চলতি মাসেই বাংলাদেশ থেকে চীনে প্রথমবারের মতো আম রপ্তানি শুরু হচ্ছে। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ও দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর অবশেষে রপ্তানির এই নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, যা কৃষিপণ্য বাজারে বৈচিত্র্য ও সম্ভাবনার নতুন জানালা খুলবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানান, চলতি মৌসুমেই চীনে আম পাঠানো শুরু হবে। সদ্যসমাপ্ত চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনের বাজারে প্রবেশের এই উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আনেন। সেই ধারাবাহিকতায় এখন আম রপ্তানির পথ প্রশস্ত হলো। এই রপ্তানি উদ্যোগকে ঘিরে ইতিমধ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, মান নিরীক্ষা ও সরবরাহ শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণে নানা প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কৃষিসচিব জানান, বাংলাদেশে বছরে ২৭ লাখ টন আম উৎপাদন হয়। এ বিপুল উৎপাদনের একটি অংশ রপ্তানির মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ও কৃষকের আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। চীন ছাড়াও অন্যান্য সম্ভাবনাময় বাজারে আম ও ফলমূল রপ্তানির কৌশল নির্ধারণে সরকার কাজ করছে। রপ্তানির পাশাপাশি দেশের কৃষিকে আধুনিকায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর করতে বড় ধরনের রূপান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সচিব জানান, দেশের প্রতিটি ভূমি মৌজা ও কৃষি প্লটকে একটি সমন্বিত ডেটাবেসে অন্তর্ভুক্ত করে সার, বীজ, বালাইনাশক, আবহাওয়া, রোগবালাইসহ কৃষিসংক্রান্ত সব তথ্য ‘খামারি’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপে সংযুক্ত করা হচ্ছে। কৃষক মোবাইলেই জানতে পারবেন কোন মৌসুমে কী চাষ হবে, কীভাবে পরিচর্যা করতে হবে এবং কীভাবে ফসল তোলা ও সংরক্ষণ করতে হবে।
সারা দেশে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সব প্রতিষ্ঠানকে একটি সমন্বিত ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) আওতায় আনা হচ্ছে। এতে কৃষিসেবা আরও সহজ ও গতিশীল হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সচিব আরও জানান, প্রশিক্ষিত নারী ও তরুণদের কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কৃষিসংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
পচনশীল শাকসবজি, আলু ও পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য আধুনিক হিমাগার নির্মাণের কথাও জানান সচিব। অন্যদিকে আম ছাড়াও কাঁঠাল ও অন্যান্য ফল রপ্তানিতে সরকার একাধিক প্রকল্প ও প্রণোদনা প্যাকেজ নিচ্ছে। এসব উদ্যোগ দেশের কৃষি খাতকে আরও বাণিজ্যিক, টেকসই ও প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলবে বলে মনে করছে সরকার। ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মাহমুদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।