সিডস ফর দ্য ফিউচার ২০২৫, বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। তিন মাসব্যাপী যাচাই-বাছাই, প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়নের পর বিজয়ী ৮ জনের নাম প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ১২ জুলাই, ঢাকায় হুয়াওয়ের দক্ষিণ এশিয়ার সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা ও সনদ তুলে দেওয়া হয়েছে। হুয়াওয়ের তরফ থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বিজয়ী ৮ তরুণ আগামী কিছুদিনের মধ্যেই পরবর্তী প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতার পরবর্তী পর্যায়ে অংশ নিতে চীন সফরে যাবেন।
এ বছর প্রায় ৩০০০ আবেদনকারীর জীবন বৃত্তান্ত যাচাই করে ৬০ জনকে বুটক্যাম্পে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বুটক্যাম্পে ব্যবসা উন্নয়ন, ক্লাউড কম্পিউটিং, ডিজিটাল পাওয়ার, ফাইভজি ও এআইয়ের মতো বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণের সুযোগ ছিলো। বুটক্যাম্পের প্রথম ধাপে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর লিখিত পরীক্ষা, উপস্থাপনা ও দলভুক্ত হয়ে কাজ করার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে তাঁদের জ্ঞান, দক্ষতা ও তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়।
এরপর হুয়াওয়ের নিজস্ব এবং আমন্ত্রিত প্রশিক্ষকগণ নির্বাচিত ২১ জন প্রতিযোগীকে আরও বিশদ প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। পরিশেষে তাঁদের এমন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয় যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বৃহত্তর আর্থ-সামাজিক প্রভাব রাখতে পারে। আমন্ত্রিত শিক্ষাবিদ, ইউনেস্কোর সদস্য, সিডস ফর দ্য ফিউচারের প্রাক্তন প্রতিযোগী এবং হুয়াওয়ে বিশেষজ্ঞগণ দলগত উপস্থাপনার উপর ভিত্তি করে শীর্ষ আট বিজয়ীকে নির্বাচন করেন।
বিজয়ীরা হলেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি – বাংলাদেশ-এর সায়েদ আতিফ রায়হান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ফারিসা জায়নাহ জামান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নাফিম করিম খান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বুয়েট)-এর মো. রেজওয়ান উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাসনিয়া ইফফাত, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (রুয়েট)-এর মোঃ সাফিউস সিফাত ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির নুফসাত ফারুক ও ওয়াসিফ উদ্দিন।
হুয়াওয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক লিন হাই উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। প্রতিযোগিতার কৌলশগত সহযোগী ইউনেস্কো’র বাংলাদেশ অফিসের প্রধান ও প্রতিনিধি ড. সুসান ভাইজ প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
হুয়াওয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতা সম্পর্কে লিন হাই বলেন, ‘বাংলাদেশে “সিডস ফর দ্য ফিউচার” -এর মাধ্যমে হুয়াওয়ে প্রতি বছর মেধাবীদের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। এই উদ্যোগটি হুয়াওয়ের “বাংলাদেশে, বাংলাদেশের জন্য” লক্ষ্যের বাস্তব প্রতিফলন, যা এ দেশের মেধাবীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী আইসিটি খাত গড়ে তোলার প্রতি আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। আইসিটি ক্ষেত্রে তরুণদের জন্য আমাদের এধরণের আয়োজন একটি দীর্ঘ বিনিয়োগ। আমরা বিজয়ীদের অভিনন্দন জানাই এবং বিশ্বাস করি, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তারা যে মূল্যবান শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
ড. সুসান ভাইজ বলেন, ‘হুয়াওয়ের “সিডস ফর দ্য ফিউচার” প্রতিযোগিতার কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনে একটি দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করছে। বিজয়ী তরুণ-তরুণীদের দক্ষতা, উৎসাহ ও অঙ্গীকার স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে তারা ভবিষ্যতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাখে। আমি বিশ্বাস করি, এমন মেধাবী তরুণ-তরুণীরাই আগামী দিনের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে নেতৃত্ব দেবে।’
বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ১৪১টি দেশের ১৮ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী হুয়াওয়ের ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ৫০০ টিরও বেশি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এটি পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে ২০১৪ সালে যাত্রা শুরুর পর হুয়াওয়ে এই বছর ১২তম বারের মতো ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের তরুণরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের মূল্যবান দিকনির্দেশনা লাভের সুযোগ পাচ্ছে।