Homeকৃষিমরুর খেজুর এবার খাগড়াছড়ির পাহাড়ে

মরুর খেজুর এবার খাগড়াছড়ির পাহাড়ে

মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে জন্ম নেওয়া খেজুরগাছ এবার জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে। জেলা সদরের মাটিরাঙ্গা উপজেলার দক্ষিণ রসুলপুর এলাকায় সৌদি ইংল্যান্ড থেকে আনা বারহি আম্বার জাতের খেজুরগাছে এখন ঝুলছে সবুজ লালচে রঙের পাকা ফল। আর এই সাফল্যের নেপথ্যে আছেন উদ্যোক্তা নুর আলম, যিনি এক সময় ছিলেন আইটি ব্যবসায় যুক্ত। 

শখ থেকে স্বপ্ন, স্বপ্ন থেকে সফলতা

নুর আলম এক সময় আইটি খাতে কাজ করতেন। কিন্তু প্রযুক্তির পেছনে না ছুটে তিনি জীবন বদলে নেন প্রকৃতির পথে। ২০১৮ সালে পুরোপুরি কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন। শখের বসে ফলের বাগান গড়ার মধ্য দিয়েই তাঁর এই যাত্রা শুরু। বর্তমানে তাঁর মালিকানাধীন ফলবাগানটি ১৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে দুই একরে রয়েছে খেজুর চাষ।

ইউটিউবে ভিডিও দেখে খেজুর চাষে আগ্রহী হই,” বলেন নুর আলম।পাহাড়ে আমার জমির মাটি পরীক্ষার পর দেখা যায়, খেজুর চাষের জন্য এটি উপযোগী। তখনই সিদ্ধান্ত নিই বিদেশি জাতের খেজুর গাছ লাগানোর।

প্রথমে ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড থেকে ২৫টি খেজুর চারা আনেন তিনি। এরপর ২০২০ সালে সৌদি আরব থেকে আরও ৫০টি চারা এনে রোপণ করেন। বর্তমানে তাঁর বাগানে বারহি জাতের ১২৫টি আম্বার জাতের দুটি গাছ রয়েছে।

গাছে ফলন, বাগানে মানুষের ভিড়

নুর আলম জানান, গাছ লাগানোর তিন বছরের মধ্যেই ফলন আসতে শুরু করে। প্রথম বছর তিনি এক লাখ টাকার মতো খেজুর বিক্রি করেন। ২০২৪ সালে বিক্রি হয়েছে তিন লাখ টাকার খেজুর। চলতি মৌসুমে তাঁর প্রত্যাশা, আয় হবে সাত লাখ টাকার বেশি

পাইকাররা বাগান থেকেই খেজুর কিনে নিচ্ছেন প্রতি কেজি ৫৫০ টাকায় শুধু ফল নয়, চারাও বিক্রি করে আয় করছেন তিনি।প্রতিটি চারা ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি,” বলেন নুর আলম।দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে চারা নিতে, আবার অনেকে আসে শুধু বাগান দেখতে।

বিদেশি স্বাদের খেজুর দেশের মাটিতে 

নুর আলমের মতে, তাঁর বাগানের খেজুরের স্বাদ, রঙ, আকৃতি সবই আরব দেশের খেজুরের মতোই।দেশে এখনো খেজুরের বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে খেজুর চাষ শুরু হলে আমদানি কমে আসবে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে,” বললেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “খেজুর গাছ খুব বেশি পরিচর্যা চায় না। বছরে একবার জৈব সার একবার রাসায়নিক সার দিলেই চলে। তাছাড়া খেজুর সহজে সংরক্ষণযোগ্য, তাই বাজারজাত করতেও ঝামেলা নেই।

কৃষি বিভাগের প্রশংসা আশাবাদ 

নুর আলমের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম তিনি বলেন, “নুর আলম পরীক্ষামূলকভাবে খেজুর চাষ শুরু করেছিলেন এবং সফল হয়েছেন। পাহাড়ের মাটি আবহাওয়া খেজুর চাষের জন্য উপযোগী। কৃষি বিভাগ থেকে তাঁকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, “তাঁর সফলতা দেখে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এই চাষ স্থানীয় কৃষকদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়বে বলে আমাদের আশা।

পাহাড়ি কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত 

এক সময় খেজুর ছিল শুধু আরব দেশ থেকে আমদানি করা একটি ফল। কিন্তু এখন সেটি খাগড়াছড়ির পাহাড়ি জনপদে উৎপাদিত হচ্ছে। এতে করে স্থানীয় কৃষির একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, যা দেশের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

নুর আলমের সাফল্য শুধু তাঁর একার গল্প নয়, এটি পাহাড়ের কৃষি অর্থনীতিতে সম্ভাবনার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments