Homeলোটো'র ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে নতুন কারখানা স্থাপন

লোটো’র ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে নতুন কারখানা স্থাপন

 

২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় লোটোর। শুরুতে সাবকন্ট্রাকটিং (ঠিকায় কাজ) ভিত্তিতে অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য জুতা বানাত তারা। ২০১১ সাল থেকে লাইসেন্স চুক্তির মাধ্যমে দেশেই ইতালির লোটো ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরি ও বিপণন করছে তারা। শুধু চামড়াজাত পণ্য নয়, তৈরি পোশাক খাতেও প্রবেশ করেছে এক্সপ্রেস লেদার। ২০১৯ সাল থেকে তারা ব্রিটিশ কোম্পানি লি-কুপারের হয়ে পোশাক তৈরি করছে। পাশাপাশি রয়েছে নিজস্ব পোশাক ব্র্যান্ড ‘দ্য এক্সপ্রেস’। বর্তমানে ইতালি, স্পেনসহ কয়েকটি দেশে সীমিত আকারে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে তাদের।

প্রায় দেড় যুগ আগে গাজীপুরের টঙ্গীতে ১০ হাজার বর্গফুটের ছোট্ট একটি কারখানায় জুতা তৈরি শুরু করেছিল দেশিয় প্রতিষ্ঠান এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্টস। যেটি লোটো বাংলাদেশ নামেই বেশি পরিচিত। সে সময় পুঁজি ছিল ১৫ লাখ টাকা ও কর্মী মাত্র ৩৫ জন। সেই প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে বড় হয়েছে। এখন ৯০ হাজার বর্গফুট জায়গায় পণ্য তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি; আর সেখানে কাজ করছেন দুই হাজার মানুষ।

২০১২ সালে রাজধানীর উত্তরায় প্রথম আউটলেট বা বিক্রয়কেন্দ্র দিয়েছিল এক্সপ্রেস লেদার। বর্তমানে সারা দেশে প্রতিষ্ঠানটির ২২০টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কোম্পানিটি আরও দুই শতাধিক নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র, ২০০ ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং ৫ হাজারের বেশি সরবরাহকারী বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বর্তমানে পণ্য বিক্রি করে বছরে সব মিলিয়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি আয় করছে লোটো। নতুন কারখানা চালু হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের আয় ৮০০ কোটি টাকা ছাড়াবে। নতুন এই কারখানায় এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানির পথও সুগম হবে।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী জামিল ইসলাম, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের প্রধান নির্বাহী নাজিত মিওয়ানাগ, ব্র্যাক ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) তারেক রেফাত উল্লাহ খান, প্রাইম ব্যাংকের এএমডি ফয়সাল রহমান, গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার চৌধুরী মোহাম্মদ জাবের সাদিক, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান প্রমুখ।

নিজেদের পণ্য উৎপাদন ও বিপণনকে আরও বিস্তৃত করতে এবার নতুন বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে এক্সপ্রেস লেদার। সে জন্য কাপাসিয়ায় প্রায় ২৫ বিঘা জায়গায় একটি শিল্প পার্ক গড়ে তুলছে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে প্রায় আড়াই লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে।

কারখানাটিতে জুতা, তৈরি পোশাক ও বিভিন্ন ধরনের উপকরণ (অ্যাকসেসরিজ) তৈরির তিনটি পৃথক উৎপাদন লাইন থাকবে। এই প্রকল্পে মোট বিনিয়োগ করা হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। আগামী দুই বছরের মধ্যে নতুন কারখানাটি উৎপাদনে আসবে বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে ১৮ কোটি মানুষের জন্যই জুতা প্রয়োজন হয়। এটি অনেক বড় বাজার। যদিও দেশে জুতার বাজার নিয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বিভিন্ন জরিপ থেকে অনুমান করা হয়, স্থানীয় জুতার বার্ষিক বাজার ২২ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ আসে ব্র্যান্ডের জুতা থেকে। শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এপেক্স, বাটা ও লোটো। এ ছাড়া বছরে প্রায় ১১১ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি হয়।

বর্তমানে টঙ্গীর কারখানায় প্রতি মাসে আট লাখ জোড়া চামড়ার জুতা, স্যান্ডেল ও স্লিপার তৈরি হয়। এ ছাড়া চামড়ার ব্যাগ, ওয়ালেট ও বেল্ট, স্কুল ব্যাগ ও ব্যাকপ্যাক এবং ইনসোল ও মোজার মতো বিভিন্ন উপকরণ তৈরি হচ্ছে। নতুন কারখানায় এ উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বাড়তে পারে বলে আশা প্রতিষ্ঠানটির।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে চীনা একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে এক্সপ্রেস লেদার। ওই চীনা প্রতিষ্ঠান জুতা তৈরিতে তাদের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সেবা দেবে।

এ ছাড়া একই অনুষ্ঠানে ‘সুপার লাইট’ নামের নতুন মডেলের জুতার উদ্বোধন করা হয়, শিগগিরই এটি বাজারে আসবে।

এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্টসের এমডি কাজী জামিল ইসলাম বলেন, টাকার অবমূল্যায়ন ও ডলার–সংকটের কারণে গত দু-তিন বছরে উৎপাদন ব্যয় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে এই সময়ে বেশ কিছু নতুন যন্ত্র আমদানি করে দেশে উৎপাদন দক্ষতা বাড়িয়েছে এক্সপ্রেস লেদার। এ কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও পণ্যের দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।ে

কাজী জামিল ইসলাম আরও বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন। আমরা প্রধানত স্থানীয় বাজারের জন্য পণ্য তৈরি করি। ফলে রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো প্রণোদনা পাই না। এ ক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে নীতি সহায়তা পেলে আমরা আরও সামনে গিয়ে যেতে পারব।’

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments