“আইসক্রিম” শব্দটি মনে আসতেই নিশ্চয় চোখের সামনে শৈশবের স্কুলের স্মৃতি ভেসে উঠলো? কিন্ত এই আইসক্রিমই একটি পুরো পারিবার চলার একমাত্র অবলম্বন।
৬ ভাই এবং ৫ বোনের সংসারে আইসক্রিম বিক্রেতা বাবায় ছিলেন একমাত্র উপার্জনের উৎস। মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে আইসক্রিম কিনে বিভিন্ন স্কুলের সামনে বিক্রি করতো বাবা মোকসেদ আলী মণ্ডল। সারাদিন আইসক্রিম বিক্রির পর লাভ হতো ১০০ টাকা, যা দিয়ে এতগুলো সন্তান- সন্ততি নিয়ে কখনও খেয়ে, কখনও না খেয়ে দিন কাটাতে হতো।
১৯৯৬ সাল ছেলে আনোয়ার ইসলাম বহু কষ্টে পড়াশোনা করে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন এবং তিনি আর তার আরও দুই ভাই মিলে বাবার সাথে আইসক্রিম বিক্রির ব্যাবসা শুরু করেন।
আর পড়াশোনা করা হলোনা উদ্যোক্তা আনোয়ার ইসলামের। ছোট ভাই-বোন গুলোকে মানুষ করতে হবে, সামনে এগিয়ে যাবার তাগিদ অনুভব করলেন। চলতে থাকে আইসক্রিমের ব্যবসা।
কিন্তু যখন বর্ষাকাল আসতো তখন আর আইসক্রিমের ব্যবসা চলতো না। তাই তারা ঠিক করলেন চালের ব্যবসা করবেন। সেই সময়টাতে চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪টাকা। তারা চাল কিনে দূরের কোন হাটে গিয়ে বিক্রি করতো। একবার চাল বিক্রি করতে তারা বগুড়া শহরে যায়, চালের ব্যবসায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফেরার পথে তারা বিভিন্ন জায়গায় কমলা বিক্রি হতে দেখে ভাবে, যদি এলাকায় নিয়ে গিয়ে কমলা বিক্রি করে তাহলে কেমন লাভ হতে পারে?
এমন ভাবনা থেকেই অল্প পরিমাণে কমলা কিনে এলাকায় বিক্রি করলো এবং ভালো লাভও হলো। শুরু করলো বাইরে থেকে আপেল, কমলা এনে এলাকায় খোলা বাজারে বিক্রি।আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি উদ্যোক্তাকে।
চাটাইয়ের তৈরি একটি ঘর নিয়ে সেখানে বিভিন্ন ফলের ব্যবসা শুরু করলেন। সহযোদ্ধা ভাইয়েরা মিলে হাতে হাত রেখে এগিয়ে নিলেন ব্যবসাকে। পাটের দড়ি দিয়ে তারা দোলনা বানাতে পারতো, তাই দোলনা বানিয়ে ফলের দোকানের পাশে ঝুলিয়ে রাখতো। দেখলো দোলনার চাহিদা অনেক আর লাভও হচ্ছে ভালো।
এর মাঝে পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। দোলনা বিক্রির উৎসাহ থেকেই তারা আরও একটি দোকান নিয়ে সেখানে কসমেটিকস সামগ্রী বিক্রি করতে লাগলো।
আস্তে আস্তে ব্যবসা বাড়তে থাকলো। উদ্যোক্তা গড়ে তুললেন বেকারি পণ্যের একটি কারখানা, নাম দিলেন আল-মদিনা।
যেখানে দই, মিষ্টি, কেক, বিস্কুট, চানাচুর সহ নানান ধরণের খাবার তৈরী হয়। নিজ থানা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন থানায় পাওয়া যায় তাদের বেকারি পণ্য। এরপর জায়গা কিনে তিন তলা একটি ভবন নির্মাণ করলেন সেখানে জুতা এবং কাপড়ের দোকান দিয়েছেন এছাড়া হিলিতে রয়েছে তাদের আরও একটি বেকারি পণ্যের দোকান। ৫ বোনের বিয়ে দিয়েছেন। তারা এখন মনে করেন তারা প্রতিষ্ঠিত এবং সফল।
কঠোর পরিশ্রম এবং তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সৎ ছিল বলেই আজ তারা এতদূর আসতে পেরেছে। ভবিষ্যতে গরু এবং মুরগির খামার করার ইচ্ছা আছে বলেও জানান উদ্যোক্তা।
দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানার প্রত্যন্ত এলাকা রানীগঞ্জে সহযোদ্ধা ভাইদের সাথে নিয়ে প্রায় ৭০ জন কর্মীর কর্মসংস্থান করে আজ ৫ কোটি টাকা মূল্যমানের ব্যবসা পরিচালনা করছেন উদ্যোক্তা আনোয়ার ইসলাম।
আফিয়া জীম