লেস কাট বা নাইফ স্পটের (মাংস থেকে চামড়া ছাড়ানোর সময় চামড়ায় ছুরির খোঁচা) কারণে, সময়মত চামড়ায় লবণ না দেয়া ও অযত্নের কারণেও নষ্ট হয়ে যায় অনেক চামড়া। তখন আর চামড়া বিক্রি বা অন্য কাজে ব্যবহার করা যায় না। ফলে তার আর কোন বাণিজ্যিক মূল্য থাকে না।আর সামান্য এ ভুলে কারণে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়ে যায়।
তাই চামড়াকে ভাল রাখতে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা পরামর্শ দিয়ে বলছেন, চামড়া ছাড়ানোর সময় যেন সরু মাথাযুক্ত বা চোখা ছুরি ও অতিরিক্ত ধারালো ছুরি ব্যবহার না করা হয়। তুলনামূলক কিছুটা ভোঁতা বা বাঁকানো মাথার ছুরি ব্যবহার করাই উত্তম বলে মনে করেন তারা।
বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কোরবানীর সময় সঠিক ছুরি না ব্যবহারের কারণে প্রায় ৩৩০ কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়ে যায় বলে জানা গেছে।
কোরবানিতে যারা নিজেরাই এবার পশুর মাংস কাটাকাটি করবেন তাদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ।
তিনি বলেন, কোরবানি ছাড়াও সারাবছর আমরা চামড়া কিনে থাকি। কিন্তু দেখা যায় লেস কাট বা নাইফ স্পটের কারণে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ চামড়ায় নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে বিদেশে চামড়া রপ্তানি করা যাচ্ছে না। তাই যেসব ছুরির মাথা ভোঁতা সেগুলো দিয়ে গরুর চামড়া ছাড়ানো উচিত।
ধারালো ছুরি ব্যবহার করা কোনভাবেই ঠিক হবে না পরামর্শ দিয়ে এই চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, চামড়াতে ছুরির মাথা লেগে গেলে ওই চামড়া নষ্ট হয়ে যায় এবং এর মান নষ্ট হয়। ফলে এসব চামড়া কোনো কাজে লাগানো যায় না। বিদেশেও রপ্তানি করা যায় না।
‘তবে গত কয়েক বছর ধরেই গরমের সিজনে কোরবানির ঈদ হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত গরমের কারণে চামড়া নষ্ট হচ্ছে। তাই সময়মতো লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণ না করা হলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, পর্যাপ্ত লবণের অভাবে যেসব চামড়া নষ্ট হবে সেগুলো কোনোভাবেই কেনা হবে না।’
সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, সঠিকভাবে সঠিক সময়ে চামড়া লবণ না দেওয়ার কারনে গত বছর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। এটি দেশের ক্ষতি। এবারও আমরা চামড়ায় সময় মত লবণ না দেওয়ার কারণে চামড়া নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করছি। এই জন্যই আমরা মনে করি, সরকারের উচিত প্রত্যেক জেলায় জেলায় চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া আমরা কয়েক বছর আগে এভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম।
কোরবানি ঈদের সময় লেস কাটের কারণে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যায় তবে অফ সিজনে অর্থাৎ বছরের অন্যান্য সময়ে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ চামড়া এ কারণে নষ্ট হয়ে যায় বলে জানা তিনি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ। এ বছর ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। যেখানে গত বছর কোরবানি হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ পশু।
এবারের কোরবানিতে গত বছরের ন্যায় গরুর কাঁচা চামড়া প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিবারের মতো এবারো কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় বাজার দর বিবেচনায় রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খাসির কাঁচা চামড়ার মূল্য সারা দেশে ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির কাঁচা চামড়ার মূল্য হবে সারা দেশে ১৩ থেকে ১৫ টাকা।
মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার প্রায় ৮০ ভাগ চামড়া কোরবানির পশু থেকে সংগ্রহ করা হয়। কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন, যাতে চামড়ার কোন ক্ষতি না হয়। কোরবানির সময় অসর্তকতা বা না-জানার কারণে বছরে প্রায় ৩৩০ কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়। টেকসইভাবে পশুর চামড়া আহরণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি।
খাদিজা ইসলাম স্বপ্না