বিশ্বের বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতিদের তালিকায় তার স্থান ১৩তম।
এনভিডিয়া একটি সফ্টওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারী সংস্থা, যা গ্রাফিক প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ), অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই), মোবাইল কম্পিউটিং এবং সিস্টেম অন চিপ ইউনিট (এসওসি) তৈরি করে এবং বিক্রি করে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) বাজারে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার তৈরিতে একচেটিয়া ব্যবসা করছে এনভিডিয়া। বিশ্ববাজারে এআইয়ের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেসরের মূল উৎস এখন এই প্রতিষ্ঠান।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানির তালিকায় প্রথম অবস্থান দখল করেছে চিপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া। এই অবস্থানে আসতে তাদের পেছনে ফেলতে হয়েছে টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট ও অ্যাপলের মতো কোম্পানিকে। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং।
১৯৬৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাইওয়ানের তাইনানে জেনসেনের জন্ম। দু’ভাই এর মধ্যে জেনসেন ছোট। জেনসেনের যখন পাঁচ বছর বয়স, তখন তাঁর পরিবার থাইল্যান্ডে চলে যায়। ভিয়েতনামে যুদ্ধের সময় ন’বছর বয়সে উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁকে ও তার ভাইকে আমেরিকার ওয়াশিংটনের টাকোমায় এক চাচার কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মা-বাবা।
যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরপর কেন্টাকির এক বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করা হয় জেনসেন ও তাঁর ভাইকে। সেই স্কুলটি ছিল এক ধরনের সংশোধনমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে সমস্যাগ্রস্ত কিশোরদের পাঠানো হতো। যদিও বিষয়টি তার অভিভাবকরা জানতেন না। সেই বোর্ডিং স্কুলে ক্লাসের পর প্রতিদিন জেনসেনকে ছেলেদের বাথরুম পরিষ্কার করার দায়িত্ব দেয়া হতো। আর জেনসেনের বড় ভাই তামাক কারখানায় কাজ করতেন।
বছর ২ পরে জেনসেনের মা-বাবা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালে ছেলেদের এই অবস্থার কথা জানতে পেরে তাদের ঐ বোর্ডিং স্কুল থেকে বের করে নিয়ে আসেন এবং ওরেগনের অ্যালোহা হাই স্কুলে ভর্তি করে দেন। অ্যালোহা থেকে স্কুল পাশ করার পর একপর্যায়ে তিনি ডেনি নামক এক রেস্টুরেন্টের ওয়েটার হিসেবেও কাজ করেন। এ কাজ তার লজ্জা ও জড়তা কাটাতে সহায়তা করেছে বলে একসময় উল্লেখ করেন তিনি।
১৯৮৪ সালে ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পাশ করেন জেনসেন। ১৯৯২ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে জেনসেন এলএসআই লজিকের কোরওয়্যারের ডিরেক্টর হিসাবে যোগ দেন।
বছরখানেক সংস্থায় চাকরির পর ১৯৯৩ সালে ক্রিস মালাচোস্কি এবং কার্টিস প্রিমের সঙ্গে এনভিডিয়া তৈরি করেন জেনসেন। এনভিডিয়ার সিইও এবং প্রেসিডেন্টও নিযুক্ত হন তিনি। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ৩০। ২০০৭ সালে তাঁর বার্ষিক বেতন ছিল ২৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। ফলে ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৬১তম সর্বোচ্চ বেতনভোগী সিইও হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
এনভিডিয়া বহুদিন গেমিং কনসোলের চিপ তৈরি করেছে। এই চিপ গেমের ভারী গ্রাফিকস নিয়ন্ত্রণে কাজ করত; কিন্তু কয়েক বছর আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা গবেষকেরা গেমের জন্য বিশেষায়িত চিপগুলো দিয়ে শক্তিশালী সব অ্যালগরিদম পরিচালনা করা শুরু করেন। এতেই খেলা ঘুরে যায়।
এখন তিনি বৈশ্বিক বিলিয়নেয়ার বা শতকোটিপতির তালিকায় ১৩তম স্থানে উঠে এসেছেন। অবশ্য গত শনিবার জেনসেন হুয়াংয়ের সম্পদমূল্য কমেছে ৩.৬ বিলিয়ন বা ৩৬০ কোটি ডলার। আগের দিন শুক্রবার তিনি ছিলেন বিশ্বের ১১তম শীর্ষ ধনী। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, জেনসেনের বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ এখন প্রায় ১১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।
এনভিডিয়ার সিইও কোম্পানির ইভেন্ট এবং সাক্ষাত্কারের সময় কালো চামড়ার জ্যাকেট পরেন। বছরের পর বছর ধরে এই সিগনেচার লুকের জন্য পরিচিত।