রাজধানীতে রঙিন ফলফলাদি নিয়ে—পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি, মাটি ও জলবায়ুর সুরে গড়া ফল-ভবনের ঝাপি নিয়ে হাজির! রাজসভার মুকুটধারী– আম- স্নিগ্ধ রসের রাজা (আম নয় শুধু ফল, বরং এক ‘রসরাজ’) আনারস- মুকুটে মোড়ানো সিংহাসনরূপী সুষমা, যে ফলের চারিদিকে থাকবে ছড়ার একঝলক, মজার একটা পরিচিতি- আনারস নয় শুধু প্রাচীন জাদুকরী মিষ্ট ঘ্রাণ, পাহাড়ি ঝর্ণা-ছোঁয়া বাণী “আনারসের মুকুটে ঝরে দুপুরের রোদ, লংগান মুখ টিপে হাসে সন্ধ্যার আলোয়।” বিদেশ থেকে আগত পাহাড়ের মাটিতে খাপ খাওয়ানো অধিক ফলনশীল রাম্বুটান, ম্যাংগোস্টিন, লংগান, রসকো, চিন্দিরা নামক সুস্বাদু ফলের ঝুড়িও ভরা থাকবে এখানে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ের নিরালায় বসা ফলসভার অলঙ্কার রূপক রাম্বুটান হবে হয়তো কোনো রাজকুমার, আর প্যাশন ফ্রুট গোপন দূতের মত চুপচাপ রাজনীতির রাজ্যে আসীন! যদি এক লাইনের মজার ছড়া এমন হয়- “রাম্বুটান ডাকে, ওহে প্যাশন ফ্রুট,
পাহাড়ি হাসির দল পেয়েছে রঙিন রুট! পার্বত্য চট্টগ্রামের মুকুট পরা ফল আনারস, বাজারের রঙিন পসরা কীভাবে রাজধানীর হাটে বিক্রি হয়? আহ কী অপরূপ রঙ, কী সুমধুর গন্ধ আর লোকজনের মুখে ‘রসে ভরা হাসি’। আনন্দে ফলের ঝাপিগুলোতে ঘটছে বিস্ফোরণ! রাজধানীতে ১ জুলাই থেকে ৫ জুলাই সগৌরবে চলবে পাহাড়ি ফল মেলার আমন্ত্রণ।
এবারের পাহাড়ি ফল মেলায় “আম বলছে- আমার রসে রোদ জুড়িয়ে ছায়া আসে, কাঁঠাল হেসে বলে, আমার ঘ্রাণে মন মাতাবে থেকো পাশে!” এই মেলায় ফলগুলো যেন শুধুই খাওয়ার নয়, তারা যেন শুধু গল্পই করে। আম বলছে মিষ্টি ভাষায়, রাম্বুটান বলে গম্ভীর স্বরে, আর প্যাশন ফ্রুট বলছে যেন ভিনদেশি পিয়ানোর সুরে! ছোটদের মুখে ছড়া যদি এমন হয়- “রাম্বুটানের রং লাল, ঢাকাবাসীর মন করে খেয়াল!”/ “পেঁপে পাকে পাহাড়ে স্নিগ্ধ, ঢাকায় এলে রসে হয় মুগ্ধ!”/ “রাম্বুটান চুপ, তবুও সে রাজা- স্বাদে তার বাজিমাত সাজা!”
জ্যৈষ্ঠের তপ্ত দুপুরে যখন শহরের মানুষ ক্লান্ত, তখন পাহাড়ি বাজারগুলো যেন রঙে-রসে হেসে ওঠে। আনারসের ঢিপি, কাঁঠালের সুবাস, আমের ঝুড়ি আর রাম্বুটানের লালচে হাসি—সব মিলিয়ে এক মধুময় দৃশ্যপট। এই রঙিন রাজ্য ঘিরে তৈরি হয়েছে হাস্যরস মিশ্রিত এক রাজসভা-কল্পকাহিনি, যেখানে ফলেরা কথা বলে, ছড়া ছড়ায়, আর রাজ্য চালায় কাব্যিক ছন্দে। কিছু উদাহরণ: > “রাম্বুটান শাড়ি পরে, বাজারজুড়ে হাসির নেটে; লংগান ডাকে চোখ টিপে, ম্যাংগোস্টিন থামে ঠোঁট নেড়ে।”/ > “কাঁঠাল বলে ‘আমি গন্ধের রাজা’, আম বলে ‘আমার রসেই পুরো রাজ্য সাজা!’” এইরকম এক লাইনের ছড়া, মজার রূপক আর কল্পনাপূর্ণ চরিত্রায়নে পাহাড়ি ফলগুলো যেন হয়ে উঠেছে একেকজন রঙিন শিল্পী—প্রকৃতি নামক মঞ্চে।
এই ফল-ভাণ্ডার কেবল রসনাবিলাস নয়—বরং এটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। পাহাড়ি অঞ্চলের অনেকে এখন আম কাঁঠাল, পেঁপে, আনারস, প্যাশনফ্রুট চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অনেক নারী উদ্যোক্তাও মিশছেন এই রঙিন অর্থনীতির অঙ্কে—ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ, চাটনি তৈরির কারখানা, এমনকি জৈব সার উৎপাদনেও।
টেকসই কৃষির দিকে নজর দিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিণত হতে পারে একটি আন্তর্জাতিকমানের অর্গানিক ফলের ভান্ডারে। রাস্তাঘাট উন্নয়ন, পরিবহনের সহজলভ্যতা এবং বাল্যকাল থেকেই ফলভিত্তিক শিক্ষা চালু হলে এই রাজ্য হয়ে উঠবে আরও সজীব। ‘পাহাড়ি ফলের রাজ্য’ শুধু একটি ভৌগোলিক অঞ্চল নয়—এটি এক কল্পরসের ভান্ডার, যেখানে মানুষ, প্রকৃতি ও ফল একসাথে গড়ে তোলে জীবনভরা ছন্দ। আমরা যদি এই রসের রাজ্যকে ভালোবাসি, রক্ষা করি, ও পরিচর্যা করি—তাহলেই হয়তো একদিন বিশ্বের মানচিত্রেও এই অঞ্চল ফলের নামেই স্বীকৃতি পাবে।
রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে ১-৫ জুলাই পাঁচদিনব্যাপী পার্বত্য ফল মেলায় থাকছে অনেক কিছুরই আকর্ষণ। মেলায় দেখা মিলেছে পাহাড়ি চাষিদের, যাঁরা সরাসরি ফল নিয়ে এসেছেন। তাঁদের একজন বললেন, > “এই আমটা গত তিন মাস পাহাড়ে আগলে রেখেছি—আজ ঢাকার মানুষ মুখে দিলো তো মনে শান্তি পেয়েছি।” এই মনোরম দৃশ্য দেখে আমরা বুঝি, শহর-পর্বতের দূরত্ব মুছে দেয় একটি মেলা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ফল ঢাকার বাজারে কেবল স্বাদের বার্তা দেয় না—এটি দেয় সংযোগের, শ্রদ্ধার, এবং সম্মিলনের বার্তা। এই মেলা যেন বলে—পাহাড়ি ফল শুধু চাষ নয়, এটি এক অনন্ত রসলোকে যাত্রা। ঢাকার বুকেও তাই পাহাড় রয়ে যায়, নামহীন মিষ্টি সুবাস হয়ে…
“পাহাড়ি হাওয়ায় ভেসে আসে সুবাস, ফলরাজ্যে বাজে প্রাণের নিঃশ্বাস!”
মো. রেজুয়ান খান, জনসংযোগ কর্মকর্তা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ০১৮২৫৮৯৭৮১৮