নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার সানজিদা পারভীন এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তার নাম। কেঁচো চাষের মাধ্যমে জৈব সার উৎপাদন করে (ভার্মি কম্পোস্ট) তিনি যেমন নিজের পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছেন, তেমনি অনুপ্রাণিত করেছেন আশপাশের অনেককেই।
২০১৭ সালে স্বামীর আকস্মিক ব্রেইনস্ট্রোকের পর সংসারের ভার একা কাঁধে তুলে নেন সানজিদা। দিশেহারা অবস্থায় তিনি প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা পান পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর “নিরাপদ মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার উন্নয়ন” শীর্ষক ভ্যালু চেইন উপ-প্রকল্পের আওতায়। স্থানীয় এনজিও দাবী মৌলিক সংস্থা এর মাধ্যমে তিনি ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং উদ্যোগের সূচনা করেন।
শুরুটা হয়েছিল মাত্র ৩০টি চারি (চেম্বার) দিয়ে। এখন তিনি ৬০টির বেশি হাউজে প্রতি মাসে ৫ মেট্রিক টন জৈব সার উৎপাদন করছেন, যেখান থেকে তার গড় নিট আয় হয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। একসময় যেখানে নিজের গরুর গোবরই ছিল একমাত্র উৎস, আজ তিনি আশপাশের গৃহস্থ বাড়ি থেকে গোবর কিনে সার তৈরি করেন। কৃষকেরা একসময় যেসব গোবর ফেলে দিতেন, এখন তা বিক্রি করছেন ৩০ টাকা প্রতি বস্তায়, যা বাড়তি আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে তাদের জন্যও।
সানজিদা পারভীন বলেন, “আমার হাজবেন্ড আগে মেম্বার ছিল, ব্যবসা করতো। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেলে সংসার চালানো দুঃসহ হয়ে যায়। আমার এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসারের সকল দায়িত্ব আমার মাথার উপর এসে পড়ে। সংসারের খরচ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাবো কি করে সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। খুব অভাবের মধ্যেই সংসার চালাতে হচ্ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “মাসে যে টাকা আয় হয় সেই টাকায় সন্তানদের পড়ালেখা ও সংসারে খরচ করি। এখন আমি স্বাবলম্বী। আশপাশের নারীরাও এখন আমার সঙ্গে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এটা শুধু আমার না, আমাদের সবার সাফল্য।”
সানজিদার উদ্যোগে এখন ৪-৫ জন নারী নিয়মিত কাজ করছেন। সংসারের প্রাত্যহিক কাজের পাশাপাশি তারা বাড়তি এই আয়ে পরিবারে অবদান রাখছেন। নারীশক্তির এমন অংশগ্রহণ গ্রামীণ অর্থনীতির ভিতকে যেমন শক্ত করছে, তেমনি নারীর ক্ষমতায়নেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
ভার্মি কম্পোস্টের ব্যাপক চাহিদা থাকায় একদিকে উদ্যোক্তারা যেমন লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে কৃষকরাও কমদামে জৈব সার পেয়ে তাদের জমিতে পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ করতে পারছেন।
গবাদি পশু, গোবর, মাটি ও কেঁচোর কার্যকর সমন্বয় ঘটিয়ে সানজিদা পারভীন কেবল নিজের জীবনের গতিপথ বদলাননি, বরং হয়ে উঠেছেন আশপাশের অনেক নারীর জন্যও এক প্রেরণার নাম।