সময়টা ২০১২ সাল, দীর্ঘক্ষণ অফিসের কাজের পর বাসায় ফিরে সহজে রান্না করা যায়, এমন ভালো কিছু খেতে ইচ্ছে হতো টিমো বোল্ডট’র। রান্নার সময় থাকলেও দেখা যেত সঠিক রেসিপির অভাবে খাবার নষ্ট হয়ে যায়। অনলাইন খাবারের রেসিপি কখনো কখনো ঠিকমতো রান্না করাও যেত না। অফিসের কাজের সুবাদে ব্যস্ত থাকার কারণে সুপার মার্কেটে যাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠতো না ২৬ বছরের তরুণ টিমো বোল্ডট’র।

কর্মব্যস্ত নগরজীবনের মানুষের জন্য কিভাবে খাবারের সমস্যার সমাধান করবেন, কিভাবে রান্না-বান্নার বিষয়টিকে সহজ করে আনা যায়, এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকেন উদ্যোক্তা টিমো বোল্ডট।

এ বিষয়টি নিয়ে যখন উদ্যোক্তা টিমো বোল্ডট গবেষণা শুরু করলেন তখন তিনি দেখলেন, তার মত যাদের দৈনন্দিন সময়ের টানাটানিতে থাকে তাদের আসলে এমন একটা প্রতিষ্ঠান দরকার যেখানে রান্নার সকল উপাদান আগে-ভাগেই পরিমাপ করে কেটে-কুটে গুছিয়ে বক্সে ভরে রাখা হবে। সেই সঙ্গে দেয়া থাকবে সহজে রান্নার রেসিপি বা দিক-নির্দেশনাটাও। তারপর নির্দিষ্ট গন্তব্যে ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দিতে হবে।

উদ্যোক্তা টিমো বোল্ডট’র এই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল সেই সময়, বলা যায় আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগে যখন এই জাতীয় খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করার প্রতিষ্ঠান ছিল অল্প কিছু।

উদ্যোক্তা টিমো বোল্ডট চিন্তা করলেন ভবিষ্যতে এই ধরণের খাবারের চাহিদা আরো বহুগুণ বাড়বে। এই চিন্তাধারা থেকে একদিন উদ্যোক্তা তার চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে খুলে বসলেন তার প্রতিষ্ঠান ‘গৌস্তো’।

সেদিনের সেই ছোট্ট দোকান গৌস্তো যার আজ বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে তার ব্যবসার লগ্নিতেও রয়েছে প্রায় সমপরিমাণ অর্থ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাজ্যে এই ধরণের শিল্পগুলো বর্তমানে প্রায় ১শ’ কোটি পাউন্ডের অনেক বেশি ব্যবসা গড়ে তুলেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিকভাবে এই ব্যবসা প্রায় ৯শ’ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্যে পরিণত হবে বলেও মনে করা হচ্ছে। গৌস্তো সাফল্যর কারণে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীসংখ্যা যুক্তরাজ্যে ৫শ’ থেকে ১২শ’তে বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে।

উদ্যোক্তা টিমো বোল্ডট’র জন্ম ও বেড়ে ওঠা জার্মানির বার্লিন শহরে। পরবর্তীতে বসবাসের জন্য লন্ডনে চলে যান। উদ্যোক্তা তার নিজের সঞ্চয় থেকে ৭৫ হাজার পাউন্ড নিয়ে গৌস্তো শুরু করেন। পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন আরো প্রায় দেড় লাখ পাউন্ড অর্থ।

ব্যবসা শুরুর পর প্রথম তিন বছর উদ্যোক্তা নিজে কোন অর্থ পারিশ্রমিক নিতে পারেননি। প্রথম দিকে ব্যবসা সেভাবে জমে উঠেনি। তার উপর চাকরি ছেড়ে দেয়ায় মাস শেষে বেতনের টাকাটাও পাওয়া বন্ধ। তার পরও উদ্যোক্তা সেই সময় সারাদিন ধরে তিনি বিভিন্ন রেসিপি নিয়ে গবেষণা চালাতেন। এভাবে কাজ করতে করতে একটা সময় উদ্যোক্তা তাঁর বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের মধ্যে সাড়া ফেলতে সক্ষম হন।

এই গৌস্তো ব্যবসা করতে গিয়ে পারিবারিক জীবনেও খানিকটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে উদ্যোক্তা টিমো বোল্ডট’র। এই বিষয়টি টিমো বোল্ডট’র স্ত্রী খুব অপছন্দ করতো। যখন মধ্যরাতেও কেউ-কেউ ফোন করে নিজের পার্সেলের খবর জিজ্ঞেস করতো।

তরুণ ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ বা অন্টারপ্রেনারশিপ নিয়ে বিবিসির টিভি অনুষ্ঠান ‘ড্রাগন্স ডেন’ এ ২০১৩ সালে অংশ নিয়েছিলেন উদ্যোক্তা টিমো বোল্ডট। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে আসা পাঁচজন ব্যবসায়ীর কেউই তখন টিমোর প্রতিষ্ঠানে লগ্নি করতে রাজি হননি। সেই সময়ে উদ্যোক্তা প্রতি মাসে প্রায় ২৫ হাজার পাউন্ড করে লোকসান গুনছিলেন।

এ প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা বলেন, ব্যবসায় এখনো তার লোকসান হয়। কিন্তু আমাদের নজর ব্যবসা প্রসারের দিকেই বেশি। মুনাফার চেয়ে আমরা আরো বেশি বিনিয়োগ করতে চাই।

বর্তমানে গৌস্তো’র অফিস রয়েছে হ্যামারস্মিথ ও ওয়েস্ট লন্ডনে। আর নিজস্ব একটা কারখানা রয়েছে লিঙ্কনশায়ারে। বর্তমানে প্রতিমাসে গৌস্তো এখন গড়ে আড়াই লাখ প্যাকেট খাদ্য সরবরাহ করে।

ব্যবসার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা উল্লেখ করেন, ‘আমাদের মতো কোম্পানির সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে প্যাকেজিং বা খাবার প্যাকেটজাত করাই অন্যতম প্রধান ইস্যু। খাবার প্যাকেটজাত করার ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার কিভাবে আরো অন্তত ৫০ ভাগ কমিয়ে আনা যায় সেই চেষ্টা তারা করছেন। পাশাপাশি প্লাস্টিকের বিকল্পও খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তারা। এছাড়া খাবারের অপচয় রোধেও তারা ব্যাপকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য কম্পিউটারের এলগোরিদমের সাহায্য নিচ্ছেন তারা। আর খাবারের প্যাকেটের যে মূল্য পড়ে সেটিও একটা চিন্তার কারণ। প্যাকেটের দাম গত কয়েক বছরে ১০-১৫ শতাংশ কমেছে। কিন্তু তবু এখনো তা সস্তা নয়’।

গৌস্তো’র দুইজন মানুষের জন্য দুই পদের রেসিপি দিয়ে খাবারের প্যাকেট অর্ডার করলে বর্তমানে দাম পড়ে ২৪.৯৯ পাউন্ড। উদ্যোক্তা টিমো বলছিলেন, ‘২০১৭ সালে তারা বাজারে গ্রাহকদের জন্য খাবারের মূল্য কিছুটা কমাতে সক্ষম হন। কেননা তখন তার ব্যবসাটা অর্থনৈতিকভাবে বড় পরিসরে বেড়ে ওঠে। ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা এই খাবার আরো সহজলভ্য করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে চান।

উদ্যোক্তা তার গৌস্তোকে যুক্তরাজ্যের বাইরে ছড়িয়ে দেয়ার কোনো পরিকল্পনা এখনো করেননি। তবে ব্রেক্সিটের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব তার ব্যবসায় কী পড়তে পারে – তা নিয়ে বেশ চিন্তিত উদ্যোক্তা টিমো বোল্ডট। তার মতে, ব্রেক্সিটের ফলে মোটাদাগে ব্যবসায় একটা নেতিবাচক প্রভাব হয়তো পড়বে।

(তথ্যসূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here