বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠাকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ১৮তম জাতীয় পিঠা উৎসব ২০২৫। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের যৌথ আয়োজনে ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “পিঠা উৎসব যেন কেবলই বিলাসী উৎসব না হয়। এটি এমন একটি আয়োজন হওয়া উচিত, যেখানে সব শ্রেণির মানুষ পিঠার স্বাদ উপভোগ করতে পারে। আমাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এসব ঐতিহ্যবাহী আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম।”
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন,”একসময় গ্রামীণ সমাজে পিঠা উৎসবের প্রচলন ছিল। এখন এটি শহরেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এভাবেই নতুন ঐতিহ্যের সৃষ্টি হয়, যা আমাদের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করে।”
১০ দিনব্যাপী এই উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা প্রায় শতটি স্টলে প্নানা ধরনের পিঠা পরিবেশন করা হচ্ছে। পাটিসাপটা, ভাপা, চিতই, দুধপুলি, নারিকেল পুলি, চাপটি, হাঁসের মাংস পিঠা এবং আরও অসংখ্য মুখরোচক পিঠার স্বাদ নিতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন হাজারো দর্শনার্থী।
পিঠার স্বাদ আর মেলায় ঘুরে বেড়ানোই শুধু নয়, প্রতিদিনই থাকছে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক আয়োজন!
মেলায় অংশ নেওয়া উদ্যোক্তারা বলছেন, এই উৎসব তাদের জন্য শুধু ব্যবসার সুযোগ নয়, বরং বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরার একটি প্ল্যাটফর্ম।
প্রফেশনাল উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি অনেকেই শখের বসেও স্টল বসিয়েছেন এই মেলায়। তাদের মধ্যে একজন কেরানীগঞ্জ থেকে আসা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, “প্রতি বছরই আমি এই পিঠা উৎসবে আসি এবং দেখি, অনেকেই তাদের ঐতিহ্যবাহী পিঠা নিয়ে আসেন। তখন ভাবলাম, আমাদের পরিবারেও তো এমন অনেক পুরনো রেসিপির পিঠা আছে। তাই আমার মা ও খালাদের প্রস্তাব দেই যে আমরা ১০ দিনব্যাপী একটি স্টল নেব। তারা রাজি হন, আর আমরা এবার অংশ নিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি।”
উৎসবে আসা দর্শনার্থীদের অনেকেই শৈশবের স্মৃতির সাথে মিলিয়ে দেখছেন এই পিঠার স্বাদ।
মেলায় আসা দর্শনার্থী সাবিনা ইসলাম বলেন,”শহরে বেড়ে ওঠা আমার সন্তানরা কখনো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠার স্বাদ পায়নি। এই মেলায় এসে তারা প্রথমবারের মতো ভাপা ও চিতই পিঠা খেয়েছে। খুব ভালো লাগছে!”
প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সুযোগ থাকবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিঠার স্বাদ গ্রহণ ও সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নেওয়ার।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই উৎসব পিঠার প্রচলনকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং নতুন প্রজন্মকে বাংলার সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করতে সাহায্য করবে।
হাবিবুর রহমান
উদ্যোক্তা বার্তা