উদ্যোক্তা- উম্মেল ওয়ারা মাহেনুর সুমি

এক চার দেওয়ালে বন্ধ থাকা গৃহবধূর গল্প হতে পারত এটা। যে দারুণ রান্না করে তাক লাগিয়ে দেয় সবাইকে। কিন্তু ইচ্ছা আর পরিশ্রম গল্পটাকে বদলে দিল। উম্মেল ওয়ারা মাহে নুর (সুমি) হয়ে উঠলেন নারী উদ্যোক্তা, চট্রগ্রামের এক প্রিয় নাম। বাংলাদেশে হারিয়ে যাওয়া পিঠাপুলি, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী রান্না তুলে আনলেন তাঁর “ঐতিহ্যের স্বাদ” এর মাধ্যমে।

দেশ সেরা আগোরার চট্রগ্রাম শাখায় পাওয়া যাচ্ছে ঐতিহ্যের স্বাদ এর খাবার। পাশাপাশি স্বপ্নের ৪টি শাখায় ও পাওয়া যাচ্ছে ঐতিহ্যের স্বাদ এর খাবার। একটা সময়ে চা বানাতে না পারা মেয়েটি, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে হারিয়ে যাওয়ার খাবারগুলো রাঁধতে শিখে আজ দেশের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার জন্য নীরবে কীভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছে সেই গল্পই উঠে এলো উদ্যোক্তা উম্মেল ওয়ারা মাহে নুর (সুমি) সঙ্গে উদ্যোক্তা বার্তার আড্ডায়।

উদ্যোক্তা মাহে নুর সুমির বিয়ে হয়েছে খুব কম বয়সে। বিয়ের পর উদ্যোক্তা এসএসসি কমপ্লিট করেন। সংসার জীবনে পরবর্তীতে উদ্যোক্তা গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেন। নিজেকে গড়ে তুলার জন্য রান্নার বিভিন্ন ট্রেনিং নেন সিদ্দিকা কবিরের কাছে, চিটাগাং ক্লাবে। উদ্যোক্তা সবসময় চেষ্টা করেন রান্নার মাধ্যমে দেশীয় ঐতিহ্য কে সবার মাঝে তুলে ধরার জন্য। দেশের অনেক ঐতিহ্যবাহী খাবার হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী খাবার মানুষের সামনে তুলে ধরতে, প্রচার প্রসারের কাজে মানুষকে সুযোগ দিতে এবং নিজে স্বাবলম্বী হবার আগ্রহই আজকে “ঐতিহ্যের স্বাদ” সৃষ্টির পিছনে কাজ করেছে বলে উদ্যোক্তা জানান।

এই কাজে প্রথমে উদ্যোক্তার পরিবারে সুমির মা শতভাগ সহায়তা করেছে সেই সাথে সহায়তা করেছে ভাই ও মেয়ে। মা ও মেয়ের অনুপ্রেরণা, নিজের শখের তাগিদে চারপাশের সবকিছুর বাঁধা পেরিয়ে আজকে উদ্যোক্তা এই অবস্থানে আসতে পেরেছেন ।

উদ্যোক্তা চিটাগাংয়ে বেসরকারি মোজো পিঠা উৎসবে অংশ নিয়ে প্রথম হয়েছিলেন। বাংলা ১৪১৪ সালে রাঁধুনি রান্না প্রতিযোগিতাতে চিটাগাংয়ে উদ্যোক্তা সেরা দশ এর মধ্যে ছিলেন। মূল আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে হলেঢাকা যেতে হবে বলে উদ্যোক্তার বাবা ঢাকা যেতে দিতে রাজি হননি। তাছাড়া এনটিভির রান্না বিষয়ক প্রোগ্রামে, স্টারশিপ আগ্রাবাদেও উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন। রিতা মুজিব, সিদ্দিকা কবিরের কাছ থেকে সম্মানজনক সার্টিফিকেট পান, এভাবেই উদ্যোক্তা তাঁর ব্যবসার কার্যক্রম শুরু করেন।

উদ্যোক্তা মূলত পরিবার ও পরিবারের বাইরে বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে রান্না শিখেছেন। সেই সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল যশোর, লাকসাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া,ঘুরে ঘুরে বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের কাছ থেকে রান্নাটা আয়ত্ব করে নেন উদ্যোক্তা। এভাবেই ঐতিহ্যবাহী খাবার বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন চিটাগাংয়ের মেয়ে উদ্যোক্তা মেহেরুন সুমি ।

“ঐতিহ্যের স্বাদ” এর রান্না অনেক মানুষই পছন্দ করে। অল্প দিনেই ঐতিহ্যের স্বাদ চিটাগাংয়ের মানুষের মন কেড়ে নিয়েছে। ১০০% আন্তরিক নিয়ে কাজ করা হয়। ঐতিহ্য কে একটি ভালো জায়গায় তুলে ধরতে উদ্যোক্তা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। “ঐতিহ্যের স্বাদ” এর স্লোগান হচ্ছে- “মমতার পরশে বিশুদ্ধতা নিশ্চয়তা”।

“ঐতিহ্যের স্বাদ” নিয়ে উদ্যোক্তা অনেক স্বপ্ন দেখেন। ঐতিহ্য স্বাদকে উদ্যোক্তা তাঁর সন্তানের মত লালন-পালন করেন। ইচ্ছা পোষণ করেন একদিন পুরো বাংলাদেশ জুড়ে এর আউটলেট থাকব।

এই প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা জানান- “নতুনের আগমনকে আমি বাঁধা দিতে চাই না। কিন্তু বাচ্চাদের ফাস্টফুডের প্রেমের কাছে পুরান ঐতিহ্য, পিঠা-পুলি হারিয়ে যাক সেটাও আমি চাই না। তাই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে আমার ঐতিহ্যের স্বাদ নিয়ে এই নীরব সংগ্রাম চলবেই।”

সাফল্যের পূর্বশর্ত, ৯৯ ভাগ পরিশ্রম, পরিশ্রম করলে এবং সদিচ্ছা থাকলে যে যেখানেই থাকুক উঠে আসবে। এর কোন বিকল্প নেই। সততার সাথে পরিশ্রম আর বুকের মাঝে দৃঢ় সদিচ্ছা, একটা মানুষকে যে কোনো অবস্থান থেকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারে তাঁর উৎকৃষ্ট উদাহরণ উদ্যোক্তা উম্মেল ওয়ারা মাহে নুর (সুমি)।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here