গত ২৫-২৭ জুন ৩ দিনব্যাপী “উদ্যোক্তা নতুন যুগের জন্য” প্রতিপাদ্যে বিশ্বনেতাদের সমাবেশ টিয়ানজিনে।
বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, জ্বালানি সংকট, এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (WEF) আয়োজন করল Annual Meeting of the New Champions 2025। চীনের টিয়ানজিন শহরে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল_ “Entrepreneurship for a New Era”, যা নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকদের জন্য একটি দিকনির্দেশক রূপে বিবেচিত হচ্ছে।
এবারে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশের ১,৭০০ অংশগ্রহণকারী। এই সম্মেলনটি দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চলের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির অগ্রগামীদের নিয়ে গঠিত। এতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা এবং চিন্তাশীল উদ্যোক্তা।
সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে স্থান পায় তিনটি প্রধান থিম_প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনভিত্তিক উদ্যোগ:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), জেনারেটিভ টেকনোলজি, ব্লকচেইন ও অটোমেশন ব্যবহারে স্টার্টআপ ও এসএমই খাতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্লেষণ। টেকসই বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার কৌশল, এবং নতুনভাবে গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন ডিজাইন করার রূপরেখা। উদ্যোক্তা সহিষ্ণুতা ও ভবিষ্যত অর্থনীতি: দুর্যোগ প্রতিরোধে উদ্যোক্তাদের মানসিক দৃঢ়তা, নীতি সহায়তা, এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোর্গে ব্রেন্ডে এ প্রসঙ্গে বলেন_“আজকের উদ্যোক্তারা কেবল ব্যবসা গড়েন না, বরং তারা ভবিষ্যতের সমাজ ও নৈতিক কাঠামো নির্মাণেও মুখ্য ভূমিকা রাখেন। এই সম্মেলন সেই নির্মাণশীল দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রতিনিধিত্ব করে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য উদ্যোক্তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং উদ্ভাবন-ভিত্তিক নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সম্মেলনে উপস্থিত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ‘অ্যানুয়াল মিটিং অব দ্য নিউ চ্যাম্পিয়নস’ এখন কেবল অর্থনৈতিক সম্মেলন নয়, বরং একটি ভবিষ্যত নির্মাণ কেন্দ্র—যেখানে নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তিগত চিন্তাবিদরা একসঙ্গে মিলে বৈশ্বিক সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করেন।
বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. মিন হুয়াং মন্তব্য করেন,“এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের উদ্যোক্তারাও তাদের ধারণা ও সমস্যা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন, যা বৈশ্বিক সহযোগিতা বাড়াতে সহায়ক।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই সম্মেলন উদ্যোক্তা জগতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ভবিষ্যতের অর্থনীতি কেমন হবে, তা এই ধরনের সম্মেলন থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। উদ্যোক্তা, প্রযুক্তি ও নীতিনির্ধারণ—এই ত্রিপক্ষীয় যোগসূত্রই হবে আগামী দশকের বৈশ্বিক উন্নয়নের চাবিকাঠি।
“অ্যানুয়াল মিটিং অফ দ্য নিউ চ্যাম্পিয়নস” ছাড়াও, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বছরে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সভা এবং অন্যান্য বিশেষ ইভেন্টের আয়োজন করে।