ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একটা চাকরিতে থিতু হতে পারতেন ফারিন মরিয়ম জ্যোতি। কিন্তু না। তিনি তা করেননি। এমনকি চাকরির ধারের কাছ দিয়ে পর্যন্ত ঘেঁষেননি।
তিনি মনে প্রাণে চাইতেন একজন উদ্যোক্তা হবেন। করেছেনও তাই। নারীর চিরায়ত সৌন্দর্য-সম্পদ ‘গহনা’ নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তৈরি শুরু করলেন বিভিন্ন ধরনের পেইন্টের গহনা তারপর পেইন্টের পোশাক। এভাবেই একটু একটু করে নিজের উদ্যোগকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন।
জ্যোতি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার ভাবনাটা আসে ২০১৭ সালের দিকে। অনলাইন সেক্টরকে কাজে লাগিয়ে নিজে কিছু করার ইচ্ছা থেকেই তার এমন সিদ্ধান্ত। শুরুটা করেছিলেন পেইন্টের গয়না দিয়ে। গয়নার ব্যাবসাটা শুরু করেছিলেন মাত্র ৬০০ টাকা পুঁজি নিয়ে। তার পেইন্টের গহনা ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলো। গহনার সফলতার পর কাপড়েও পেইন্ট করা শুরু করেন। ২০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে কাপড়ের কাজ শুরু করেন।
জ্যোতির উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে দেশি তাঁতের শাড়ি, হ্যান্ডপেইন্টের সকল পোশাক, সুচিশিল্পের পোশাক ইত্যাদি। সুচিশিল্পের কাজের জন্য তার আপাতত কর্মী আছে পাঁচজন। গ্রামের নারীদের দিয়ে তিনি সুচিশিল্পের কাজ করেন। এছাড়া তার আরও কিছু কর্মী আছে। অনলাইনে উদ্যোক্তার পেজের নাম ‘জ্যোতির্ময়ী’।
সম্প্রতি তিনি দেশী মুক্তার গহনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এই কাজের জন্য তিনি পার্ল ক্যাসেল বাই জ্যোতি (Pearl castle by joty) নামে আরেকটি পেজও খুলেছেন। এখনো পর্যন্ত সরাসরি বিদেশে রপ্তানি না হলেও দেশের ভেতরে ১২টি জেলায় তার পণ্য পৌঁছেছে। বর্তমানে তিনি মাসে প্রায় এক লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন।
নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে উদ্যোক্তা জ্যোতি বলেন, ‘উদ্যোক্তা হয়েছি নিজের ভালোলাগা থেকে। গদবাঁধা নিয়মে কাজ না করে নিজে কিছু করতে চেয়েছি। পেইন্ট করতে ভালো লাগত এজন্য এই সেক্টরে কাজ করছি। এছাড়া গ্রামের সুচিশিল্পিদের নিয়ে কাজ করারও ইচ্ছা ছিল। ভবিষ্যতে দেশিয় পণ্য নিয়ে কাজ করে এই কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। দেশিয় পণ্যের বাজারে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরী করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, নিজের ভালোলাগা থেকে কাজ করলে সফলতা আসবেই। যে ব্যাপারে আগ্রহ নেই সেটা নিয়ে কাজ করে বেশী দূর এগোনো যায় না’।
উদ্যোক্তা ফারিন মরিয়ম জ্যোতির বাবা-মা দুজনই শিক্ষক। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। গ্রামের বাড়ি যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার করিমপুর গ্রামে। জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানেই। করিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন।
সাইদ হাফিজ,
উদ্যোক্তা বার্তা