Homeকচুরিপানা ও রিসাইকেল জিন্স দিয়ে পরিবেশবান্ধব জুতা

কচুরিপানা ও রিসাইকেল জিন্স দিয়ে পরিবেশবান্ধব জুতা

কচুরিপানার সঙ্গে পরিচিত নন, এমনটা খুঁজে পাওয়া ভার। গ্রামাঞ্চলে এই কচুরিপানা একটি পরিচিত সমস্যা। এছাড়া পরিবেশ দূষণে বিশ্বজুড়ে বড় ভূমিকা রাখছে ডেনিম বর্জ্য। মাটি ও পানি দূষণের পাশাপাশি এতে রয়েছে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। 

এবার জলাশয় ও পরিবেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা এই দুই সমস্যা থেকে পরিবেশ সংরক্ষণের পথ বের করেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলসের (বুটেক্স) চার শিক্ষার্থী। প্রথমবারের মতো কচুরিপানা এবং পুনর্ব্যবহৃত জিন্স ব্যবহার করে তারা তৈরি করেছেন পরিবেশবান্ধব ও টেকসই জুতা। অভূতপূর্ব এই উদ্ভাবনের নাম দিয়েছেন ‘ইকো-স্টেপ’। যা দেশের টেক্সটাইলস ও পরিবেশ প্রযুক্তিতে নতুন এক দিগন্তের সূচনা করেছে। দেশের আনাচেকানাচে কচুরিপানার ছড়াছড়ি হলেও আদতে এটি দেশীয় উদ্ভিদ নয়। ১৮শ শতকের শেষভাগে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল থেকে কচুরিপানা নিয়ে আসা হয় বাংলাদেশে। মূলত আমাজন জঙ্গলের জলাশয়ে থাকা উদ্ভিদ এটি। যার বিস্তারে জলাশয়ে দেখা দেয় অক্সিজেনের ঘাটতি। মৃত্যু ঘটে লজ প্রাণী ও উদ্ভিদের, মাছ চাষে হয় ক্ষতি।

অন্যদিকে, ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ ডেনিম বা জিন্স তৈরির পর বর্জ্য হিসেবে প্রতি বছর জমা হচ্ছে প্রায় ২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন টন কাপড়। ফলে তৈরি হচ্ছে ভয়াবহ পরিবেশগত সংকট। এই সংকট মোকাবিলার চিন্তা থেকেই প্রথমে তাশফিক হোসাইন, অর্ণব হালদার অভি, ফারদীন বিন মনির এবং অন্বয় দেবনাথ শুরু করেন গবেষণা। তাদের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ল্যাবের অধীনে। যার সুপারভাইজার ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ড. মার্জিয়া দুলাল। জুতার ইনসোল ও ডেকোরেটিভ লেইস তৈরি করা হয়েছে কচুরিপানা দিয়ে। শুকনো কচুরিপানার কাণ্ড হাতে ব্রেইড করে তৈরি করা হয় লম্বা স্ট্র্যান্ড। পরে তা দিয়ে ব্রেইডেড উইভ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় ইনসোল। অন্যদিকে, জুতার বাইরের অংশ তৈরি হয়েছে ফেলে দেওয়া ডেনিম কাপড় দিয়ে।

এই অনন্য ডিজাইনে রয়েছে উচ্চ-নিম্ন গড়নের কচুরিপানা উইভ। যাতে পা রাখলে আরামদায়ক অনুভূতি পাওয়া যায়। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার হওয়ায় এটি সহজেই পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়। যার জন্য সময় লাগবে ৩-১২ মাসের মতো। পাশাপাশি এই জুতার সঠিক যত্ন নিতে পারলে এক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট দিলে অবশ্য এই সময়সীমা বাড়তে পারে ২-৩ বছর পর্যন্ত।

পরিবেশবান্ধব পণ্যের দাম সাধারণত বেশি হয়। অনেক সময় যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকে। কিন্তু ‘ইকো স্টেপ’ ভেঙে দিয়েছে সেই ধারণা। এক জোড়া জুতা তৈরি করতে খরচ মাত্র ৪০০-৫০০ টাকা।

এই জুতা যদি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যেতে পারে, তবে কচুরিপানার সমস্যাকে সম্পদে রূপান্তর করে ফেলা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ডেনিম বর্জ্যও পাবে কার্যকর পুনর্ব্যবহারের পথ। এতে করে বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাত, উদ্ভাবনী গবেষণা এবং পরিবেশ রক্ষা- এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেই খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দরজা।

‘ইকো-স্টেপ’ শুধু পরিবেশবান্ধবই নয়, অন্যান্য টেকসই জুতার তুলনায় সাশ্রয়ী। এটি বাংলাদেশের জলাশয় থেকে কচুরিপানা সরিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। একই সঙ্গে, ডেনিম বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে ল্যান্ডফিলের চাপ কমায়।

তাশফিক বলেন, আমরা এমন একটি পণ্য তৈরি করতে চেয়েছি, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বর্জ্যকে সৃজনশীলভাবে কাজে লাগাবে। “ইকো-স্টেপ” আমাদের সেই স্বপ্নের প্রথম ধাপ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments