দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণখেলাপি, জ্বালানি সংকট ও আর্থিক অনিয়মের কারণে শিল্প ও বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে কাঠামোগত সংস্কার এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।
শনিবার (২৮ জুন)ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাতের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ: ঋণগ্রহীতার দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেন, শুধুমাত্র সংকট চিহ্নিত করলেই চলবে না, কার্যকর সংস্কারের মাধ্যমে আস্থা পুনরুদ্ধার করাই এখন সময়ের দাবি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ইজাজুল ইসলাম। ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “ঋণখেলাপির জন্য শুধু ঋণগ্রহীতা নয়, ঋণদাতারাও সমানভাবে দায়ী। আনুষ্ঠানিক খাতকে সুরক্ষা না দিলে অর্থনীতির ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে।” বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. ইজাজুল ইসলাম বলেন, “অতীতে আর্থিক খাত সীমিত গোষ্ঠীর মধ্যে কেন্দ্রীভূত থাকায় স্বচ্ছতা বিঘ্নিত হয়। তবে সাম্প্রতিক সংস্কার ও বাজারভিত্তিক নীতির কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা ফিরছে।” ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, “বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪.২ লাখ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৪ শতাংশের বেশি। এটি আর্থিক খাতের অদক্ষ ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন এবং বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।” তিনি আরও বলেন, “এসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ ৭.৫ শতাংশে নেমে এসেছে এবং ১০ শতাংশেরও বেশি মুদ্রাস্ফীতির কারণে উদ্যোক্তারা চরম চাপে রয়েছেন। স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সমন্বিত কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।”
মূল প্রবন্ধে ডিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, “টাকার অবমূল্যায়ন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আমদানি বিধিনিষেধ, জ্বালানি ঘাটতি ও উচ্চ সুদের হার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করছে। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে শিল্প উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব হতো।” তিনি জানান, ব্যাংক সুদের হার ১৪ শতাংশ হওয়ায় বেসরকারি খাতকে বছরে ১.৩৯ ট্রিলিয়ন টাকা অতিরিক্ত সুদ বহন করতে হচ্ছে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউল হাসান, এবং র্যাংগস মোটরস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানা রউফ চৌধুরী।





