অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “এ দেশটা একটা অপূর্ব সুযোগের দেশ। আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি অসংখ্য মানুষ ।
১৭ কোটি মানুষের দেশ ছোট একটা জায়গার ভেতর। বেশিরভাগ মা্নুষ, টাটকা তাজা তরুণ। এরকম শক্তি খুব বেশি দেশের কপালে আসে নাই। আমাদের এসেছে। যার কা্রণে বারে বারে জোর দিচ্ছি এই তারুণ্যের শক্তিকে উন্মোচন করবার, সুযোগ সৃষ্টি করবার।“
বুধবার রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মাসব্যাপী ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা। শ্রমিক না। শ্রমিকটা হলো একটা বিপথে চলে যাওয়া। এটা মানুষের পথ না। মানুষের পথ হলো সৃষ্টি করা। নিজের মনের মধ্যে যা আছে তা সৃষ্টি করা। অন্যের হুকুমে সৃষ্টি করা না। এটা হলো তফাত। একটা হলো অন্যের হুকুমে, একটা হলো নিজের উদ্যোগে, নিজের চিন্তায়, নিজের ভাবনায়। নিজের ফূর্তিতে। এই মেলা আমাদের আবার সেই সৃষ্টির সুড়সুড়ি দেয়। এই মেলাটা সুযোগ দেয় একজনেরটা দেখে আরেকজনের মাথায় সুড়সুড়ি দেয়। এই সুযোগটা যেন আমরা গ্রহণ করতে পারি। “
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমার মনে মনে যে মেলার ছক সেটা হলো এগুলো তো থাকবেই, তার সঙ্গে আরও অনেক জিনিস থাকতে পারে। এক্ষুনি করতে হবে তা না। তবে চিন্তাটা আমরা করতে পারি।
তরুণদের একাংশ বাণিজ্যমেলায় থাকবে। এটা তাদের ই অংশ। এখানে ২৫ বছরের নিচে হতে হবে এমন একটা শর্ত দিয়ে দেয়া যেতে পারে। এখানেই দেখাতে পারবে কি করে তারা।
অসংখ্য রকমের কাজ করে তরুণরা। তরুণ বলতে শুধু ছেলে তরুণ না। মেয়ে তরুণ ও। ছোট ছোট অসংখ্য কাজ করে। ঘরে বসে শাড়ি বিক্রি করে। কোথায় যায় না। বাড়িতে বসে বিক্রি করে কিন্তু তার ক্রেতা বহু জায়গায়। গৃহিণী, বয়স্ক মহিলা, চার-পাঁচ ছেলে-মেয়ের মা ব্যবসা করে- ঘরে বসে রান্না করে খাবার সরবরাহ করে। ৩ দিন আগে অর্ডার দিলে ঠিক রান্না করে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে। চমৎকার বুদ্ধি খাটিয়ে দুনিয়ার সব কাজকে ফাঁকি দিয়ে নিজে একটা ব্যবসা সৃষ্টি করে ফেলছেন। এটা দেখানো দরকার মাথায় সুড়সুড়ি দেয়ার জন্য। মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে সুড়সুড়ি দেয়া। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মাথার মধ্যে সুড়সুড়ি দেয়া। মেলার একটা অংশ হবে তরুণদের, একটা অংশ হবে তরুণীদের। যাতে তারা ফূর্তি করে দেখবে,দেখে বুদ্ধি বের করবে। বুদ্ধিতে বুদ্ধিতে ঘষা দিলে আরো সুযোগ সৃষ্টি হবে। সে সুযোগ সৃষ্টি করা। এ মেলার প্রস্তুতি সারা বছর জুড়ে হবে।
কৃষি, হস্তশিল্প, কুটির শিল্প, আইসিটি, টেলিফোনসহ বিভিন্ন খাতে অসংখ্য ব্যবসা হচ্ছে আজ। আন্তর্জাতিক ব্যবসা করছে- ঘরে বসে সফটওয়্যার তৈরি করে বিক্রি করছে। কাজেই প্রত্যেক উপজেলায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ৩ থেকে ৪ জনকে চিহ্নিত করে তাদের তালিকা করা হবে চূড়ান্ত পর্যায়ে অংশগ্রহণের জন্য। এখানে যারা আসবে তাদের সমস্ত খরচ সরকার বহন করবে। কারণ তারা আমাদের পথ প্রদর্শক। তারা জাতিকে পথ প্রদর্শন করবে। দুনিয়াকে পথ প্রদর্শন করবে। যারা এখানে আসবে তারা শুধু বাংলাদেশের সেরা না, তারা দুনিয়ার সেরাও হতে পারে। দেশ আর দুনিয়ার সীমারেখা এখন আর নেই।
আন্তর্জাতিক তরুণরা দেখতে আসবে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা কি করছে। বুদ্ধি নিতে আসবে, শিখতে আসবে, উৎসাহ নিতে আসবে, জয়েন্ট ভেঞ্চার করতে আসবে। ঘরে বসে যে ব্যবসা করছে, সেটা আন্তর্জাতিক ব্যবসায় রুপান্তর হয়ে যাবে। ঘরে বসা কাজ আর আন্তর্জাতিক কাজের কোনো তফাত নেই। শুধু আকারে বড়। বুদ্ধি এক। একজনার বুদ্ধি খেটে গেলে সারা দুনিয়ার জন্যে খেটে যায়। এটাই মেলার উদ্দেশ্য, যোগাযোগ করিয়ে দেয়া।’