প্রজেক্ট কুইপার’ (Project Kuiper) উদ্যোগের আওতায় প্রথম ২৭টি স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটগুলো উৎক্ষেপণ করা হয়। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে অ্যামাজন এবার সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করল ইলন মাস্কের স্টারলিংকের সঙ্গে।
২০১৯ সালে ১ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের প্রকল্প কুইপার ঘোষণা দেয় অ্যামাজন। এই প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ২৩৬টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। আর গতকাল উৎক্ষেপণ করা ২৭টি স্যাটেলাইট হলো এই প্রকল্পের প্রথম ব্যাচ। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো—আমাজন গ্রাহক, ব্যবসা এবং সরকারদের জন্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো।
বোয়িং ও লকহেড মার্টিনের যৌথ উদ্যোগ, ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স (ইউএলএ), তাদের ‘অ্যাটলাস ভি’ রকেটের মাধ্যমে ২৭টি কুইপার স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে। এই উৎক্ষেপণটি গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৭টায় সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এর আগে, ৯ এপ্রিল খারাপ আবহাওয়ার কারণে উৎক্ষেপণটি স্থগিত করা হয়েছিল।
এই উৎক্ষেপণ অ্যামাজনের জন্য একটি বৃহৎ প্রযুক্তিগত মাইলফলক, যা স্টারলিংক ছাড়াও টেলিযোগাযোগ কোম্পানি যেমন AT&T এবং T-Mobile-এর সাথেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। কুইপার প্রকল্পের মাধ্যমে অ্যামাজন আশা করছে, গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছিয়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
এক বছর আগে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের এই মিশন পিছিয়ে যায়। ২০২৪ সালের শুরুতে প্রথম ব্যাচ উৎক্ষেপণ করতে পারবে বলে আশা করেছিল অ্যামাজন। এদিকে উৎক্ষেপণের জন্য একটি নির্ধারিত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন। এই সময়সীমা অনুযায়ী, অ্যামাজনকে ২০২৬ সালের মধ্যেই তাদের কনস্টেলেশনের অর্ধেক, অর্থাৎ ১ হাজার ৬১৮টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে হবে।
অ্যামাজন জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের কয়েক ঘণ্টা বা এক-দুই দিনের মধ্যেই ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে অবস্থিত মিশন অপারেশন সেন্টার থেকে প্রতিটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে সফল যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে চলতি বছরই সাধারণ গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেট সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
এর আগে ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স -ইউএলএর প্রধান নির্বাহী টরি ব্রুনো জানান, তারা এ বছর আরও পাঁচটি কুইপার উৎক্ষেপণ মিশন চালাতে পারে। এর আগে ২০২০ সালের আমাজনের এক নথি থেকে জানা যায়, ৫৭৮টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের কিছু অঞ্চলে সেবা চালু করতে পারবে কোম্পানিটি এবং ধীরে ধীরে আরও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পৃথিবীর বিষুবরেখার দিকে নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ করবে।
ওয়েব সার্ভিস ও ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজনের প্রকল্প ‘কুইপার’ বড় ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদক্ষেপ। স্পেসএক্স-নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দেরিতে প্রবেশ করলেও আমাজনের শীর্ষ কর্মকর্তারা মনে করছেন, কোম্পানির গ্রাহক পণ্য তৈরিতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও প্রতিষ্ঠিত ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসা তাদের স্টারলিংকের তুলনায় বাড়তি সুবিধা দেবে।
সূত্রঃ রয়টার্স