Homeইংরেজিতে স্ট্রাগল করা ছেলেটি ফুল ফান্ডেড পিএইচডি করছে আমেরিকায়

ইংরেজিতে স্ট্রাগল করা ছেলেটি ফুল ফান্ডেড পিএইচডি করছে আমেরিকায়

২০০৮ সাল। লক্ষ্মীপুরের এক গ্রামের সাধারণ ছেলে মেহরাব হোসাইন রবিন তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ফলাফল জানার দিনটা তার কাছে কোনো উৎসব ছিল না। অন্যদের কাছে সেটা উল্লাসের দিন হলেও, তার কাছে ছিল নিজের ভবিষ্যতের এক বিব্রতকর রায়। জিপিএ ৩.৮৮ আর ইংরেজিতে ‘সি’—চারপাশে ছিল হা হা কার, আত্মীয়স্বজনের মুখভঙ্গি, বন্ধুবান্ধবের এড়িয়ে যাওয়া চোখ।

স্মৃতিচারণ করেন রবিন,  “তখন মনে হয়েছিল, এটাই বুঝি আমার শেষ, ভালো কলেজে ভর্তি হওয়াই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। সবাই বলল পলিটেকনিকে চলে যাও, যেন সেটাই আমার উপযুক্ত জায়গা।

কিন্তু এখানেই গল্প মোড় নেয়

নিজেকে ভেঙে পড়তে দেননি রবিন। বরং এক নতুন দর্শন আঁকড়ে ধরেন— “অপমানকে শক্তিতে রূপ দাও।”শুরু হয় তার দ্বিতীয় ইনিংস। ডিপ্লোমায় দ্বিতীয় স্থান, এরপর সন্ধ্যাবেলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস আর দিনের বেলা কাজ। লড়াইয়ের পাশাপাশি নিজের দুর্বলতাগুলোকে একে একে ধরে ধরে মোকাবিলা করেছেন—বিশেষ করে ইংরেজি ভাষা, যেটি ছিল তার সবচেয়ে বড় শত্রু।

ডিবেট ক্লাব, আইটি কোর্স আর একরাশ জেদ

নিজের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে যুক্ত হন বিতর্ক ক্লাবে, শেখেন কথা বলা, ভাব প্রকাশ করা। প্রযুক্তিগত দক্ষতার জন্য ফ্রি আইটি কোর্সে ভর্তি হন। সময় কম, কাজের চাপ বেশি—তবুও থেমে যাননি।

২০২১ সালে ভাগ্য আর পরিশ্রমের মিলনে ধরা দেয় প্রথম আন্তর্জাতিক সাফল্য—ভারত সরকারের ICCR স্কলারশিপ এবং দিল্লি টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সে ভর্তি। সেখানে তিনি তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন—যা তাকে এগিয়ে দেয় আরও বড় স্বপ্নের দিকে।

আমেরিকার পথে…

বাংলাদেশে ফিরে কিছুদিন কাজ করেছেন চ্যানেল আই-তে। কিন্তু তার চোখ তখনও দূরে, অনেক দূরে—যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি। অবশেষে ২০২৪ সালে, বহু আবেদন আর অপেক্ষার পরে পেয়ে যান Louisiana Tech University-তে পূর্ণ স্কলারশিপে পিএইচডি। এখন তিনি গবেষণা করছেন পোস্ট-কোয়ান্টাম সাইবার নিরাপত্তা ও ব্লকচেইন নিয়ে—যা আগামী বিশ্বের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ।

তরুণদের উদ্দেশে তার বার্তা:

“SSC বা HSC-এর ফল আপনার জীবনের শেষ কথা নয়। সেটা কেবল একটা সময়ের প্রতিচ্ছবি। আপনার সত্যিকারের শক্তি লুকিয়ে আছে—আপনি ব্যর্থতার পর কী করেন, সেই সিদ্ধান্তে।”

তিনি বলেন, “যদি আমি, টিনশেড স্কুলে পড়া এক ছেলে, ইংরেজিতে ‘সি’ গ্রেড পেয়ে আজ এই জায়গায় পৌঁছাতে পারি—তাহলে যে কেউ পারবে। শর্ত একটাই—হাল ছাড়বেন না।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments