সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের জন্য বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি, উন্নত স্যানিটেশন-ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে ওয়াটারএইড বাংলাদেশের সাথে চুক্তি করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
ব্র্যাক ব্যাংকের ফ্ল্যাগশিপ সিএসআর প্রোগ্রাম ‘অপরাজেয় ওয়াটার অন্ট্রপ্রেনর (WE)’-এর অংশ হিসেবে এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএসআর বিষয়ক জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন ও অভিযোজন খাতের গাইডলাইন অনুসরণ করে।
এই উদ্যোগের আওতায় সাতক্ষীরার লবণাক্ত অঞ্চল শ্যামনগরের গাবুরা এবং পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে পাঁচটি পানি পরিশোধনাগার স্থাপন করা হবে।
এছাড়াও এই উদ্যোগটি এই অঞ্চলের মানুষদের জন্য স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তিনটি স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এর ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে।
কলেরা এবং আমাশয়ের মতো পানিবাহিত রোগগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দূষিত ও অনুপযুক্ত উৎস থেকে পানি পান করার কারণে হয়ে থাকে। রিভার্স অসমোসিস (RO) পানি পরিশোধনব্যবস্থা চালু এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনবিষয়ক জনসচেতনতামূলক কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে এই উদ্যোগটি পানিবাহিত রোগের প্রকোপ হ্রাসেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘অপরাজেয় ওয়াটার অন্ট্রপ্রেনর’ সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত করবে, যার ফলে এই অঞ্চলে একটি শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যবান কমিউনিটি গড়ে উঠবে, যাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে আর নিরাপদ পানির অপ্রতুলতা থেকে সৃষ্ট সমস্যা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
এই উদ্যোগের প্রধান একটি দিক হলো, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় নারীদের রিভার্স অসমোসিস প্ল্যান্ট পরিচালনায় দক্ষ করে গড়ে তোলা। এটি তাঁদের ওয়াটার অন্ট্রপ্রেনর হয়ে বিশুদ্ধ পানি-কেন্দ্রিক ছোট ব্যবসা শুরু করতে সহায়তা করবে। এর ফলে এই অঞ্চলে টেকসই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, যা থেকে নারী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে ঢাকায় ওয়াটারএইড বাংলাদেশের অফিসে ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড চিফ অপারেটিং অফিসার মো. সাব্বির হোসেন এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এই চুক্তির বিষয়ে সাব্বির হোসেন বলেন যে, “অপরাজেয় ওয়াটার অন্ট্রেপ্রেনর কেবল নিরাপদ পানি নিশ্চিতেই নয়, বরং এটি স্থানীয় কমিউনিটির সুস্বাস্থ্য, নারী ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ুজনিত সমস্যাগুলোর দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নিশ্চিতেও কাজ করবে। এমন সব উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা মানুষের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছি।”
হাসিন জাহান বলেন, “যাদের নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশনের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তাঁদের জন্য এই অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিশ্চিত করতে এই চুক্তিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক উন্নয়নে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিশ্রুতি এবং আমাদের দক্ষতার সমন্বয়ে আমরা এমন সব কাজ করে যেতে চাই, যা জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, কমিউনিটি, বিশেষ করে নারী ক্ষমতায়ন এবং নারী-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও টেকসই করবে।”
একটি মূল্যবোধ-নির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংক নিজেদের সিএসআর উদ্যোগগুলোকে এমনভাবে কাজে লাগাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা আর্থিক এবং সামাজিক বাধাগুলো দূর করে সবার জন্য সুযোগ তৈরি করে দেবে, যাতে প্রত্যেকে নিজ সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে অর্থপূর্ণ জীবন যাপনের সুযোগ পায়।
যথাযথ টয়লেট এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের পাশাপাশি মানুষের সুস্বাস্থ্য, মর্যাদা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন নিরাপদ পানির ব্যবস্থা। ব্র্যাক ব্যাংক এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশের নেওয়া এই ‘অপরাজেয় ওয়াটার অন্ট্রপ্রেনর’ উদ্যোগটি আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জলবায়ু-সহিষ্ণু সমাজ গঠনের ব্যাপারে উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।