নিজের প্রতিভা আর দায়িত্ববোধকে সঙ্গে নিয়ে একটি ছোট্ট পথচলা শুরু করেছিলেন ফরিদা পারভিন। সময়ের ব্যবধানে সেই পথই হয়ে উঠেছে উদ্যোক্তা জীবনের একটি শক্ত ভীত। এখন তিনি ‘স্বপ্ন আঁকা’ নামের একটি পরিচিত হ্যান্ডপেইন্ট পোশাক ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা।
গাইবান্ধার মেয়ে ফরিদা পারভিনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই জেলাতেই। কৃষক বাবা ছলিম উদ্দিন এবং গৃহিণী মা আম্বিয়া বেগমের সন্তানদের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি ছিল গভীর নেশা। পড়াশোনার পাশাপাশি সেই ভালোবাসাই একদিন হয়ে উঠেছে তার জীবনের পাথেয়।
শোভাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে এসএসসি এবং শোভাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এইচএসসি ও পরে ডিগ্রি সম্পন্ন করেন ফরিদা। চাকরি না করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ছিল তার শুরু থেকেই। ২০১৬ সালেই মনে গেঁথে গিয়েছিল—নিজের উপার্জনে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াবেন, কারো উপর নির্ভরশীল থাকবেন না।
২০১৯ সালের শেষের দিকে সাহস নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন উদ্যোক্তা হওয়ার। সেই সিদ্ধান্ত থেকেই জন্ম নেয় ‘স্বপ্ন আঁকা’। হ্যান্ড পেইন্টের প্রতি ভালোবাসা থেকে শুরু হয় পোশাকে শিল্পের প্রয়োগ।
ফরিদা পারভিন বলেন, “হ্যান্ড পেইন্ট শুধু একটি নকশা নয়—এটা একজন শিল্পীর চিন্তাধারা, ক্লায়েন্টের চাহিদা আর এক ধরনের সৃজনশীল যোগাযোগ। প্রতিটি পোশাকে একটা গল্প থাকে, একটা আত্মা থাকে।
বর্তমানে ‘স্বপ্ন আঁকা’ গাইবান্ধা শহরে গড়ে তুলেছে নিজস্ব ছোট কারখানা। ৮ জন কারিগর সেখানে কাজ করেন, মাঠপর্যায়ে আরও প্রায় ৩০ জন কর্মী যুক্ত রয়েছেন। হ্যান্ড পেইন্ট, ব্লক ও বিভিন্ন হাতে কাজ করা পোশাক তৈরি করছেন নিয়মিত।
দেশের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে তাদের পোশাক সরবরাহ হয়—বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বিদেশেও যাচ্ছে ‘স্বপ্ন আঁকা’র পোশাক, তবে সরাসরি নয়, থার্ড পার্টির মাধ্যমে। প্রতিমাসে প্রায় বিক্রি হয় ৬-৭ লক্ষ টাকার মতো। এই সাফল্য যেন আরও বড় স্বপ্নের দরজা খুলে দিয়েছে ফরিদার জন্য।
ফরিদা স্বপ্ন দেখেন, “স্বপ্ন আঁকা একদিন একটি বৃহৎ কারখানায় রূপ নেবে, যেখানে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আমাদের দেশীয় শিল্প পাড়ি দেবে বিশ্বমঞ্চে।”
তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “সফলতা কখনোই তাৎক্ষণিক নয়। শর্টকাট পথ খোঁজা নয়, টিকে থাকার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটা দিন নতুন যুদ্ধ, কিন্তু হাল ছাড়লে হবে না। নিজের কাজের প্রতি ফোকাস থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি।”
পাশের বাড়ির মেয়েটা একদিন হয়তো সবার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে—যেমনটা ফরিদা পারভিন হয়ে উঠেছেন তার গাইবান্ধা শহরে আর এখন সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে একটি অনুপ্রেরনার নাম ফরিদা।
সেতু ইসরাত, উদ্যোক্তা বার্তা