নিজেদের সফলতার গল্প শুনাতে গিয়ে শুরুতেই এসএমই ফাউন্ডেশনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরষ্কার বিজয়ী উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন দেশে টেকসই এসএমই উন্নয়নের লক্ষ্যে এ খাতে বিরাজমান সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো দূরীকরণের জন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট গবেষণালব্ধ প্রস্তাবনা পেশ করার মাধ্যমে এসএমই ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর পান্থপথের এসএমই ফাউন্ডেশনের ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরষ্কার’ বিজয়ীদের অভিজ্ঞতা বিনিময় নিয়ে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিজয়ী উদ্যোক্তারা তাদের সফলতার গল্পগুলো বলেন। তুলে ধরেন নিজের পরিশ্রম ও ঐকান্তিক ইচ্ছার কথা।
শতদল হস্তশিল্পের মাকসুদা হাসনাত উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, হাতের তৈরী নানা জিনিস নিয়ে কাজ করি। কাজ করার ইচ্ছাশক্তি ছিল কিন্তু মূল অবদান রেখেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এখান থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। ভবিষ্যতের কাজ সম্পকে আইডিয়া পেয়ছি। আর সফলতার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে সেটা হচ্ছে পরিশ্রম।
মাকসুদা আরও বলেন, আমি যতোটুকু পারি সব কাজ নিজে করার চেষ্টা করি। কর্মচারীদের দিয়ে কাজ করাতে ভালো লাগে না।
আরেক উদ্যোক্তা দেলোয়ারা বেগম নিজের গল্পের কথা তুলে ধরে বলেন, আমার দীপ্ত কুঠিরে মূলত নকশি কাঁথা, চাদর, থ্রী পিস নিয়ে কাজ করি। আসলে এসএমই ফাউন্ডেশন না থাকলে আমি সফল উদ্যোক্তা হতে পারতাম না। তাদের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এ জায়গায় পৌঁছেছি।
তিনি বলেন, পুরষ্কার প্রাপ্ত সবাইয়ের সাথে একত্রিত হতে পেরে ভালো লাগছে।
সিঁড়ি সমাজ-কল্যাণ সংস্থা’ সংগঠনের সত্ত্বাধিকারী তৃতীয় লিঙ্গের আরিফা ইয়াসমিন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন জামালপুর জেলায় সমাজ উন্নয়ন কাজ করছে এই সংগঠন। এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শেষে আমরা হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত হই। ৬০-৭০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে জামালপুরে হস্তশিল্পের কাজ শুরু করি, আমাদের মতো অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে, আমরা স্বাবলম্বী হচ্ছি।
‘সিঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থা’র সদস্য ৭০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তারা সংগঠনে বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করছেন। এজন্য তারা পারিশ্রমিক পান।
আরিফা বলেন: পারিশ্রমিক দিয়ে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এলাকায় বন্যায় কবলিত মানুষকে ত্রাণ বিতরণ করি, ঈদুল আযহায় গরীবের মাঝে কোরবানীর মাংস বিতরণ করি। শীর্তাত মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করে থাকি।
কর্মশালায় অংশ নেয়া ২০-২৫ উদ্যোক্তারা সকলেই বলেছেন, এসএমই ফাউন্ডেশন উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সরকার দ্রুত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সম্প্রসারণের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন নামে একটি ভিন্ন সংস্থার সৃষ্টি করেছে। শিল্পায়নে নারী এবং সব শ্রেণীর এসএমই উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত, উদ্বুদ্ধ ও জাতীয়পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। তৃণমূল, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে সাধারণ জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় এগিয়ে নেয়া এই ফাউন্ডেশনের অন্যতম লক্ষ্য। কার্যত বিসিকের কর্মকা- ত্বরান্বিত করার জন্য এ ফাউন্ডেশন সৃষ্টি করা হয়।
এসএমই ফাউন্ডেশন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের পণ্যের বাজারজাতকরণে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
এরই অংশ হিসাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা কর্তৃক উৎপাদিত পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিক্রয় এবং ক্রেতা-বিক্রেতার সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এই বছরে ২৩টি জেলা সদর যথা নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, জামালপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও রাঙ্গামাটি জেলায় সাতদিনব্যাপী আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন করেছে।
হৃদয় সম্রাট