“আমি আইন বিভাগে পড়ছি বা পড়েছি তাই আমাকে আইনজীবীই হতে হবে”, এমন বিশ্বাসে খুব একটা বিশ্বাসী ছিলেন না উম্মে হাবিবা হিরা। ছকে বাঁধা জীবনে কেউ কেউ বড্ড হাঁপিয়ে ওঠে। নিজের পছন্দসই জীবন সাজাতে না পারার হাপিত্যেশ রয়েই যায়। মন যেন খুঁজে চলে অন্য কোনো কিছু। একান্তই নিজের কিছু। সেই ভাবনা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন উম্মে হাবিবা হিরা।
২০১৬ সালে আড়াইশো টাকা পুঁজি নিয়ে টুকটাক ভাবে গহনা তৈরির কাজ শুরু করলেন হিরা। কোনরকম প্রচার ছাড়াও বেশ ভালোই শাড়া মিলছিলো তা দেখেই ২০১৭ তে সামাজিক পাতাই “নকশা” নামে পেজ চালু করলেন এই উদ্যোক্তা।
শুরুটা ছিলো মেটালের গহনা দিয়ে। পরবর্তীতে হিরা তার নকশাতে যুক্ত করলেন কাঠের গহনা, পাটের গহনা, গামছা দিয়ে তৈরি গহনা, মুক্তার গহনা, কাঠ, মেটাল এবং হ্যান্ডপেইন্ট করা টিপ, ব্রেসলেট ইত্যাদি।
গহনা তৈরি শেখা কার কাছ থেকে, জানতে চাইলে তিনি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন “আমি যখন ঢাকা, বা রাজশাহীতে বড় বড় মেলাগুলোতে ঘুরতাম তখন গহনার মধ্যে নতুনত্ব কি এসেছে বরাবরই তা লক্ষ্য করতাম। পরবর্তীতে ডিজাইন গুলোতে একটু ভিন্নতা এনে নিজে নিজে সেগুলো তৈরির চেষ্টা করতাম।ঐ সময় যেহেতু ইউটিউবে এসব ভিডিও থাকতো না তাই সেখান থেকে আইডিয়া নেওয়ার সুযোগ ছিলো না। প্রথম দিকে বার বার ভুল করেছি ভুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছি।”
প্রশিক্ষণ একজন উদ্যোক্তার এগিয়ে যাওয়ার পথে কতটা ভূমিকা রাখে বলে আপনি মনে করেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণ একজন উদ্যোক্তার এগিয়ে যাওয়ার পথে বিরাট ভূমিকা রাখে। আমি যখন শুরু করেছিলাম তখন শুধু গহনা তৈরি জানতাম। এগুলো কিভাবে, কোন মাধ্যমে সহজে ক্রেতার হাতে পৌঁছাতে পারি, গহনা তৈরির ম্যাটারিয়ালস গুলো সহজলভ্যভাবে কোন স্থানে পেতে পারি, কি করলে এগুলো আরো বেশি মানসম্মত এবং টেকসই হবে এবং আমরা যেহেতু অনলাইনে পণ্য বিক্রয় করি তাই অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের পারদর্শীতা জরুরি। এ যাবতীয় বিষয় গুলো সম্পর্কে আমি বিসিক, বিডা, ইক্যাব থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং, উদ্যোক্তা উন্নয়ন সহ বিভিন্ন বিষয়ে এ প্রশিক্ষনগুলোর মাধ্যমে জানতে পেরেছি যা আমার উদ্যোক্তা জীবনে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। তাই অবশ্যই আমি বলবো প্রশিক্ষণ উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে বিরাট ভূমিকা রাখে।”
শুধু উদ্যোক্তা জীবন নয় পড়াশোনাতেও বরাবরই দুর্দান্ত ফলাফল করতেন উম্মে হাবিবা হিরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করে বার কাউন্সিলের প্রিলিমিনারি পার হয়ে বর্তমানে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই উদ্যোক্তা।
পরিবারের সাপোর্ট কতটা পেয়েছেন, উত্তরে জানান, “আলহামদুলিল্লাহ পরিবারের সকলেই এখন আমার পাশে রয়েছে। শুরুতে মা খুব ভয় পেতেন যে গহনা তৈরি করতে গিয়ে পড়াশোনার ক্ষতি করে ফেলি কিনা। এজন্য একটু-আধটু বকাবকি করতেন, তবে বাবা-মা যখন দেখতেন পড়াশোনার ক্ষতি করে কিছু করছিনা, ফলাফল ভালো করেই আমি উদ্যোগটি পরিচালনা করতে পারছি তখন থেকে তারা কিছু বলেন না বরং উৎসাহ দেন আমায়। আমার ছোট বোন উম্মে হানিফা রিঙ্কি আমাকে বেশিরভাগ সময় গহনা তৈরির কাজে সহযোগিতা করেন এবং আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী গহনা তৈরির ম্যাটারিয়ালস গুলো সংগ্রহ করতে আমাকে সহযোগিতা করে থাকেন। উদ্যোক্তা বার্তার মাধ্যমে তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”
নিজ ক্যাম্পাসের ফাগুন মেলা, চেম্বার অফ কমার্স এর ইমাজিন রাজশাহী ফেস্ট ২০২১ সহ অসংখ্য মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন এই উদ্যোক্তা। শিক্ষানগরী রাজশাহীর শিক্ষার্থীরাই হলেন উম্মে হাবিবা হিরার টার্গেট কাস্টমার। এছাড়াও তার অনলাইন পেজ নকশা মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তার তৈরি গহনা গুলো পৌঁছে যাচ্ছে।
তামান্না ইমাম,
উদ্যোক্তা বার্তা।