যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় দফা বাণিজ্য সংলাপের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি দেখেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমানো হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণে কমবে। তবে নির্দিষ্ট হার এখনো বলা সম্ভব নয়। আজ এবং আগামীকাল আমাদের আরও বৈঠক রয়েছে। আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক কিছু হবে।’
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সময় তা হয় রাত সাড়ে ৩টা থেকে ভোর সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ।
যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ ৬০টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। পরে ৯ এপ্রিল এ সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গত ৮ জুলাই বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর। নতুন এ শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক পড়ে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ থেকে ২৩ শতাংশ। পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে তা ৩৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
তবে বাংলাদেশ এ শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাণিজ্য সচিব জানান, ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি অবস্থানপত্র পাঠানো হয়েছে। সেই কাগজের ভিত্তিতেই ওয়াশিংটনে তিন দিনের এই আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা দেশটিতে পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিও বাড়াবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৬ বিলিয়ন ডলারের মতো, যা ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক কম। ভিয়েতনামের ঘাটতি ১২৩ বিলিয়ন ডলার। ঘাটতির এই ব্যবধান তুলে ধরেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনুকূল সিদ্ধান্ত চায়। এ ছাড়া আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ আরও পণ্য আমদানি করবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনা, ৫ বছরে প্রতি বছর ৭ লাখ টন করে গম আমদানির সমঝোতা স্মারক, সয়াবিন, এলএনজি, তুলা, সামরিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ।
এ ছাড়া ইউএসটিআরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। যেমন ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের ১৯ শতাংশ, জাপান ও ইইউয়ের ১৫ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ। বাংলাদেশের জন্য এ হার কত হতে পারে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো কঠোর অবস্থানে নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে।’
তৃতীয় দফা এই আলোচনা আগামী বৃহস্পতিবার শেষ হবে। আলোচনা সফল হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
[30/07, 5:32 pm] Uddokta Barta: পার্বত্য তিন জেলায় ‘জুলাই পুনর্জাগরণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও তারুণ্যের উৎসব-২০২৫’ উদযাপিত
ঢাকা, ৩০ জুলাই ২০২৫
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে জুলাই মাসজুড়ে উদযাপিত হয়েছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও তারুণ্যের উৎসব-২০২৫’।
এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল তরুণদের মাঝে ঐতিহাসিক চেতনা জাগ্রত করা, পার্বত্য অঞ্চলের সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং ক্রীড়ার মাধ্যমে যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা।
উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘জুলাই পুনর্জাগরণ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্ট। পুরো জুলাই মাসজুড়ে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান এই তিনটি জেলায় তিনটি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি জেলার বিভিন্ন যুব দল এতে অংশগ্রহণ করে, যা স্থানীয় তরুণদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। ফুটবল খেলা কেবল প্রতিযোগিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি পরিণত হয় এক প্রাণবন্ত তারুণ্যের উৎসবে, যেখানে ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও সামাজিক সম্প্রীতির মিলন ঘটে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা জুলাই পুনর্জাগরণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও তারুণ্যের উৎসবে তাঁর মতামত ব্যক্ত করে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল বাঙালির আত্মপরিচয়, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মাইলফলক। অভ্যুত্থানে শহিদদের আত্মত্যাগ জাতিকে চিরদিন প্রেরণা জোগাবে। বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাসে আলোচিত এই ‘জুলাই পুনর্জাগরণ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষ্যে পার্বত্য তিন জেলায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচ আয়োজকদের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
টুর্নামেন্টের ফাইনাল পর্বে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা। তাঁরা নিজ নিজ জেলার টুর্নামেন্ট পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং তরুণদের উৎসাহিত করতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন।
এই উৎসব ও টুর্নামেন্টগুলোতে স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। রিজিয়ন কমান্ডার সদর রিজিয়ন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা উৎসবের বিভিন্ন পর্বে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের উপস্থিতি পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের বার্তা বহন করে।
পুরো আয়োজন উপভোগ করেন তিন জেলার প্রায় পঞ্চাশ হাজার নারী-পুরুষ দর্শক, যারা মাঠে উপস্থিত থেকে খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেন এবং উৎসবের আনন্দে সামিল হন। এই বিপুল সংখ্যক দর্শকের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে, পার্বত্য অঞ্চলের জনগণ ক্রীড়া ও সংস্কৃতির প্রতি কতটা আগ্রহী এবং ঐক্যবদ্ধ।
‘জুলাই পুনর্জাগরণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও তারুণ্যের উৎসব-২০২৫’ পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও তরুণ প্রজন্মের শক্তিকে একত্রিত করে একটি অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে। এই আয়োজন ভবিষ্যতে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন, শান্তি ও সম্প্রীতির পথে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
মো. রেজুয়ান খান, জনসংযোগ কর্মকর্তা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ০১৮২৫৮৯৭৮১৮