ফেসবুক: সামনেই একটা ম্যাকডোনাল্ডের আউটলেট ছিলো,সেই আউটলেটের বাইরে ডাস্টবিনে চিকেন/মাটনের টুকরো খুঁজতেন লিলিমা। কোনদিন ভাগ্য ভালো হলে আধখাওয়া বার্গারও জুটে যেতো কপালে!
দিল্লীর তৈমুরনগরের একটি বস্তিতে নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম লিলিমা খান এর। লিলিমারা ৪ ভাইবোন। ৪সন্তানসহ ৬জনের পরিবারে সবার মুখে অন্ন তুলে দিতে বুকের রক্ত পানি করে পরিশ্রম করেন লালিমার বাবা। পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলেও শান্তি ছিলো কিন্তু সেই শান্তিটাও রাতারাতি উবে যায় ২০০১ সালে লিলিমার বাবার মৃত্যুতে। সংসারের একমাত্র রোজগারের ব্যক্তিটির হঠাৎ মৃত্যুতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে গোটা পরিবারের। শুধুমাত্র তাই নয় লিলিমার বাবা মারা যাবার ৬ মাসের মধ্যে যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান লিলিমার মা ও। প্রথমে বাবা তারপর মা অনাথ হয়ে পড়েন ৪ভাইবোন। ঠিক এসময় লিলিমার বড়বোন নিজের বিবাহিত জীবনে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যা করেন। পরিবারের সদস্যদের একের পর এক মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন লিলিমার বড়ভাই। ডিপ্রেশনে শিকার হয়ে নেশার জগতে ডুবে গিয়ে মাত্র দশ হাজার টাকায় বসত বাড়িটাও বিক্রি করে দেন এক প্রতিবেশীর কাছে। ৭বছর বয়সী লিলিমা তখন ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ান। তখন লিলিমার এক দূরসম্পর্কের কাকা তার ছোটভাইকে নিয়ে যান, মেয়ে বলে ফেলে রেখে যান ছোট্ট লিলিমা কে। প্রথমদিকে বস্তিরই এক মহিলার কাছে আশ্রয় পান লিলিমা।সেখানে তার বয়সী আরো অনেক বাচ্চারা থাকতো। কিন্তু এই মহিলারা সেখানে বাচ্চাদের এমনি এমনিই রাখেন নি। ভোর ৪টায় উঠিয়ে বাচ্চাদের দিয়ে রাস্তায় ময়লা তুলতে পাঠাতো। স্ক্র্যাপ ভর্তি ব্যাগ নিয়ে আসলেই কেবল খাবার দেওয়া হতো তা না হলে না খেয়েই কাটাতে হতো রাত। সেইদিনগুলির কথা মনে হলে আজও ভেতর থেকে অসাড় হয়ে যান লিলিমা। রাস্তার ময়লা কুড়াতে গিয়ে বাকি বাচ্চাদের সাথে ডাস্টবিনে ভালোমন্দ খাবার খুঁজতে যেতেন লিলিমা। সামনেই একটা ম্যাকডোনাল্ডের আউটলেট ছিলো,সেই আউটলেটের বাইরে ডাস্টবিনে চিকেন/মাটনের টুকরো খুঁজতেন লিলিমা। কোনদিন ভাগ্য ভালো হলে আধখাওয়া বার্গারও জুটে যেতো কপালে। ঠিক এসময় লিলিমার আলাপ হয় প্রমোদ নামের এক ব্যক্তির সাথে আলাপ হয় লিলিমার,যিনি চেতনা নামের একটি এনজিও চালাতেন। রাস্তার অবহেলিত বাচ্চাদের নিয়েই কাজ করতেন এই এনজিও। তার দৌলতেই চিত্তরঞ্জন পার্কে উদয়ন কেয়ার নামে একটি অনাথ আশ্রমে পা রাখেন লিলিমা। শুরু করেন পড়াশোনা। কিন্তু তখনও বিপদ যে তার পিছু ছাড়েনি। একটা পরিবার পাওয়ার লোভে অনাথ আশ্রম থেকে পালিয়ে চলে যান কাকার বাড়িতে। কিন্তু সেদিন ছোট্ট লিলিমা বুঝতে পারেন পৃথিবীতে বাবা-মা ছাড়া খুব কম মানুষই আছেন যারা নি:স্বার্থভাবে ভালোবাসেন। ১৩বছর বয়সে তার কাকা মাসিক ২০০০টাকা বেতনে একটি জুতোর কারখানায় কাজে দিয়ে দেন। কেটে যায় ২টি বছর, অবশেষে ভাগের চাকা ঘোরে!
কিলকারী রেইনবো হোম নামে একটি এনজিওর সহায়তায় লিলিমার জীবন সম্পূর্ণ বদলে যায়। এখানে তিনি তার স্বপ্নকে উড়ান দেবার সুযোগ পান। পড়াশোনা করে ক্লাস ১২ শেষ করার পর, ক্রিয়েটিভ সার্ভিসেস সাপোর্ট গ্রুপ(CSSG) নামে একটি দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে রান্নার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। সেখানেই লিলিমা বুঝতে পারে রান্নার প্রতি তার দক্ষতার কথা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৫ সালে ঐ হোম পরিদর্শনে আসেন আনন্দ কাপুর। লিলিমার রান্নার বেশ প্রসংশা করেন তিনি। তার সহায়তায় জোড়াবাগে ‘ট্রেস এন্ড বার’ নামে একটি রেস্তোরাঁয় মাসিক ৭০০০/- টাকার বিনিময়ে কাজে যুক্ত হন লিলিমা। এরপর একের পর এক রেস্তোরাঁয় কাজ শিখে নিজেকে অভিজ্ঞ করে তোলেন। দিনে ১৪-১৫ ঘন্টাও কাজ করতেন। ধীরে ধীরে তার চেষ্ট ও অধ্যাবসায়ের ফলে এগিয়ে যেতে থাকেন। আজ দিল্লীর ডিয়ার ডোনা’ হোটেলে প্রধান শেফ হিসেবে ৩৫ জনের একটি টিমকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন লিলিমা। যে কি না একদিন ডাস্টবিন থেকে লোকের ফেলে যাওয়া এঁঠো খাবার তুলে খেতো, নিজের পরিশ্রমে নিজের বাড়ি গাড়ি সবই করেছেন লিলিমা। জীবনে বাঁধা আসতেই পারে,কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার সাহস পারার নামই জীবন।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট