পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে ঢাকায় শুরু হয়েছে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৫ এবং বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত পরিবেশ মেলা ২০২৫।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, “জীবন বাঁচাতে হলে পরিবেশ বাঁচাতে হবে।
পরিবেশ ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করতে পারলে আমরা সুন্দর পৃথিবী উপভোগ করতে পারব।” একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি এর ব্যবহার বন্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিক যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে সপ্তাহে অন্তত একটা দিন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জন করে, তাহলে ক্রমান্বয়ে প্লাস্টিককের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া কঠিন এ পথে এগুনো যাবে না।
দূষণ রোধে কেবল পলিথিন বর্জন নয়, পলিথিন উৎপাদন বন্ধ করার প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দৈনন্দিন জীবনযাপনে (লাইফস্টাইল) পরিবর্তন ছাড়া সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয় অবধারিত। পরিবেশ সুরক্ষার বর্তমান তরুণ প্রজন্ম অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বৃক্ষ ও বনের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষ কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে, অক্সিজেন উৎপাদন করে, এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। আমাদের জলবায়ুকে দুর্যোগ সহনশীল করতে পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের বিকল্প নেই।”
তিনি জানান, বর্তমান সরকার টেকসই বন ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী তৈরি, হারিয়ে যাওয়া বনাঞ্চল পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নগরায়নের চাপে থাকা এলাকাগুলোতে নগর বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বন-নির্ভর জনগোষ্ঠীকে বিকল্প জীবিকার সুযোগ দিয়ে বন সংরক্ষণে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় পরিবেশ পদক, বৃক্ষরোপণ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ৩১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করেন এবং সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মাঝে লভ্যাংশের চেক বিতরণ করেন।
পরে তিনি মেলা প্রাঙ্গণে একটি সোনালু গাছের চারা রোপণ করে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। সোনালু গাছের এই প্রতীকী রোপণ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশের অঙ্গীকারের এক শক্তিশালী বার্তা বহন করে।
এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য:
“প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়”,
এবং
বৃক্ষরোপণ অভিযানের প্রতিপাদ্য:
“পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি”।
এই উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এবং ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন, বিতর্ক, স্লোগান প্রতিযোগিতা, সেমিনার ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আয়োজিত পরিবেশ মেলা চলবে ২৫ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত, এবং বৃক্ষমেলা চলবে ২৫ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে