Homeযুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ বোয়িং বিমান কিনবে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ বোয়িং বিমান কিনবে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বোয়িং কোম্পানির ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

রোববার বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িং থেকে ২৫টি বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ এর আগে, বাংলাদেশ বোয়িং কোম্পানি থেকে ১৪টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এবার উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে বলে বাণিজ্য সচিব নিশ্চিত করেন।

গত সপ্তাহে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ ১৪টি বোয়িং উড়োজাহাজ এবং প্রায় ৩ লাখ টন গম আমদানির পরিকল্পনা করেছে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, শুল্ক চুক্তির খসড়া পাওয়ার পর কয়েক দফায় আমরা কাজ করেছি। ওয়াশিংটনে দুই দফা সরাসরি এবং অনলাইনে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২৩ জুলাই আমরা আমাদের চূড়ান্ত অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সময় চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) অফিসে ২৯ ও ৩০ জুলাই সরাসরি বৈঠক হবে। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও বাণিজ্য সচিব উপস্থিত থাকবেন। ৩১ তারিখও একটি সভা হতে পারে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল আগামীকাল সন্ধ্যায় রওনা দেবে। যেহেতু তাদের সাথে আলোচনা চলছে ১ আগস্টের মধ্যেই হয়তো শুল্কের বিষয়ে ফলাফল হয়ে যাবে।’

বোয়িং বিমান কেনার ব্যাপারে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘বোয়িংয়ের ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্র সরকার নয়, বোয়িং কোম্পানি করে। বাংলাদেশ বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছে। ভারত, ভিয়েতনাম ১০০টি করে অর্ডার দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া দিয়েছে ৫০টি। এরকম অর্ডার বিভিন্ন দেশ দিয়েছে। বোয়িং কোম্পানি তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সরবরাহ করবে। অর্ডারের বোয়িং পেতে অনেক সময় লাগবে। যাকে আগে অর্ডার দিয়েছে তাদের আগে দেবে কিংবা প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যবসার ধরন অনুযায়ী বিমান সরবরাহ করবে।’

‘বাংলাদেশের অতি দ্রুত কিছু বোয়িং দরকার। আগামী দু-এক বছরের মধ্যে হয়ত কিছু বিমান পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ বিমানের বহর বাড়াতে হবে। এই পরিকল্পনা সরকারের আগে থেকেই ছিল। আগে ১৪টি বোয়িংয়ের অর্ডার ছিল। রেসিপ্রোকাল ইস্যুতে ২৫টি করা হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার, হ্যাঙ্গার বোয়িং নির্ভর। তাই বোয়িং কিনতে হবে। পাশাপাশি এয়ারবাস বা অন্যান্য বিমান যে কিনব না, তেমন নয়। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকেই কেনা হবে সেটি বলা হয়নি।’

গম আমদানির প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান জানান, সরকারি ও বেসরকারি খাতে বছরে প্রায় ৯ মিলিয়ন টন গম আমদানি করা হয়। কখনোই একটি দেশ থেকে পুরোটা আনা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আমদানি হতো। এখন রেড সি [লোহিত সাগর] এলাকায় পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা আগের মতো নেই। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার ওপর নির্ভরশীলতা রাষ্ট্রীয় স্বার্থেই প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘রাশিয়া, ইউক্রেন থেকে গম আনা হয়। কিন্তু তারা আমাদের কাছ থেকে নেয় না। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৮ বিলিয়ন কেনে। যারা আমার কাছ থেকে কেনে, সুতরাং তার কাছ থেকেও আমাদের কেনা উচিৎ। আমাদের একটু অগ্রসর হওয়া উচিৎ। বেসরকারি খাতকে অনুরোধ করেছি সেখান থেকে কিনে শুল্ক ইস্যুতে সহায়তার জন্য।’

তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে সয়াবিন ও তুলা আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সয়াবিন আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। তুলা আমদানি নিয়ে আগেই আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির মধ্যে বিনিয়োগের বিষয় থাকলেও সেটিকে মুখ্য বিষয় মনে করছেন না বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতি ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। তাদের উদ্দেশ্য এই বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, সেজন্যই রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির কারণে বাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘সুবিধা আছে বলেই যুক্তরাষ্ট্র থেকেই বিভিন্ন জিনিস আমদানি করা হয়। অসুবিধা থাকলে ব্যবসায়ীরা আনতো না। সরকার কাউকে চাপ দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন জিনিস কেনার প্রভাব বাজারে পড়বে না।’

চীন থেকে উৎপাদন স্থানান্তরের বিষয় উল্লেখ করে সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপের কারণে চীনের ওপর প্রভাব বেশি পড়ছে। উৎপাদন অন্যত্র স্থানান্তরের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশও সুযোগ নিতে পারে।

তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি শুল্কের শিকার হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম বা ভারতের মতোই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ—এমনটাই প্রত্যাশা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments