বিশ্বের প্রথম কোম্পানি হিসেবে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার তথা ৪ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া। স্থানীয় সময় বুধবার এই মাইলফলক অর্জন করে কোম্পানিটি। মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির চাহিদা বাড়তে থাকায় এই কোম্পানির শেয়ারদরও বেশ বেড়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (৯ জুলাই) এনভিডিয়ার শেয়ারদর ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে সর্বোচ্চ ১৬৪ ডলারে পৌঁছে। দিনের শেষে ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে শেয়ারদর দাঁড়ায় ১৬২ ডলারের কাছাকাছি। এতে কোম্পানির বাজারমূল্য হয় ৩ দশমিক ৯৭ ট্রিলিয়ন ডলার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনভিডিয়ার বাজারমূল্য যেভাবে দ্রুত বাড়ছে, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে ওয়াল স্ট্রিটের আস্থা কতটা দৃঢ়। বিশেষ করে, এই কোম্পানির তৈরি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চিপগুলোই এখন এআই প্রযুক্তির প্রধান চালিকাশক্তি। নিউইয়র্কের আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডাকোটা ওয়েলথের সিনিয়র পোর্টফোলিও ম্যানেজার রবার্ট প্যাভলিক বলেন, ‘এই অর্জন দেখায় যে, কোম্পানিগুলো এখন এআইমুখী সম্পদ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, এবং এটিই ভবিষ্যতের প্রযুক্তি।’
বছরের শুরুতে এনভিডিয়ার শেয়ারদর কিছুটা ধীরে বাড়লেও, সম্প্রতি চীনের ডিসকাউন্ট এআই মডেলগুলোর উত্থান নতুন করে এই খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা জোরদার করেছে।
এর আগে ২০২৩ সালের জুনে এনভিডিয়া প্রথমবারের মতো ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্যে পৌঁছায়। কিন্তু মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সেই বাজারমূল্য তিনগুণ হয়ে ৪ ট্রিলিয়নে পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধির গতি অ্যাপল ও মাইক্রোসফটের থেকেও দ্রুত। উল্লেখ্য, অ্যাপল ও মাইক্রোসফটই এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র কোম্পানি, যাদের বাজারমূল্য ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি।
মাইক্রোসফট বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি। এর বাজারমূল্য ৩.৭৪ ট্রিলিয়ন ডলার। বুধবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ১.৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৫০৩.৫১ ডলারে।
অন্যদিকে, চলতি বছরের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে বিশ্ববাজারে ধাক্কা লাগলেও, তারপর থেকে এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম প্রায় ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক অংশীদারদের সমঝোতার আশায় শেয়ারবাজার আবার চাঙা হয়েছে। এর প্রভাবে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই সূচকে এনভিডিয়ার অবদান ৭.৩ শতাংশ, যেখানে অ্যাপল ও মাইক্রোসফটের অবদান যথাক্রমে ৭ ও ৬ শতাংশ।
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ গ্রুপের (এলএসইজি) তথ্য বলছে, এনভিডিয়ার বাজারমূল্য এখন এতটাই বেড়েছে যে, তা কানাডা ও মেক্সিকোর পুরো শেয়ারবাজারের সম্মিলিত মূল্যকেও ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি যুক্তরাজ্যের সব তালিকাভুক্ত কোম্পানির মোট বাজারমূল্যের চেয়েও বেশি।
যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে এনভিডিয়ার চিপের আধিপত্য অটল, তবে অ্যামাজন, মাইক্রোসফট ও অ্যালফাবেটের মতো বড় ক্রেতারা এখন বিনিয়োগকারীদের চাপে আছে। তাদের বলা হচ্ছে, এআই খাতে খরচ কিছুটা কমাতে। পাশাপাশি, অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেস (এএমডি) ও অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা তুলনামূলক কম দামের প্রসেসর বাজারে এনে এনভিডিয়ার অংশীদারিতে ভাগ বসানোর চেষ্টা করছে।
এনভিডিয়া জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের আয় হয়েছে ৪৪.১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৪৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের প্রত্যাশা করছে, তবে এই অঙ্ক ২ শতাংশ কম-বেশি হতে পারে। আগামী ২৭ আগস্ট এনভিডিয়া তাদের দ্বিতীয় প্রান্তিকের ফলাফল প্রকাশ করবে।