Homeক্ষুদ্র শিল্পদেশের ৩০টি প্রতিষ্ঠান পেল ‘পরিবেশবান্ধব কারখানা’ পুরস্কার

দেশের ৩০টি প্রতিষ্ঠান পেল ‘পরিবেশবান্ধব কারখানা’ পুরস্কার

একটি দেশ যখন শুধু উৎপাদনের দিকে ছুটে চলে, তখন তার পেছনে পড়ে থাকে ধোঁয়া, ধুলো আর ক্লান্ত প্রকৃতি। কিন্তু বাংলাদেশ দেখিয়ে দিল, উৎপাদন মানেই পরিবেশ ধ্বংস নয়—দায়িত্বের সঙ্গে, সচেতনতার সঙ্গে গড়া যায় এমন কারখানা, যেগুলো পরিবেশবান্ধব, কর্মবান্ধব এবং ভবিষ্যতবান্ধব।

এমনই ৩০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পেল গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫—একটি সম্মাননা যা শুধু একটি ট্রফি বা সনদ নয়, শুধু অর্জন নয়, একটি ঘোষণা—শিল্পের অগ্রযাত্রা হতে পারে সবুজ পথ ধরে, ভবিষ্যতের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে।

আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন), রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হয় বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের হাতে। উপস্থিত ছিলেন দেশের নীতিনির্ধারণী স্তরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা—শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড নীতিমালা-২০২০’ অনুসারে ১৬টি খাত থেকে বাছাই করা হয় ৩০টি প্রতিষ্ঠান—যারা শিল্প খাতে পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনের নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে। কেউ তৈরি পোশাকের জগতে, কেউ ইলেকট্রনিকস কিংবা সিরামিকে—তবে সকলেই এক কাতারে এসেছেন ‘সবুজ’ পদচিহ্ন রেখে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চরকা টেক্সটাইল ও হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো, ওয়ালটন, ফেয়ার ইলেকট্রনিকস, স্কয়ার ফ্যাশন, আকিজ, এসকেএফ ফার্মা, বিএসআরএম—তালিকাটা বড়, গর্বেরও বড়। তাদের কারখানায় শুধু উৎপাদন নয়, আছে পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধা, শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকতা আর টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার।

পুরস্কারের তালিকায় স্থান পেয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানও, যারা চা, টাইলস, চামড়া, এমনকি জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা প্রমাণ করেছে, যে খাতই হোক, টেকসই হতে পারে সবখানেই।

নিট তৈরি পোশাক খাত থেকে পুরস্কার পেয়েছে নরসিংদীর পলাশের চরকা টেক্সটাইল, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ইকোটেক্স ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ফকির ফ্যাশন। ওভেন তৈরি পোশাক খাত থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার তারাসিমা অ্যাপারেলস, গাজীপুরের জিরানী বাজারের আউকু টেক্স ও ময়মনসিংহের স্কয়ার ফ্যাশন পুরস্কার পেয়েছে।
বস্ত্র খাতের চারটি প্রতিষ্ঠান এবার পরিবেশবান্ধব কারখানার পুরস্কার পেয়েছে। সেগুলো হচ্ছে মানিকগঞ্জের চরকান্দার আকিজ টেক্সটাইল মিলস, হবিগঞ্জের মাধবপুরের পাইওনিয়ার ডেনিম, চট্টগ্রাম চান্দগাঁওয়ের কেডিএস টেক্সটাইল মিলস ও পটিয়ার ফোর এইচ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং। অটোমোবাইল খাতের একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ পুরস্কার পেয়েছে।

ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারক খাতের তিনটি প্রতিষ্ঠান নরসিংদীর ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস, নরসিংদীর শিবপুরের ফেয়ার ইলেকট্রনিকস ও গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পুরস্কার পেয়েছে।

সরঞ্জাম ও সংযোগশিল্প খাত থেকে একমাত্র পুরস্কার পেয়েছে ঢাকার ধামরাইয়ের আদজি ট্রিমস। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে পুরস্কার পাচ্ছে ধামরাইয়ের আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ও হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো। চা–শিল্প থেকে পুরস্কার পেয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের জেরিন চা-বাগান ও মির্জাপুর চা-বাগান।

চামড়াশিল্প (তৈরি পণ্য) খাতের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ময়মনসিংহের ভালুকার সুনিভার্স ফুটওয়্যার। এ ছাড়া পাট খাতে রংপুরের রবার্টগঞ্জের কারুপণ্য রংপুর, টাইলস অ্যান্ড সিরামিক খাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের এক্স সিরামিক পুরস্কার পেয়েছে।

এ ছাড়া প্রসাধন খাতে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় রিমার্ক এইচবি ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের স্কয়ার টয়লেট্রিজ পুরস্কার পেয়েছে। ওষুধ খাতে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস।

জাহাজভাঙা ও জাহাজ নির্মাণ খাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ, খুলনার লবণচরার খুলনা শিপইয়ার্ড ও সীতাকুণ্ডের কেআর শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড পরিবেশবান্ধব শিল্প হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্ট খাতে গাজীপুরের কালীগঞ্জের সেভেন সার্কেল ও ইস্পাত খাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএসআরএম স্টিলস এবার পুরস্কার পেয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু আর্থিক পুরস্কার বা ট্রফি নয়, পেয়েছে একটি বার্তাও—উন্নয়নের গতিধারায় পরিবেশকে পাশে রাখাই এখন সময়ের দাবি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments