আধুনিক বিশ্বে বিভিন্ন মেশিন আবিষ্কার হওয়ার দরুন মানুষের কাজ হয়েছে সহজ। সকালে ঘুম ভাঙা থেকে শুরু করে ঘুমোতে যাবার আগে পর্যন্ত যন্ত্র ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলে না। পৃথিবীতে কত রকমের ‘মেশিন’ই না আছে তার কোন হিসেব নেই। জামাকাপড় নয়, এবার মানুষ ধোয়ার অভিনব এক মেশিন নিয়ে হাজির হয়েছে জাপান।তবে শুধু গোসল করিয়ে দেয়াই নয়,সেই সাথে ভেজা শরীরও শুকিয়ে দিবে এই মেশিন।
১৯৭০ সালে জাপান ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো সেসময় যন্ত্রটি তৈরি করেছিলো সানিয়ো ইলেক্ট্রিক কোম্পানি (বর্তমান প্যানাসনিক হোল্ডিংস কর্পোরেশন)। কিন্তু তখন মেশিন টি বাণিজ্যিকভাবে সফলতা না পায়নি। সানিয়ো ইলেক্ট্রিকের তৈরি যন্ত্রটির নাম ছিল ‘আল্ট্রাসনিক বাথ’। ঐ যন্ত্র ব্যবহারকারীগণ একটি ডিম্বাকৃতির টাবে বসতেন। টাবটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গরম পানি এবং আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গ দিয়ে ভরে যেতো।এচাড়াও একটি প্লাষ্টিক বল ছাড়তো, যা ব্যবহারকারীর গা ম্যাসাজ করতো। ‘মানুষ ধোয়ার মেশিন’ সেই যন্ত্র এবার আবারও আসছে নতুনভাবে নতুন রূপে।
জাপানের অন্যতম পুরনো সংবাদমাধ্যম আসাহি সিমবুন অনুসারে, ওসাকা শহরভিত্তিক ‘শাওয়ার হেড’ তৈরির এক কোম্পানি ‘সায়েন্স কোং’ এবারে এই অদ্ভুত যন্ত্রটি তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ইয়াসুয়াকি আয়োমা । যন্ত্রটি দেখতে অনেকটা ফাইটার জেট-এর ‘ককপিট’-এর মতো। এতে একটি স্বচ্ছ ঢাকনা রয়েছে, যা পেছন থেকে খোলা যায়। কোনো ব্যক্তি গোসল করার জন্য এর মাঝখানে বসলে, যন্ত্রটি পানিতে ভরে উঠবে। পানির তাপমাত্রা ঠিক রাখতে যন্ত্রটি সেন্সরের মাধ্যমে ব্যক্তির পালস এবং শরীরের অন্যান্য তথ্য মেপে গোসলের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রার পানি ঠিক করতে পারবে। এছাড়াও ব্যবহারকারী শান্ত আছেন নাকি অস্থির তাও শনাক্ত হবে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে। ভেতরের মানুষটিকে আরও সতেজ অনুভূতি দিতে যন্ত্রের স্বচ্ছ কাভারে ভেসে উঠবে বিভিন্ন ছবি। একজন মানুষের গোসল করা ও গা শুকানোর এই পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লাগবে ১৫মিনিট।
এবারে যন্ত্রটির নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিরাই নিনজেন সেনটাকুকি’-অর্থাৎ ভবিষ্যতের মানুষ ধোয়ার মেশিন। এখন পর্যন্ত মেশিনটির ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৫ সালে ওসাকা অঞ্চল ও নগর সরকার পরিচালিত ওসাকা হেলথকেয়ার প্যাভিলিয়নে, কানসাই এক্সপোতে প্রদর্শিত হবে যন্ত্রটি। এক্সপোতে আসা দর্শনার্থীরা মেশিনটি ব্যবহার করে দেখার সুযোগ পাবেন। প্রতিদিন ৮ জন পর্যন্ত মানুষ এই মেশিন উপভোগ করতে পারবেন। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইটের একটি বিশেষ পেজে এর রিজার্ভেশন নিচ্ছে। পুরো এক্সপো চলাকালীন সময়ে ১০০০ দর্শনার্থীকে এই সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই যন্ত্রটি কখনোই বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হবে না বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চ। তবে ভবিষ্যতে যন্ত্রটির ঘরোয়া সংস্করণ আনার পরিকল্পনা রয়েছে ‘সায়েন্স কোং’ এর।