শেয়ারট্রিপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ভ্রমণ খাতে ডিজিটাল উদ্ভাবনের জন্য পেলেন স্বীকৃতি
বাংলাদেশের ট্রাভেল-টেক খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ২০২৫-এ ‘বর্ষসেরা নারী উদ্যোক্তা’ নির্বাচিত হয়েছেন শেয়ারট্রিপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া হক। ডিএইচএল এক্সপ্রেস বাংলাদেশ ও দ্য ডেইলি স্টারের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ পুরস্কারের ২৩তম আসরে তাকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সাদিয়া হক বাংলাদেশের ট্রাভেল-টেক খাতের অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ করপোরেট ক্যারিয়ার শেষে তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নেন। গ্রামীণফোন, নোকিয়া, বাংলালিংক ও বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ট্রাস্টে সফলভাবে কাজ করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন ভ্রমণ খাতে প্রযুক্তিনির্ভর সেবা চালু করবেন, যাতে ভ্রমণ আরও সহজ ও সাশ্রয়ী হয়।
২০১৪ সালে স্বামী কাশেফ রহমানের সঙ্গে মিলে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘ট্রাভেল বুকিং বাংলাদেশ’। শুরুতে অফলাইন সেবা দিলেও পরে ডিজিটাল সমাধানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তারা। সেই ভাবনা থেকেই ২০১৯ সালে জন্ম নেয় ‘শেয়ারট্রিপ’—যা দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ট্রাভেল প্ল্যাটফর্ম। এখানে অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফ্লাইট, হোটেল ও ট্যুরসহ ভ্রমণ-সম্পর্কিত সব সেবা একসঙ্গে পাওয়া যায়।
শুরুর পথ সহজ ছিল না। বাজারে অফলাইন এজেন্টদের দাপটের মধ্যেই শেয়ারট্রিপকে জায়গা করে নিতে হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে উদ্ভাবন ও গ্রাহকসেবার মানে ভরসা রেখে এগিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় মানুষের অনলাইনমুখী প্রবণতা দ্রুত বাড়ায় শেয়ারট্রিপের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়। এ সময়ে তারা চালু করে বি২বি প্ল্যাটফর্ম ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘এসটি রুমস’।
বর্তমানে শেয়ারট্রিপের অ্যাপ ডাউনলোড সংখ্যা দেড় মিলিয়নের বেশি। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যাওয়ার্ডসের ‘লিডিং অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি’-সহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া সাদিয়ার নেতৃত্বে শেয়ারট্রিপ ইতোমধ্যে ১১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে। তারা ফিনটেক খাতে প্রবেশ করেছে ‘এসটিপে’-এর মাধ্যমে এবং দুবাইয়ে শাখা খুলে আন্তর্জাতিক বাজারেও যাত্রা শুরু করেছে।
পুরুষ-প্রধান শিল্পে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সাদিয়া হক শুধু সীমাবদ্ধতা ভেঙেই এগিয়ে যাননি, বরং প্রমাণ করেছেন যে দৃঢ়তা, উদ্ভাবন আর সঠিক দিকনির্দেশনা পরিবর্তনের পথ দেখাতে পারে। তার সাফল্য বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা।