Homeআন্তর্জাতিক সংবাদ২৬০ বছরের পুরোনো যে ব্র্যান্ড আমরা আজও প্রতিদিন ব্যবহার করি

২৬০ বছরের পুরোনো যে ব্র্যান্ড আমরা আজও প্রতিদিন ব্যবহার করি

আমাদের মধ্যে অনেকেই বিলাসবহুল সব কলমের সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে জানি। ১৮৮৮ এর উইসকনসিনের পার্কার থেকে ১৮৪৬ এ রোড আইল্যান্ডের ক্রস, ১৯০৬ সালের হ্যামবার্গের মন্ট ব্ল্যাঙ্ক, ইতালীয় স্ট্যালিয়ন মন্টেগ্রাপা, এবং ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সুইস ব্র্যান্ড ক্যারান ডি’আচে শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য কিছু নাম। কিন্তু একটি ব্র্যান্ডের ইতিহাস যা ১৮ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে এবং আজও অব্যাহত রয়েছে- তার নাম ফেবার-ক্যাসেল।

ফেবার ক্যাসেল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কাঠ পেন্সিল উৎপাদনকারী কোম্পানি। ২৬০ বছরের পুরোনো এই ব্র্যান্ড প্রতি বছর ২.৩ বিলিয়ন পেন্সিল তৈরি করে আসছে। পেন্সিল ছাড়াও ফেবার ক্যাসেলের পণ্যের মধ্যে রয়েছে– পেনসিল, কালার পেনসিল, মেকানিক্যাল পেন্সিল, ইরেজার, শার্পনার, মার্কার, বোর্ড মার্কার, ক্রেয়ন, অয়েল প্যাস্টেল, ফাউন্টেন পেন, বলপয়েন্ট পেন, হাইলাইট মার্কার, অঙ্কন সামগ্রী, জ্যামিতিবক্স এবং বিভিন্ন অফিস স্টেশনারি।


সাল ১৭৬১
জার্মানির নুরেমবার্গের উপকন্ঠে স্টেইনের কাছে ক্যাসপার ফেবার নামে ৩১ বছর বয়সী এক ছুতার ছিল।
তিনি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করার জন্য তার বাড়ির ওয়ার্কশপে পেন্সিল তৈরি করতেন। সেই সময়ের অনেক ছুতার, কাঠমিস্ত্রীর মতো ফেবার তার পরিবারকে সাপোর্ট করার জন্য সাইড ব্যবসা হিসাবে পেন্সিল তৈরি করতে শুরু করলেও ক্যাসপার শুধু কোনও সাধারণ ছুতার ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি। তিনি হয়তো জানতেনই যে তিনি এমন একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করছেন যা পরবর্তীতে তার নয় প্রজন্ম দ্বারা পরিচালিত হবে এবং বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থা্ন সৃষ্টি করবে।
ক্যাসপার ফেবার তার ওয়ার্কশপে গ্রাফাইটকে চূর্ণ ও ভাঙার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে করতে ফলাফল দাঁড়ায়- গ্রাফাইটকে পিষে সালফার, অ্যান্টিমনি ও রেজিন ব্যবহার করে গ্রাফাইটটিকে সম্পূর্ণভাবে কাঠের মূল হিসাবে স্থাপন করা হলে তা ভাঙার ঝুঁকি কমে যায়। স্ত্রী মারিয়া ও ছেলে অ্যান্টন উইলহেমকে ক্যাসপার পেন্সিল তৈরি করা শুরু করেন।
১৭৮৪ সালে, ক্যাসপারের ছেলে অ্যান্টন উইলহেম তার বাবার ব্যবসার দায়িত্ব কাঁধে নেন এবং একে A.W.Faber নামে ব্র্যান্ডিং করেন। ফেবার পরিবারের প্রথম প্রজন্ম পেন্সিল তৈরির ব্যবসা থেকে যথেষ্ঠ সফলতা লাভ করলেও, এই কোম্পানির বিজয়ের আসল স্থপতি ক্যাসপারের নাতি, লোথার ফেবার। লোথার একজন নান্দনিক আনন্দের মানুষ ছিলেন। তিনি ফেবার পণ্যের জন্য সুন্দর প্যাকেজিং এবং বিপণনের পাশাপাশি কোম্পানির কর্মীদের এবং তাদের সুস্থতার প্রতিও মনোনিবেশ করেন।


১৯ শতকের শেষের দিকে নুরেমবার্গ বিশ্বের পেন্সিল উৎপাদনের কেন্দ্র হিসাবে বিখ্যাত ছিল যেখানে ২৫টি কারখানা প্রতি বছর প্রায় ২৫০ মিলিয়ন পেন্সিল উৎপাদন করত। AW Faber ছিল এই কারখানাগুলির মধ্যে বৃহত্তম কারখানা যেখানে প্রায় ২০০০ কর্মী কারখানায় এবং ৩০০ জন গৃহ-ভিত্তিক কর্মী কাজ করত।
লোথার তার কর্মীদের থাকার জন্য আবাসন, এলাকায় প্রথম কিন্ডারগার্টেন নির্মাণ এবং একটি গির্জাও তৈরী করে দিয়েছিলেন। ১৮৭৪ সালে, লোথার ফেবার তার ব্র্যান্ডের নাম রক্ষা এবং স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পার্লামেন্টে আবেদন করেন, কারণ তার সাফল্যের কারণে অনেক অনুকরণকারী তার নাম কপি করতে শুরু করে। এই আবেদনের মাধ্যমেই পরের বছর জার্মানিতে ট্রেডমার্ক আইনের গোড়াপত্তন হয়৷
একমাত্র পুরুষ উত্তরাধিকারী লোথারের ছেলে উইলহেম, নিজের মৃত্যুর আগে মারা যাওয়াতে কোম্পানির দায়িত্ব এসে পড়ে নাতনি ওটিলির কাঁধে। ওটিলি বাভারিয়ান পরিবারে কাউন্ট আলেকজান্ডার জু ক্যাসেল-রুডেনহাউসেনকে বিয়ে করেছিলেন।
তাদের বিয়ের পর কাউন্ট আলেকজান্ডার AWFaber এ শেয়ারহোল্ড করলে তার নামের “ক্যাসেল” অংশ জুড়ে দেন ফেবার এর সাথে।
১৯৩২ সালে ফ্যাবার-ক্যাসেল তার সপ্তম প্রজন্মের পরিবারের সদস্য, কাউন্ট আলেকজান্ডারের ছেলে কাউন্ট রোল্যান্ড ভন ফ্যাবার-ক্যাস্টেল দ্বারা পরিচালিত হয়।
ফ্যাবার-ক্যাসেল পরিবার ইতিহাস সমৃদ্ধ সংস্কৃতি গঠনে যে ভূমিকা পালন করেছে, ফ্যাবার-ক্যাসেল না থাকলে ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ, পল ক্লি, অস্কার কোকোসকা, নিও রাউচ এবং কার্ল লেজারফেল্ডের কাজ একই অনুভূতি বা গতিশীল প্যালেটে কি হত? তা হয়তো অনেকেরই অজানা।
বলপয়েন্ট কলমকে ফাউন্টেন পেনের জন্য গুরুতর প্রতিযোগী হিসাবে বিবেচনা করা শুরু হলে AW Faber-Castell প্রথম জার্মান প্রস্তুতকারক হিসেবে বলপয়েন্ট কলমকে নিজেদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯৫০ সালে তারা বিখ্যাত টর্পেডো আকৃতির বলপয়েন্ট কলম চালু করেছিল যা ‘জেন্টেলম্যান’ নামে পরিচিত ছিল।
১৯৫০ সালে, Faber-Castell অসমিয়া কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করে এবং নিজের নামে ফাউন্টেন পেন তৈরি করা শুরু করে।


Faber-Castell-এর সাথে একটি জিনিস যা কখনই পরিবর্তিত হয় না তা হল তাদের পণ্যের গুণগতমান।
কলম এবং পেন্সিল উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী নেতা হওয়ার সাথে সাথে আসে মানুষ এবং পরিবেশের প্রতি একটি বাধ্যবাধকতা এবং প্রতিশ্রুতি। ফেবার ক্যাসেলের বেশির ভাগ পণ্য শিশুরা ব্যবহার করে। ফেবার ক্যাসেল পেনসিলে পরিবেশবান্ধব ওয়াটার বেজড বার্নিশ ব্যবহার করা হয় যা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর নয়। ফেবার ক্যাসেল রঙ পেনসিলে শাকসবজি এবং ফলমূল থেকে সংগৃহীত রঞ্জক কণা ব্যবহার করা হয়। যা বিষমুক্ত হওয়ার কারণে শিশুদের জন্য ক্ষতিকর নয়। এছাড়াও পেনসিলের লিড মজবুত করার জন্য প্রাকৃতিক মোম ব্যবহার করা হয়। ফেবার ক্যাসেল তাদের পণ্যে ব্যবহৃত কাঠ নিজস্ব বাগান থেকে সংগ্রহ করে। ফেবার ক্যাসেল ইরেজারে কখনই শিশুদের ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করা হয় না। ফেবার ক্যাসেল তাদের সব প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যে ফুড গ্রেড প্লাস্টিক ব্যবহার করে, যেটি শিশুদের শরীরের জন্য নিরাপদ।

স্টেইনের কাছে একটি ওয়ার্কশপ থেকে শুরু থেকে পেন্সিল, কলম উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী নেতা – Faber-Castell ২২টি দেশে বিক্রয় কেন্দ্র, ১০টি দেশে কারখানা এবং বিশ্বব্যাপী ৬৫০০ জনের বেশি লোক নিয়োগ করেছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments