খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার বিহার টিলা গ্রামে ঢালু এক পাহাড়ের গায়ে সারি সারি সবুজ গাছ। সেই গাছে ঝুলে আছে থোকায় থোকায় লাল আর হলুদ রঙের ফল। দূর থেকে দেখে অনেকেই ভাবতে পারেন—লিচু বুঝি! কাছে যেতেই চোখ ধাঁধানো এক বিদেশি ফল, নাম তার রাম্বুটান।
এই রঙিন ফল এখন শুধু চোখ নয়, জাগিয়ে তুলছে পাহাড়ি মানুষের নতুন স্বপ্নও। আর এই স্বপ্ন বুনেছেন এক চিকিৎসক—ডা. আকেইপ্রু চৌধুরী।
২০২১ সালের কথা। চিকিৎসকের পেশাগত জীবনের বাইরে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড আর ফিলিপাইন ভ্রমণে গিয়েছিলেন ডা. আকেইপ্রু। সেখানেই প্রথম দেখা রাম্বুটানের সঙ্গে। তখনই মনে হলো—এই ফল যদি নিজের দেশের মাটিতে চাষ করা যায়?
সেই ভাবনা থেকেই শুরু। বিদেশ থেকে কিছু চারা আনলেন। কলম করলেন। রোপণ করলেন বাড়ির পাশের এক টুকরো পতিত ঢালু জমিতে। প্রথমে ২২০টি চারা রোপণ করেছিলেন। চার বছর পেরিয়ে এখন ১৮০টি গাছেই ঝুলছে রাম্বুটান—ঝাঁকে ঝাঁকে।
গাছ থেকে একটি ফল ছিঁড়ে মুখে দিলে বোঝা যায়—এ শুধু দেখতে সুন্দর নয়, ভেতরটাও সুস্বাদু। মিষ্টি, রসালো এবং একদম ভিন্ন স্বাদের।
এই ফলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখে আরও ১০ একর জমিতে চারা রোপণের পরিকল্পনা নিয়েছেন ডা. আকেইপ্রু। তাঁর ভাষায়, শুধু পরিবারের পুষ্টির জন্য শুরু করেছিলাম, এখন দেখি পাহাড়ের অর্থনীতির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে বিষয়টা।
তাঁর বাগানে রয়েছে পাঁচটি ভিনদেশি জাত—ইন্দোনেশিয়ান ‘বিনজাই’, থাই ‘রংবিয়ান’, ফিলিপাইনের ‘কুইজন’, মালয়েশিয়ার ‘স্কুল বয়’ (আনাক সেকুলা) এবং ভারতের ‘এন-১৮’। এত বৈচিত্র্যপূর্ণ জাতের সংগ্রহ দেশের আর কোথাও নেই।
রাম্বুটান চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা—পরিচর্যায় কম খরচ। কীটনাশক লাগে না, সারও খুব কম। শুধু নিয়মিত সেচই যথেষ্ট। অথচ বাজারে প্রতি কেজির দাম প্রায় ১,৪০০ টাকা, আর সুপারশপে তো পৌঁছে যায় আড়াই হাজারেও।
এই সফল উদ্যোগ দেখে আশপাশের অনেক তরুণও এখন ভাবছেন রাম্বুটান চাষের কথা। স্থানীয় তরুণ সুনীল চাকমা বলেন, আমাদের যে জমি এতদিন অনাবাদি ছিল, এখন মনে হচ্ছে সেগুলোও সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মালেক বলছেন, পাহাড়ি অঞ্চলের মাটি, জলবায়ু ও সূর্যের আলো—সবকিছু মিলে রাম্বুটান চাষের আদর্শ পরিবেশ। এই ফল হতে পারে পাহাড়ি কৃষির নতুন ভিত্তি।