উদ্যোক্তা- মনোয়ারা বেগম


কিছু একটা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল মনোয়ারার ছোট বেলা থেকেই। মা চাচিরা মিলে যা তৈরি করতো মনোয়ারা তা তৈরি করে দেখাতো যেমন সেলাই, রান্না ইত্যাদি। মনোয়ারা বেগমের এই পথচলার গল্প অনেক দিনের সংগ্রামের।

উদ্যোক্তা মনোয়ারা বলেন- “আমি ২০০১ সালের দিকে আমার উদ্যোগ “রাহী বুটিক” কে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়া শুরু করি। তার আগে একটা মাত্র সেলাই মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করি। যুব উন্নয়ন, তাঁত বোর্ডের ট্রেনিং নিয়ে বাসায় অর্ডার নিতে থাকি। অন্য তাঁতের কারখানা থেকে কাপড় কিনে পোশাকে ডিজাইন করে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করি। অনেক সময় দেখা যায় দোকানদার ঠিক সময়ে টাকা পরিশোধ করে না। ঐ অবস্থায় আমার ভালোই অর্ডার আসে আমি অনেকটা সাফল্যের মুখ দেখতে পাই।”

কিন্তু নিয়তির পরিহাস এক রাতে মনোয়ারার কারখানায় আগুন লেগে সব স্বপ্ন ছাই হয়ে যায়। মাথায় চাপে ঋনের বোঝা। মনোয়ারা খুব অসুবিধায় পড়ে যায়।

মনোয়ারা কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে অন্য কারখানায় চাকরি করার চেষ্টা করে, পরে একসময় আরেক জায়গায় একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়। ওখানকার কর্মীরা ঝগড়াঝাটি শুরু করে মনোয়ারার নিয়োগ নিয়ে। সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বলে মনোয়ারা যোগদান করলে নাকি ওদের ভ্যালু থাকবে না। এসব কথা মনোয়ারার কানে আসার পর আর চাকরি করেননি। মজার ব্যাপার হলো ওদের কয়েকজন পরবর্তীতে মনোয়ারার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছে পরবর্তী সময়ে।

সময়ের পথ পরিক্রমায় মনোয়ারা আবার তাঁর নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে, নিজের করা ডিজাইন অভিজ্ঞতা কে সম্বল করে নতুন করে সব শুরু করেন। একটি কথা না বললেই না মনোয়ারার দেশি পণ্যের উপর দুর্বলতা থাকায়, তাঁতশিল্প নিয়ে কাজ শুরু করেন। রাঙ্গামাটি পাহাড়ের নারীরাও তাঁতের কাজ করে, এটা এখানকার ঐতিহ্য। আমি ওদের কয়েক জনকে আমার সাথে সম্পৃক্ত করি।

ব্যবসার সীমাবদ্ধতার কথা জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বলেন -“এক সময় তাঁতিরা মজুরি বাড়ানোর কথা বলে তবে এটি করার ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় খুব বেশি হয়ে যাবে। পণ্যগুলি বাজারে খুব ব্যয়বহুল এবং আলগা হয়ে উঠবে। অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলি হলো: তাদের শহর থেকে সমস্ত কিছু আনতে হবে, সেখানে কাঁচামাল পাওয়া যায় না যা ঝামেলাজনক। তাঁতের উৎপাদনশীলতা কম এবং ডিজাইনের বৈচিত্র্য করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। যেখানে কারখানায় নিত্য নতুন প্রযুক্তি চলে আসছে সব ক্ষেত্রে। তবে এসবের মাঝেও সব রকম সীমাবদ্ধতাকে পার করে, অনেক পরিশ্রম করে আমি আজকের এই অবস্থানে এসেছি। আমার কাজের স্বীকৃতি আমি পেয়েছি। আজ আমার মাধ্যমে পনেরো থেকে পঁচিশ জন নিজেদের কর্মসংস্থান করতে পেরেছে, এখানে আমার আত্মতৃপ্তি আছে।”

উদ্যোক্তা চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স থেকে ২০১১সালে ‘সফল নারী উদ্যোক্তা’ সম্মাননা লাভ করেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের ‘সেরা নারী উদ্যোক্তা’ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালে অর্থনৈতিক ভাবে সমাজে অবদান রাখার জন্য সরকারি সম্মাননা ”জয়িতা” পুরস্কার অর্জন করেন।

বাজারে রাহী বুটিক এর গ্রাহক সন্তুষ্টির কথা জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বলেন -” আমার প্রোডাক্ট মানসম্মত হওয়াতে বিক্রি ভালোই হয়। করোনার কারণে বেচা বিক্রি বন্ধ থাকলেও, পরিস্থিতি ভালো হবার সাথে সাথে আমার শো-রুমে, বিভিন্ন জেলায় পাইকারি বিক্রি ও বিসিক মেলা,পার্বত্য মেলা, আমাদের চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্সের উইমেন্স মেলায়, আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলায় অংশ নিয়ে সারা বছর আমার প্রোডাক্ট বিক্রি করি। প্রথমে আমি একা তারপর তিন জন কর্মী নিয়ে কাজ করি। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে পনেরো থেকে পঁচিশ জন মানুষ কাজ করে।”

উদ্যোক্তা ভবিষ্যতে তাঁর প্রতিষ্ঠানে একশো লোকের কর্মসংস্থান করতে চান, আর দেশিও ঐতিহ্যকে সবার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে, সম্পূর্ণ সফল একটা দেশি পণ্যের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছা পোষণ করেন।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here