ঈশ্বরদীর কোলেরকান্দি গ্রামের মোঃ জহুরুল ইসলাম। এই মৌসুমে তাদের চারটি লিচু বাগানে লিচু হয়েছে প্রায় ৮ লাখ। এখন প্রতিদিনই কোন না কোন গাছের লিচু পাড়া হচ্ছে, সব গাছের লিচু সংগ্রহের কাজ শেষ হতে আরও ২০ দিন লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
লিচুগুলো দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে নিয়মিত। কখনও আশপাশের এলাকার লোকজন স্থানীয় বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাগান থেকেই পাইকারি দামে লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অন্যান্য জেলা থেকেও আসছেন অনেকে। ঈশ্বরদী এবং দিনাজপুরের লিচুর জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে অনলাইনভিত্তিক উদ্যোক্তারাও জহুরুল ইসলামের লিচু বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করছেন।
জহুরুল ইসলামের চারটি বাগানের একটির বয়স ১০০ ছাড়িয়েছে, দুটি বাগান ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়েসী, একটি বাগানের বয়স ২০ বছর। সবমিলিয়ে চারটি বাগানে ১৬০ টি গাছ, এর মধ্যে ১৫৮টি-ই বোম্বাই জাতের, বাকি দুটি গাছ দেশি লিচুর, যা স্থানীয় ভাবে আঁটি লিচু নামে পরিচিত।
বাগানগুলো গড়া জহুরুল ইসলামের দাদা মৃতঃ করিম পাঠানের হাতে। দাদার অবর্তমানে জহুরুল ইসলামের বাবা মোঃ আজিজ পাঠান বাগান দেখাশোনা করতেন। জহুরুল ইসলাম তখন পড়াশোনা শেষ করে চাকরি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। বাড়ি এসে লক্ষ্য করতেন বাবাকে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। আস্তে-আস্তে যেহেতু বাবার বয়স বাড়ছিল, তাই এতো পরিশ্রম দেখে খারাপ লাগছিলো জহুরুলের। কিছুদিন পর চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং নিজ গ্রামে এসে বসবাস শুরু করলেন। এরপর থেকে তিনিই লিচু বাগানগুলোর দেখাশোনা করছেন। বাবাও রয়েছেন তার পাশে।
লিচুর মৌসুমে অনেক কর্মসংস্থান হয় তাদের বাগানে। উদ্যোক্তা বার্তাকে জহুরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকার শতকরা ৯০ শতাংশ লোকই লিচু বাগানের সাথে যুক্ত। তাই আমার বাগানসহ আরও যে বাগানগুলো রয়েছে সেগুলোতে লিচুর মৌসুমে আমাদের এলাকার এবং আশেপাশের এলাকা থেকে আসা অসংখ্য লোকের কর্মসংস্থান হয়। বিশেষ করে ছাত্ররা লিচুর মৌসুমে এসে ১৫ থেকে ২০ দিনে, দিনপ্রতি পাঁচশো-সাতশো টাকা আয় করে থাকেন।”
আগে তাদের বাগান থেকে কলমের মাধ্যমে সারাদেশে চারা পাঠানো হতো। বছরে তারা দুই হাজারের বেশি কলম পাঠাতেন। তবে, এখন কলম নেওয়ার চাহিদা কিছুটা কমেছে।
জহুরুল ইসলামের জন্ম থেকে বেড়ে উঠা নিজ গ্রাম কোলেরকান্দিতেই। তিনি দাখিল ও আলিম পাশের পর অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেছেন। এরপর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন কয়েক বছর। কিন্তু, এক পর্যায়ে গ্রামে ফিরে বাপ-দাদার আদি পেশা লিচু চাষের সাথে যুক্ত হন তিনি। পাশাপাশি এই উদ্যোক্তা নিজ এলাকায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
চলতি বছর থেকে তিনি তাদের লিচু বাগানের মধুর পাশাপাশি অন্যান্য জায়গা থেকে চাকের মধু ও সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করে নিজ ফেসবুক আইডিতে পোস্টের মাধ্যমে বিক্রয় শুরু করেছেন। এছাড়াও তিনি বিশেষ ভাবে খাঁটি ঘি তৈরি করে পৌঁছে দিচ্ছেন ক্রেতাদের হাতে।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা