Homeউদ্যোক্তা মেলাঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের পুনরুত্থানের প্রয়াসে আজ  শুরু হচ্ছে ঢাকা মেকার্স সিজন ৩

ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের পুনরুত্থানের প্রয়াসে আজ  শুরু হচ্ছে ঢাকা মেকার্স সিজন ৩

ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের পুনরুত্থানের প্রয়াসে আজ ৩০ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ঢাকা মেকার্সের পাঁচ দিনব্যাপী তৃতীয় আয়োজন। 

ঢাকা মেকার্স উদ্যোক্তাদের জন্য একটি টেকসই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে ২০২৩ সালে নিয়ে আসে তাদের প্রথম আসর। তৃতীয় আসরে এবার জোর দেওয়া হচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী কারুপণ্যের প্রচার, বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে সৃজনশীল মানুষের কাছে এসব শিল্পকে পৌঁছে দেওয়া আর বিলুপ্তপ্রায় ও ঐতিহ্যবাহী নানা শিল্পের প্রদর্শনের ওপর।

আয়োজন আজ ৩০ জানুয়ারি শুরু হয়ে চলবে ৩রা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবার ছয়টি জোনে ভাগ করে থাকছে বিভিন্ন আয়োজন। বাইরের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে থাকছে সঙ্গীতের আয়োজন ও দেশীয় ঐতিহ্যের পারফরম্যান্স আর্ট।

পাশেই কড়াইলের প্রকল্পভিত্তিক পাড়ার উদ্যোগে নির্মিত অভিনব ফুড কর্নার। এটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাস্টিক ক্রেট। পাড়ার স্থপতি আবদুল কাদির ও কাজী আরেফিন জানান কারওয়ানবাজারের ফলের আড়ত থেকে আনা হয়েছে তিন হাজার এমন ক্রেট, যা ফল পরিবহন ও বিপণনে ব্যবহৃত হয়।

মেলা শেষে আবার তা ফেরত দিয়ে দেয়া হবে। ঢাকা মেকার্সের প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ সাত্তার জানালেন, পুরো আয়োজনের পাঁচদিন প্লাস্টিকের ব্যবহারকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে জিরো প্লাস্টিক নীতিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। পুরো জায়গায় ফিল্টার পানির ব্যবস্থা থাকবে আর কাগজের কাপে তা পান করা যাবে। এতে পেট বোতলের পানি পান করা এড়ানো যাবে। খাবারের স্টলগুলোও কাগজ বা পরিবেশবান্ধব ম্যাটেরিয়ালে খাদ্য পরিবেশন করবে।

আলোকির গ্লাস হাউজে আয়োজন করা হচ্ছে ক্র্যাফট মার্কেট। কাল থেকেই এখানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এবার জামদানির প্যাটার্ন দিয়ে সাজানো হচ্ছে ছাদের ওপরের অংশ।

বিভিন্ন শিল্পীদের শিল্পকর্ম  বিক্রির জন্য দোতলার আর্ট মার্কেটে আলাদা জায়গা রাখা হয়েছে, যেখানে ৫০০ শুরু করে ১০হাজার টাকার মধ্যে কেনা যাবে এগুলো। আর আলোকির মুল হলে থাকছে উদ্যোক্তাদের মেকার্স মার্কেট।

ক্র্যাফট মার্কেট ও কর্মশালা নিয়ে কথা হয় ঢাকা মেকার্সের দুই আয়োজক মারুফুল হক ও মাহেনাজ চৌধুরীর সঙ্গে। গত দুইবারের ঢাকা মেকার্সের সঙ্গে এবারের কী পার্থক্য আছে আর এবার কারুপণ্যের উপস্থাপনে কেমন ভিন্নতা দেখা যাবে সে প্রশ্নের জবাবে মারুফুল হক বলেন, গত দুইবারে আসলে কারুপণ্য থেকে শুরু করে সব উদ্যোক্তার পণ্য একই সঙ্গে প্রদর্শিত হয়েছিল, আলাদাভাবে কোনো জোন করে ভাগ করা হয়নি। কিন্তু এবার উদ্যোক্তাদের জন্য মেকার্স মার্কেট,লোকাল হেরিটেজ ও কারুপণ্যের জন্য ক্র্যাফট মার্কেট, কনটেম্পরারি আর্টিস্টদের নিয়ে আর্ট মার্কেট, সৃজনশীল কাজ ও লোকশিল্প হাতে কলমে শেখার জন্য ওয়ার্কশপ আর আমাদের দেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রদর্শনের জন্য ডেমোনস্ট্রেশন জোন এভাবে ভাগ করা হয়েছে।

মারুফুল হক ঢাকা মেকার্সের তৈরির নেপথ্যের গল্প ও তৃতীয় আসরে এসে এ নিয়ে তাঁ উপলব্ধির কথা শেয়ার করেন এবার। তিনি বলেন, আমরা যখন প্রথম শুরু করি আমাদের উদ্দেশ্য ছিল উদ্যোক্তাদের একই ছাদের নিচে আনা এবং তাদের জন্য একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। অনেকেই ভালো পণ্য তৈরি করছেন, কিন্তু তা উপযুক্ত ক্রেতার কাছে পৌছাচ্ছে না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত,নেপাল,শ্রীলংকায় এরকম ক্র্যাফট নিয়ে মার্কেটপ্লেস আয়োজন করা হয়। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আর্ট ও ক্র্যাফটের মেলা শুরু করা ছিল আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। নতুন পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে ১৪ টির মত চারুকলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। সেখান থেকে প্রতিবছর অনেক শিল্পী পাশ করে বের হন। তাঁদের শিল্প প্রদর্শন ও বিক্রির জায়গা খুবই কম। এই সৃজনশীল মানুষদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই ঢাকা মেকার্স। এছাড়াও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, সম্ভাবনাময় ব্র্যান্ডসহ সবার সম্মিলিত প্রদর্শনী বলা যায় এই ঢাকা মেকার্সকে।

অনলাইন থেকে অফলাইন প্যাটফর্মে এসব সৃজনশীল উদ্যোগকে আনা অনেক বড় একটা উদ্দেশ্য এই আয়োজনের। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কারুশিল্পী ও হেরিটেজ আর্টিস্টদের খুঁজে আনার অভিযাত্রা কেমন ছিল সে প্রশ্নের উত্তরে আয়োজক মেহনাজ চৌধুরী বলেন, আমরা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভিন্নতাকে প্রাধান্য দিয়েছি। পাট নিয়ে অনেকে কাজ করছেন, শতরঞ্জি অনেকেই করছেন। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম হচ্ছে শোলার কাজ, শীতল পাটি বা টেপা পুতুল। এরকম শিল্পগুলোকে আমরা এবারের ঢাকা মেকার্সে প্রাধান্য দিয়েছি।

এখানে অংশ নিচ্ছেন এমন অনেক আর্টিজানের বয়স অনেক বেশি। কিন্তু তাঁদের এই কাজ শিখতে পরিবারের অনুজ সদস্যরা আগ্রহী নয়। এই শিল্পীদের বিদায়ের সঙ্গে এই শিল্পটিও হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই একে জিইয়ে রাখতে সবার মধ্যে তা ছড়িয়ে দেওয়ার কোন বিকল্প নেই। সে কারণেই এই কর্মশালার আয়োজন করা, জানান মেহনাজ।

তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, এবারের আয়োজনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী থেকে একজন আসছেন বিরল নকশার কলসি নিয়ে, যা তিন নিজ হাতে বানান। বিভিন্ন শিল্পীদের কাজের ছবি দেখে বাছাই করা হয়েছে বলে জানান মেহনাজ। তিনি আরো বলেন, অনেক শিল্পী আছেন যারা কেবল সৃষ্টি করতে চান, পণ্য বিক্রির বিষয়টা মাথায় নেই। তাঁরা আসলে জানেন না কিভাবে এই প্রক্রিয়া ঠিকমতো করা যায়। তাঁদের জন্য আমরা এবার ব্যবস্থা রেখেছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন তাদের পণ্য বিক্রির সহায়তায়। সিটি ব্যাংক থেকে আমরা অনেক শিল্পীকে অর্থায়ন করছি পণ্য তৈরি ও পরিবহনে, যাতে তাঁদের পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল এবার দেশিয় শিল্পকে আরো বেশি করে শহুরে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এই উদ্যোগের প্রস্তুতি বেশ জোরেশোরেই চলছে। ঢাকা মেকার্সের তৃতীয় আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে হাল ফ্যাশন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments