাকুরীর পিছে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশ যত ডিজিটাল হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ ততই ডিজিটালাইজেশন এর প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।এখন পড়াশোনা করছি, ছোটবেলা থেকেই মাথায় একটা ভূত নিয়ে বড় হয়েছি আর তা হলো নতুন ক্রিয়েটিভ কিছু উদ্ভাবন করা।মূলত সাহিত্য,গান, কবিতা এসবের সাথে দীর্ঘ পথচলা আমার।তাই সাহিত্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই ভাবলাম পড়াশোনার পাশাপাশি আমার শখ ও নেশাটাকে কাজে লাগাই। তাই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।আর বাকিটা নিজের কাজের ওপরে ছেড়ে দিয়েছি।
আকাশ-নীলা শপে পাওয়া যায় মূলত হ্যান্ড পেইন্টেড কানের দুল, হাতের রিং, গলার অলংকার, সহ হাতে বানানো অনেক গহনা। এছাড়া সাথে রয়েছেন আকাশ নীলার নিজস্ব ফ্যাশন ডিজাইনার ও পেইন্টার। ইউনিক কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে বেশি ভালোবাসেন। যেমন হিমু ও রুপার চরিত্রের ওপর মোবাইল কভার,শাড়ি,গহনা সহ ফুল একটি হিমু ও রুপার সেট তৈরি করেছেন।
এছাড়াও রবীন্দ্রনাথ,কাঠ গোলাপ,কদম,বনলতা সেন সহ অসংখ্য ইউনিক কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করছেন যা আগে কেউ করে নি। এছাড়াও তৈরি করেছেন প্রায় ৫০ টি ডিজাইন এর টিপ। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কথা চিন্তা করে প্রাইস রেখেছেন হাতের নাগালে। অন্যান্য অনলাইন শপের তুলনায় আল-আমিনের জিনিস অনেক ইউনিক ও হাতের নাগালে।যেমন হিমু ও রুপার হাতের কানের ও গলার হ্যান্ড মেড ও পেইন্টেড জিনিস গুলো রেখেছেন মাত্র ১৬০ করে, যদিও জিনিসগুলো অনেক ইউনিক।
কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে বলেন, সাড়া মোটামুটি ভালোই পাচ্ছি,যারা ইউনিক কন্টেন্ট ও ইউনিক জিনিস খোঁজেন, সাহিত্য খোঁজেন আমরা মূলত তাদের ই সাড়া পাচ্ছি।আর এটাই আমাদের বড় পাওয়া। খুব অল্প সময়ে বেশ পরিচিতি লাভ করেছি।
আকাশ নীলায় বর্তমানে চারজন কাজ করছেন।তবে ভবিষ্যতে চার জন থেকে চল্লিশ এবং চল্লিশ থেকে চারশো তে যাবে বলে আশাবাদী এই নতুন উদ্যেক্তা।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে আমার এই অনলাইন শপটিকে আমি ক্রিয়েটিভ প্রোডাক্ট এর কারখানা বানাতে চাই।বাকি সব শপের চেয়ে আমাদের থাকবে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল,কদম,কাঠ গোলাপ, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি। হয়তো আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়।যদি কেউ এগিয়ে আসে তাহলে একটু সহযোগিতাই পারে আমার এই স্বপ্নটাকে সত্যি করতে। এমন একটি শো রুম দিতে চাই। যেখানে যে কেউ ঢুকলেই খালি হাতে বের হতে পারবে না, কিছু না কিছু পছন্দ হবেই তার।আর সেখানে গেলে মানুষ বুঝতে পারবে বাঙালি জাতির ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি।
লাভের কথা জানতে চাইলে বলেন, লাভের অংকটা খুব সীমিত হলেও মনের আনন্দটা অসীম। লাভ কে তেমন একটা প্রাধান্য দেইনি, প্রাধান্য দিয়েছি প্রোডাক্ট ও এর মানের ওপর আর বাকিটা মহান আল্লাহ’র হাতে।
খাদিজা ইসলাম স্বপ্না