রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনের শৈলপ্রপাত মিলনায়তনে রোববার এক জমজমাট নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন ও মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত শতাধিক নারী উদ্যোক্তা অংশ নেন এই অনুপ্রেরণামূলক আয়োজনে, যেখানে একসাথে মিলিত হয়ে তারা ব্যবসার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন, আড্ডা দেন এবং নানা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ করেন।
‘নারী উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (ওয়েব ফাউন্ডেশন)’ আয়োজন করে এই বিশেষ অনুষ্ঠানের। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল নারী উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে একটি সহযোগীতা ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।
দুই পর্বে বিভক্ত এই আয়োজনের প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিথি ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লায়ন সাইফুল ইসলাম। তিনি উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, “একজন উদ্যোক্তা শুধু নিজের জন্যই নয়, সমাজের জন্যও মূল্য তৈরি করেন। নারী উদ্যোক্তারা এখন দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় একটি নির্ভরযোগ্য শক্তি।”
দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে আসেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা, যার উপস্থিতি পুরো অনুষ্ঠানকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। তিনি নারী উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করেন এবং উৎসাহ জোগান নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। তিনি বলেন, “নারী মাত্রই শক্তি। একজন নারী যখন নিজের পায়ে দাঁড়ান, তখন একটি পরিবার বদলায়; একটি সমাজ বদলায়। আমি সকল নারী উদ্যোক্তাকে জানাই শ্রদ্ধা ও শুভকামনা।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়েব ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট রূপা আহমেদ, এবং পুরো আয়োজনের আহ্বায়ক ছিলেন রাইয়ান ভ্যারাইটিস কালেকশনের স্বত্বাধিকারী ফাহিমা সুলতানা পারভিন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসার শুরু, চলমান চ্যালেঞ্জ, সামাজিক বাধা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অনেকে জানান, পরিবারের সাপোর্ট, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পুঁজি সংকট—এই তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই তারা আজকের অবস্থানে এসেছেন। ‘এক্সপেক্ট্রা’ ফেসবুক পেজের উদ্যোক্তা পলি আক্তার বলেন, “একজন নারী উদ্যোক্তা শুধু নিজের স্বাবলম্বিতার জায়গা তৈরি করেন না, বরং অন্য নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের পথও তৈরি করেন। এই আয়োজন আমাদের মধ্যে উৎসাহ, আত্মবিশ্বাস এবং পারস্পরিক সহমর্মিতা গড়ে তুলেছে।”
এ ছাড়া, উদ্যোক্তারা ফেসবুক মার্কেটিং, কাস্টমার রিলেশন, পণ্য বৈচিত্র্য, ব্র্যান্ডিং ইত্যাদি বিষয়েও নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
সম্মেলনের শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা_ গান, নাচ ও কবিতা দিয়ে অনুষ্ঠানকে আরও রঙিন করে তোলা হয়। বিশেষত রুনা লায়লার উপস্থিতি এবং আন্তরিক বক্তব্য উপস্থিত সকলকে অনুপ্রাণিত করে।
এই ধরণের আয়োজন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য শুধু প্ল্যাটফর্মই নয়, বরং এটি হয় একটি সাপোর্ট সিস্টেম ও শক্তির উৎস। ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক তৈরি, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সম্ভাব্য সহযোগিতার পথ তৈরি করাই ছিল সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য। উদ্যোক্তাদের অনেকেই জানান, এমন আয়োজন নিয়মিত হলে নারীদের ব্যবসা আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে এবং তারা জাতীয় অর্থনীতিতে আরও দৃঢ় অবদান রাখতে পারবেন।